X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১
অনলাইন শপিং

কেনাকাটার একাল-সেকাল

আসাদ আবেদীন জয়
২৮ মার্চ ২০২৪, ২০:৩৮আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৪, ২১:৪৫

একটা সময় ছিল যখন মানুষ সপ্তাহের নির্দিষ্ট একটি দিনে হাটে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করতেন। নির্দিষ্ট ওই দিনের জন্য কেনাকাটা জমিয়ে রেখে চলতো অপেক্ষার পালা। তারপর সময়ের ব্যবধানে শুরু হয় নিত্যদিনের বাজার। মানুষ বাজারে গিয়ে দোকানে দোকানে ঘুরে কিনতেন পছন্দের জিনিসপত্র, যা এখনও চলমান। আর বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষে ও ইন্টারনেটের উত্থানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অনলাইন বাজার। এখন কোনও দোকান বা শপিং মলে না গিয়েও করা যায় কেনাকাটা। কারণ এখন মানুষের হাতের মুঠোয় রয়েছে হাট-বাজার-শপিং সেন্টার। প্রয়োজন অনুযায়ী অর্ডার করলেই পণ্য চলে আসছে ঘরের দুয়ারে।

মানুষের ব্যস্ততা আর ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে অনলাইনে কেনাকাটা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সময় বাঁচাতেই মানুষ ঝুঁকছেন অনলাইন বাজারে। তাই যেকোনও অনুষ্ঠান বা দিবসে কিংবা নিত্যদিনের কেনাকাটা অনলাইন বাজার থেকেই করছেন। এই ঈদেও এর ব্যতিক্রম নয়। ব্যস্ত সময়ের ফাঁকে অনেকে অনলাইনে সেরে নিচ্ছেন ঈদের কেনাকাটা। অনেকে কিনছেন শপিং মল ঘুরে দেখে-শুনে। তবে সম্ভাবনাময় অনলাইন বাজার নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে পণ্যের মান ও বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্ন।

বুধবার (২৭ মার্চ) অনলাইনে কেনাকাটা করেন এবং অনলাইনে কেনাকাটা করেন না এমন ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় কেনাকাটার একাল-সেকাল।

সাধারণ মানুষের জীবনযাপন আরও সহজ করতেই মূলত অনলাইন বাজারের সৃষ্টি। এই বাজারে মাছ-মাংস থেকে শুরু করে জামা, জুতা, গহনা, রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশনসহ সব পণ্যই পাওয়া যায়। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অর্ডার করতেই পণ্য পৌঁছে যায় ঘরের দরজায়। এ কারণেই এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।

ঈদ উপলক্ষে পছন্দের জুতার খোঁজে ক্রেতারা

অনলাইনে কেনাকাটা করেন বেসরকারি চাকরিজীবী মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, অনলাইনে কেনাকাটা করি মূলত সময় বাঁচাতে। ব্যস্ততার কারণে সময় পাই না শপিং মলে গিয়ে কেনাকাটা করার। অনলাইনে অল্প সময়ের মধ্যেই কেনাকাটা করে ফেলি। এবার ঈদ শপিংয়ের একটা অংশও করেছি অনলাইন থেকে, বেশ কয়েকটা শাড়ি কিনেছি।

অনলাইনে কেনাকাটা করলেও মাহফুজ এটাও বলেন, সময় থাকলে সরাসরি মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটা করাই ভালো। কারণ আমাদের দেশে হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান এখনও গড়ে ওঠেনি। তাই দেখে-শুনে কিনতে পারলে বেস্ট হয়।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন সিনথিয়া রহমান। বলেন, আমি আমার বাসার প্রায় ৮০ ভাগ কেনাকাটা করি অনলাইনে। অফিসের পর বাসার অন্যান্য কাজ করে হাতে সময় থাকে না। তাই অনলাইনই ভরসা। বাসার চামচ থেকে বিছানার চাদর প্রায় সবই অনলাইনে কিনি। শুধু যেগুলোতে মাপজোকের ব্যাপার আছে সেগুলো সরাসরি দোকানে গিয়ে কিনি। এবার ঈদের বেশ কিছু শপিং করেছি অনলাইনে। ৩টা শাড়ি অর্ডার করেছি, সেগুলো চলে আসার কথা আজকালের মধ্যেই।

অনলাইন মার্কেট যে কেবল সময় বাঁচায় তা নয়, সময়ের সঙ্গে দূরত্বও কমিয়ে আনে বলে জানান মুন্সিগঞ্জের রিমানা আফরোজ রূপা। তার কথায়, সাধারণত আমার কেনাকাটা ঢাকা থেকেই করা হয়। তাই আমাকে ঢাকায় যেতে হতো। এখন অনলাইনেই পেয়ে যাচ্ছি, ঢাকায় যেতে হচ্ছে না। ঘরে বসেই কিনতে পারছি। এখানে দূরত্ব কোনও প্রভাব ফেলছে না। তবে যখন বেশি কেনাকাটা করতে হয়, ঢাকায় গিয়েই কিনি।

পণ্যের মান নিয়ে অভিযোগ তুলে রূপা বলেন, আমি কসমেটিকস, ড্রেসসহ বাসার অনেক কিছুই কিনি। কসমেটিকসটা অথেনটিক পাই। কিন্তু শাড়ি বা ড্রেস কিনলে বেশিরভাগ সময় যা দেখায় সেটা হয় না। কালার আলাদা হয়, কাপড়ও আলাদা হয়। কাপড় কেনার বিশ্বাসযোগ্য পেজ খুব কম আছে। তাই ঠকতে হয় বেশি।

দেশালে চলছে ঈদের জামা বিক্রির হিড়িক

অনলাইনে দীর্ঘদিন ধরেই কেনাকাটা করে আসছেন বেসরকারি চাকরিজীবী হাসনাত। তিনি বলেন, অনলাইনে কেনাকাটা করতে হবে খুব বেছে, বিশ্বাসযোগ্য পেজগুলো থেকে। তা না হলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। আমি হেডফোন, হাতঘড়ি এই ধরনের প্রোডাক্টই বেশি কিনি। পোশাক জাতীয় জিনিস কেনা হয় না। আমার মনে হয় এই জাতীয় জিনিস সরাসরি শপে গিয়ে কেনাই ভালো। আর অনলাইনে কিনলে ব্র্যান্ডেড যেসব পোশাকের শোরুম আছে, তাদের পেজ থেকে কেনা উচিত। এতে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

দেশের বাজারে অনলাইনে ব্যবসা করছেন অগণিত মানুষ বা প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে কেউ ক্রেতাদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে এগিয়ে চলছে, আবার কেউ মুখ থুবড়ে পড়েছে। কিন্তু তবু চলছে অনলাইন ব্যবসা। যারা ক্রেতাদের বিশ্বাস অর্জন করেছে তাদের ব্যবসা চলছে জমজমাট। যারা নতুন শুরু করেছেন তারাও ভালো কিছুর প্রত্যাশায় কাজ করে চলেছেন।

দেশীয় পোশাকের ব্র্যান্ড দেশালের বসুন্ধরা সিটি আউটলেটের ম্যানেজার মো. ইব্রাহিম সজিব বলেন, আমাদের শোরুমগুলোতে যে প্রোডাক্ট আছে, ওয়েবসাইটেও সেগুলো আছে। আমাদের অনলাইনে সবসময়ই সেল হয়। কেবল ঈদের সময় হয় তা না। তবে শোরুমে ঈদের সময় যে বিক্রি হয় নরমাল সময়ে তা হয় না। শোরুমে যে পরিমাণ ক্রেতা আসে তার থেকে বেশি বিক্রি হয় অনলাইনে। ভিড় এড়াতেই মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা করেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কোনও প্রোডাক্ট অনলাইনে কিনে আপনার যদি পছন্দ না হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ডেলিভারিম্যানের কাছে ফেরত দিয়ে অন্য প্রোডাক্ট নিতে পারবেন। এছাড়া যদি আপনি রিসিভ করার পরে দেখেন পছন্দ হচ্ছে না, তাহলেও এক মাসের মধ্যে আমাদের সারা দেশের যেকোনও আউটলেটে গিয়ে চেঞ্জ করে নিতে পারবেন। তবে টাকা ফেরত দেওয়া হয় না। এই ফ্লেক্সিবিলিটির কারণেই অনলাইনে আমাদের বেচাকেনা বিক্রি বেশি হয়।

মো. রাফি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ফুলটাইম চাকরি করতেন। পরে আরেক বন্ধুকে নিয়ে অনলাইনে শুরু করেন নিজেদের ব্যবসা। ‘সলো ভাইব’ নামের পেজ তৈরি করে অনলাইনে জুতা বিক্রি শুরু করেছেন তারা। রাফি বলেন, আমাদের এখনও কোনও শপ নেই। থাকার বাসাটাকেই স্টোর হিসেবে ব্যবহার করছি। তারপরও ভালোভাবেই অনলাইনে ব্যবসা করছি। গত কোরবানির ঈদে আমরা শুরু করেছিলাম। ভালো সাড়াও পাচ্ছি। আশা করি আরও বড় হবে বিজনেস।

ঈদের শপিং করতে মার্টেকে ঢুকছেন ক্রোতারা

এদিকে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যমতে গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এই বছরে অনলাইনে কেনাকাটা বেড়েছে। তাদের তথ্যমতে, গত বছরের তুলনায় এই বছর মার্চেন্ট ট্রানজেকশন বেড়েছে গড়ে ৩৫ শতাংশ।

এমন অনেকেই আছেন যারা অনলাইনে কেনাকাটা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। অনলাইনে কেনাকাটা না করে সরাসরি দোকানে গিয়ে কেনাকাটা করার পক্ষে তাদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মত। 

সরাসরি দোকানে গিয়ে কেনার যুক্তি দেখিয়ে শপিং মলে কেনাকাটা করতে আসা সারোয়ার হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, অনলাইন বাজার বাংলাদেশে এখনও সেভাবে গড়ে ওঠেনি। বিদেশে যেরকম বিশ্বাসযোগ্য অনলাইন শপ আছে আমাদের দেশে তেমন নেই। দেখায় একটা, দেয় আরেকটা। তাই সরাসরি মার্কেটে গিয়ে দেখে-শুনে কেনাই ভালো।

গোলাম রব্বানী নামের আরেক ক্রেতা বলেন, আমাদের ব্যবসায়ীদের যে অবস্থা, সরাসরি কিনলেই ঠিক জিনিস পাওয়া যায় না অনেক সময়; না দেখে কিনলে কী হতে পারে তা বোঝাই যায়। এর চেয়ে ভিড় ঠেলে সরাসরি কেনাই ভালো। আর ছোটবেলায় আমিও বাবা-মায়ের সঙ্গে গিয়ে কেনাকাটা করেছি। এটার মধ্যে একটা আনন্দও আছে।

পরিবার নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, সব কিছু যদি অনলাইন হয়ে যায় তাহলে জীবন বলে কী কিছু থাকলো? আমাদের জীবনটা কী অনলাইনময় হয়ে যাচ্ছে না? আমরা সবাই ব্যস্ত; কিন্তু এর মধ্যেও সময় বের করা উচিত পরিবারের জন্য। বছরে দুইটা ঈদ আসে, তখনও যদি অনলাইনেই কেনাকাটা করি তাহলে আনন্দ বলে কিছু থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, ঈদের আগে মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে কেনাকাটার মধ্যে একটা ভালো লাগা আছে। অনলাইনে ঘরের মধ্যে বসে কিনলে সেটা বাচ্চারা কীভাবে বুঝবে। ওরাও তখন শুধু ঘরের মধ্যেই মোবাইল কম্পিউটার নিয়ে পড়ে থাকবে। এর বাইরের জীবনটাও জানার দরকার। প্রযুক্তি থাকলেই যে আমার ওটার ওপর ভর করে চলতে হবে তা না। আমার প্রযুক্তির বিষয়ে জ্ঞান থাকবে; কিন্তু সবসময় এর ব্যবহার করা উচিত না।

ছবি: প্রতিবেদক

/আরআইজে/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ফিতরা-জাকাতের নামেও প্রতারণা
গরমের কারণে অনলাইন ক্লাসে যাচ্ছে ঢাবি
ঈদের ছুটি শেষে ভারত থেকে ফিরছেন যাত্রীরা, ইমিগ্রেশনে ভোগান্তি
সর্বশেষ খবর
দিনাজপুরে একসঙ্গে ২০ হাজার কণ্ঠে গীতা পাঠ
দিনাজপুরে একসঙ্গে ২০ হাজার কণ্ঠে গীতা পাঠ
উপজেলা নির্বাচন আগের যে কোনও নির্বাচনের চেয়ে ভালো হবে: ইসি হাবিব
উপজেলা নির্বাচন আগের যে কোনও নির্বাচনের চেয়ে ভালো হবে: ইসি হাবিব
জেসি অনভিজ্ঞ বলেই আপত্তি ছিল মোহামেডান-প্রাইম ব্যাংকের
জেসি অনভিজ্ঞ বলেই আপত্তি ছিল মোহামেডান-প্রাইম ব্যাংকের
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
সর্বাধিক পঠিত
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই