X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাইভেটের শক্তি-মধ্যবিত্তের আকাঙ্ক্ষা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে: মেঘনা ব্যাংক এমডি

শফিকুল ইসলাম
২৫ জুলাই ২০১৬, ১৬:২১আপডেট : ২৫ জুলাই ২০১৬, ১৬:২৪



মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল আমিন সম্প্রতি গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলাকে ‘রাহুর গ্রাস’ বলে অভিহিত করেছেন বেসরকারি মালিকানাধীন মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল আমিন।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, এ ঘটনা আমাদের স্থায়ীভাবে থামিয়ে রাখতে পারবে না। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো চলবে। রফতানিতে বড় বিপর্যয় আসবে তা আমরা এখনও মনে করি না। এটি সাময়িক সমস্যা। তা কাটিয়ে ওঠা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

গত ১৭ জুলাই রবিবার রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত মেঘনা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে নিজের দফতরে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।

এ সময় মেঘনা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ পরিস্থিতি ও সম্ভাবনাসহ অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলাপ করেন। কথা বলেছেন ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে ব্যাংক সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা না আনার বিষয়েও।

সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা দেশের অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে জানতে চাইলে মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, বিষয়টি মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। তবে আমি মনে করি, এটা সাময়িক।

তিনি বলেন, এ ঘটনা আমাদের স্থায়ীভাবে থামিয়ে রাখতে পারবে না। সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলো চলবে। রফতানিতে বড় বিপর্যয় আসবে, তা আমি এখনও মনে করি না। কারণ, আমরা যে কাপড়-চোপড় বানাই, তাতেও পড়বে না। বাইরের লোকজন যারা আমাদের কাছ থেকে কাপড় কেনেন, তারা রাতারাতি আমাদের বানানো কাপড় কেনা বন্ধ করে দিয়ে অন্য জায়গায় মার্কেট ডেভেলপমেন্ট করবেন, তারপর আমাদের কাছ থেকে পণ্য কেনা বন্ধ করে দেবেন, এমন সম্ভাবনাও আমি দেখি না।

মেঘনা ব্যাংকের এমডি বলেন, নিজের সারভাইভের (খাপ খাইয়ে নেওয়া) জন্য প্রাইভেটের যে শক্তি আর মধ্যবিত্তের যে আকাঙ্ক্ষা, তা আমাদেরকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কেউ বসে থাকবে না।

তিনি বলেন,২০১২/১৩ সালের হরতালের মধ্যেও রফতানিতে আমাদের প্রবৃদ্ধি ছিল। আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেভাবে ম্যানেজ (ব্যবস্থা) করা শিখেছি, সেভাবেই আমরা জঙ্গিবাদও ম্যানেজ করা শিখে যাবো।

বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রসঙ্গে নুরুল আমিন বলেন,আমি ব্যাংকিং প্র্যাক্টিশনার হিসেবে মনে করি, আমরা স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) গণ্ডি থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছি। আমাদের হয়ত মিড ইনকামের কান্ট্রিতে (মধ্যম আয়ের দেশ) যেতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। সেখানে যাওয়ার সিঁড়িতে আমরা পা দিয়েছি মাত্র। আমাদের উন্নতি করার আগ্রহ আছে।
দেশের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের দেশের অর্থনীতির ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে পাইভেট সেক্টর। অর্থনীতিতে সরকারি অংশগ্রহণ ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। আমি নিজেও প্রাইভেট সেক্টরের শক্তিতে বিশ্বাস করি। ১৯৮০ সালে প্রাইভেট ব্যাংক আসার পর থেকে এই ব্যাংকগুলো ব্যবসা-বাণিজ্যে যে উন্নয়ন ও অবদান রাখছে, তা যুগান্তকারী একটি পদক্ষেপ ছিল।

দেশের রেমিট্যান্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন,আমাদের রফতানিতেও উন্নতি হচ্ছে। এ খাতে প্রবৃদ্ধি ৯/১০ শতাংশ বেড়েছে। আমাদের রেমিট্যান্স ১৫ বিলিয়নে পৌঁছায়নি। গ্রামেগঞ্জের মানুষ এখন কিছু না কিছু করে খেতে চান। বসে খাওয়া বা অন্যের ওপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা বাড়ছে। রেমিট্যান্সের কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। মানুষের যখন পারচেজিং (ক্রয়) ক্ষমতা বেড়ে যায় তখন অর্থনীতিতে ডিম্যান্ড ক্রিয়েট (চাহিদা তৈরি) হয়। ডিম্যান্ড ক্রিয়েট হলে ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে (উৎপাদনে) অবদান চলে আসে। তখনই পণ্য ও সার্ভিস সেক্টরের ডিম্যান্ড বাড়ে এবং মানুষ তা ভোগ করেন বা কনজিউম করেন। এভাবেই আমরা জিডিপিতে অবদান রাখছি।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আমাদের হচ্ছে। গ্রোথ ই্জ অল অ্যাবাউট ইকোনমি অ্যান্ড ডিজিট। কিন্তু ডেভেলপমেন্টের ডেফিনেশনটা অন্যরকম। গ্রোথ এবং ডেভেলপমেন্টটকে আমি একভাবে দেখি না। ডেভেলপমেন্টটা হচ্ছে, টোটাল দেশের ডেভেলপমেন্ট। গ্রোথ ইউথ টাচ ইজ অলমোস্ট এভরি সিটিজেন,মেজরিটি সিটিজেন অব দ্য কান্ট্রি। আমাদের এই গ্রোথটা সুশাসন অথবা অন্য গভর্নেন্স ইস্যুতে গিয়ে সবাইকে টাচ করছে নাকি আয় বৈষম্য বাড়াচ্ছে সেটি বিবেচ্য বিষয়।

বিনিয়োগ প্রসঙ্গে মেঘনা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী বলেন,আমাদের যারা বড় বিনিয়োগের চিন্তা করেন, তাদের কাছে জমির সংকট একটি উল্লেখযোগ্য প্রসঙ্গ। আমাদের প্রচুর জমি পড়ে নেই যেখানে গিয়ে মন খুলে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এটা বিদ্যমান সমস্যাগুলোর মধ্যে একটা। বিদ্যুৎ,গ্যাস জ্বালানি তো আছেই। আমরা যখন বড় কোনও বিনিয়োগকারীকে বিনিয়োগের জন্য ইনভাইট (আমন্ত্রণ) করি, তখন অনেক সময় আমরা তাদের প্রয়োজনীয় জায়গা বা জমি দিতে পারি না। হয়ত একসময় আসবে যখন আমাদের দেশে ১০০টি ইকোনমিক জোন পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে।

তিনি বলেন, বিনিয়োগের জন্য দেশি-বিদেশি যে ১০টি কোম্পানিকে বিশেষ জোন দেওয়া হচ্ছে, এই কনসেপ্টকে আমি সাপোর্ট করি। এতে কনসেন্ট্রেশন হবে। বিকেন্দ্রীকরণ হবে। সবাই শহরের কাছাকাছি ভিড় করবেন না। কিন্তু বিনিয়োগকারীকে কোনও ধরনের হয়রানি না করে বা তার কাজে হস্তক্ষেপ না করে বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় সার্ভিসটুকু দেওয়া হচ্ছে কি না বা বিনিয়োগকারী সেটা পাচ্ছেন কি না সেটাই হচ্ছে লিমিটেশন। বিনিয়োগকে আকর্ষণ করতে সরকারের পক্ষ থেকে গ্যাস বিদ্যুৎ, পানি ব্যবস্থাপনা, সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন এবং পরিবহন সুবিধা দিতে হবে।


ব্যাংক সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় গ্রুপ, কর্পোরেট গ্রুপ, যাদের বায়িং ক্যাপাসিটি বেশি, যারা বেশি টাকা লেনদেন করেন, তাদের জন্য কিন্তু ব্যাংক ইন্টারেস্ট রেট ১০-১২’তে চলে এসেছে। আমরাও মনে করি, লেন্ডিং রেট ৯-১০-১১-১২-এর মধ্যেই থাকা উচিত। কিন্তু, এটা করতে গিয়ে আমরা আমানতকারীদের ইন্টারেস্ট রেট কমিয়ে দিচ্ছি। আমার স্প্রেড এত বেশি নয় যে,আমানতকারীদের আগের মতো বেশি রেট দিয়ে ঋণগ্রহীতাদের কম সুদে ঋণ দিয়ে ব্যবসা করতে পারবো।


/এসআই /এবি/

 

সম্পর্কিত
আলাপচারিতায় ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও মানস ঘোষমুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবাদ সংগ্রহ
করারোপ নীতি শিক্ষা সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করবে: সলিমুল্লাহ খান
বাংলা ট্রিবিউনকে ওয়াসিকা আয়শা খান‘নারীরা যে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়ে চলেছেন, এর নেপথ্যে শেখ হাসিনা’
সর্বশেষ খবর
পিএসজিকে হারিয়ে ফাইনালে ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগপিএসজিকে হারিয়ে ফাইনালে ডর্টমুন্ড
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
ঢাকা আসছেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু
ঢাকা আসছেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
সর্বাধিক পঠিত
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট