X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইসলামী ব্যাংকের পদ হারালেন ২ প্রভাবশালী পরিচালক

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৪ মে ২০১৭, ০৫:১৭আপডেট : ২৪ মে ২০১৭, ০৬:০৪

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং ভাইস-চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্বে জেরে পদ হারিয়েছেন ভাইস-চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ। একইসঙ্গে ব্যাংকের রিস্ক ম্যানেজমেন্ট  কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ, পিপিএমকেও তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শামীম মোহাম্মদ আফজালকে এ কমিটির নতুন চেয়ারম্যান করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ মে) ব্যাংকের বোর্ড সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ দু’জনই এখন ইসলামী ব্যাংকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে থাকবেন।

এদিকে ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররা এই দুই পরিচালককে পরিচালনা পর্ষদ থেকে অপসারণের জোর দাবি তুলে বক্তব্য দিয়েছেন। তাদেরকে বোর্ড থেকে সরাতে ১৫ দিনের আল্টিমেটামও দিয়েছেন শেয়ারহোল্ডাররা। এদিকে, ভাড়া করা লোক দিয়ে এজিএমের নামে নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পদ হারানো ভাইস চেয়ারম্যান।

সভায় সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে ১২ জনকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। যারা বক্তব্য দেন, তাদের মধ্যে আবু সুফিয়ান টিটু নামে একজন নিজেকে মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন। শেয়ারহোল্ডারা বক্তব্যে বলেন, চেয়ারম্যান ও এমডির সঠিকভাবে ইসলামী ব্যাংক পরিচালনা করছেন। কিন্তু ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসানুল আলম ও পরিচালক আব্দুল মাবুদ পিপিএম ব্যাংকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।

ঢাকা সেনানিবাসের কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের অল্প কয়েকজনই উপস্থিত থাকার সুযোগ পান। অডিটোরিয়ামের অর্ধেক আসনই খালি ছিল। বার্ষিক সাধারণ সভায় সভাপতিত্বে করেন ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরাস্তু খান। এসময় ১৯ জন পরিচালকের মধ্যে ১৮ জন উপস্থিত ছিলেন। স্বতন্ত্র পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম উপস্থিত ছিলেন না।

ইসলামী ব্যাংক থেকে ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছে বলে যেসব কথা হচ্ছিল সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন আইডিবি মনোনীত পরিচালক আরিফ সুলেমান। এজিএম শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আইডিবির হাতে থাকা সাড়ে ৭ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ২ দশমিক ১ শতাংশ রেখে বাকিটা বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ইসলামী ব্যাংকের পরিবর্তিত পরিস্থিতি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

আরিফ সুলেমান বলেন, ‘আইডিবি একটি উন্নয়নমূলক ব্যাংক। এ ব্যাংকের কাজ কোথাও ব্যাংক ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে শেয়ার বিক্রি করে অন্য কোনও দেশে আবার ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত করা। ইসলামী ব্যাংক এদেশে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আইডিবির কর্মপদ্ধতি অনুযায়ী এখানকার শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া হবে।’

এজিএম শেষে একই জায়গায় পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভা শেষে চেয়ারম্যান আরাস্তু খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের ইসলামী ব্যাংকে দু’জন ভাইস চেয়ারম্যান আছেন। কিন্তু এখন থেকে থাকবেন একজন। তিনি আল রাজি গ্রুপের প্রতিনিধি ইউসুফ আবদুল্লাহ আল-রাজি। অধ্যাপক আহসানুল আলম পারভেজ আর ভাইস চেয়ারম্যান থাকবেন না, স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে থাকবেন তিনি। একইসঙ্গে রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন এসেছে। শামীম মোহাম্মদ আফজালকে এ কমিটির নতুন চেয়ারম্যান করা হয়েছে। ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন থেকে ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম কিছুটা ফারাক রাখার চেষ্টা করা হবে।’

ভাইস-চেয়ারম্যানের দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি বিষয়ে আরাস্তু খান বলেন, হুমকি দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পরিচালকদের কাছ থেকে সই নিয়ে তা ভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। সৈয়দ আহসানুল আলম যেসব বিষয় বলেছেন, বোর্ডে তার অনেক কিছুই সিদ্ধান্ত হয়নি। ব্যাংকের ভাইস-চেয়ারম্যান এজিএম ও বোর্ড সভায় কেন উপস্থিত হলেন না— জানতে চাইলে আরাস্তু খান বলেন, ‘তাকে ইনভাইটেশন কার্ড দেওয়া হয়েছে। ইনভাইটেশন পাঠানোর জন্য তাকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তখন তাকে টেক্সট দেওয়া হয়েছে। তবে না আসার কারণ সম্পর্কে তিনি কিছুই জানাননি।’

এদিকে এজিএম পরবর্তী প্রতিক্রিয়া হিসাবে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠান অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ভাড়া করা এজিএম পার্টির লোক, নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী শেয়ারহোল্ডার ও শেয়ারহোল্ডার নন— এমন লোকজন ভাড়া করে এনে বার্ষিক সাধারণ সভায় কয়েকজন পরিচালকের বিরুদ্ধে ‘বিষোদগার’ করা হয়েছে। এজিএমের নামে নজিরবিহীন নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও কোম্পানি সেক্রেটারির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম বহির্ভূত অপব্যবস্থাপনার ব্যাপারে কিছু করার শক্তি না থাকলে সম্মানিত পরিচালকদের পর্ষদে থাকা অর্থহীন।’

গত ১৩ মে পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকের পর থেকে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং ভাইস-চেয়ারম্যানের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়ে উঠে। 

উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারি বেসরকারি এই ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। ওই দিন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), নির্বাহী ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন আনা হয়। ১৯৮৩ সালে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াত-নিয়ন্ত্রিত হিসেবেই পরিচিত ছিল। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান ইবনে সিনা ট্রাস্টের প্রতিনিধি হিসেবে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা মুস্তাফা আনোয়ারের জায়গায় বসানো হয় সরকারের সাবেক সচিব আরাস্তু খানকে। পদত্যাগে বাধ্য করানো হয় ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ আবদুল মান্নানকে। নতুন এমডির দায়িত্ব দেওয়া হয় ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি মো. আবদুল হামিদ মিঞাকে। এরপর থেকে ব্যাংকটিতে নানা পর্যায়ে অস্থিরতা দেখা যায়। এর মধ্যে ব্যাংকটির অন্যতম উদ্যোক্তা ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) প্রতিনিধি গত ৩০ মার্চ পরিচালনা পর্ষদের সভায় শেয়ার ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। তখন থেকে ব্যাংকটিতে আবারও মালিকানা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন-
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের সৎ থাকার পরামর্শ

ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান আহসানুল আলমকে অব্যাহতি

/জিএম/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রচণ্ড গরমে দই-ফলের এই ডেজার্ট বানিয়ে খান
প্রচণ্ড গরমে দই-ফলের এই ডেজার্ট বানিয়ে খান
ইউক্রেনকে ৫৫০ কোটি ডলারের সহায়তা দেবে সুইজারল্যান্ড
ইউক্রেনকে ৫৫০ কোটি ডলারের সহায়তা দেবে সুইজারল্যান্ড
সবজির বাজার ঊর্ধ্বমুখী, তীব্র গরমকে দুষছেন বিক্রেতারা
সবজির বাজার ঊর্ধ্বমুখী, তীব্র গরমকে দুষছেন বিক্রেতারা
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী