X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এত চিনি যায় কোথায়?

শফিকুল ইসলাম
২৮ মে ২০১৭, ২৩:০০আপডেট : ২৯ মে ২০১৭, ১২:২৯

বাজারে চিনির সরবরাহ কম দেশের শীর্ষ পাঁচটি বেসরকারি চিনিকল থেকে দৈনিক প্রায় আট হাজার টন চিনি বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। আর সরকারি চিনিকলগুলো উৎপাদন করে দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টন। এরপরও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাজারে চিনির সরবরাহ কম। চাহিদা অনুযায়ী, চিনির ডিও (চাহিদাপত্র) নিষ্পত্তি করছে না মিল কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন চিনি আনতে ট্রাক নিয়ে মিলগেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে সন্ধ্যায় খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। তাই বাজারে চিনির সরবরাহ কম। ফলে দামও কমছে না।
দেশে প্রচলিত পরিবেশক আইন বহাল থাকলেও তা অকার্যকর। পাইকারি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে পরিবেশক আইন প্রবর্তন করলেও বেসরকারি মিল মালিকরা তা মানছেন না। এখনও চলছে ডিও প্রথার মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ। ফলে ডিও’র নামে হাত থেকে হাতে কাগজ বিক্রির মাধ্যমে চিনিসহ ভোজ্যতেল বিক্রির যে সিন্ডিকেট তা আজও রয়ে গেছে প্রকাশ্যে। বিষয়টি বাণিজ্যমন্ত্রীর কান পর্যন্ত পৌঁছালেও তিনি ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ‘সিন্ডিকেট’ বিষয়টি মানতে নারাজ। তার মতে, চলতি মেয়াদে বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে তিনি বাজারে সিন্ডিকেটের কিছু দেখেননি। এগুলো অবাস্তব এবং মিডিয়ার সৃষ্টি।
চিনির মূল্য বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘চিনির দাম বাড়ার কোনও যৌক্তিক কারণ নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম এখন নিম্নমুখী।’
বেসরকারি চিনিকলগুলোর কাছ থেকে ডিও অনুযায়ী চিনি না পাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ডিও অনুযায়ী বাজারে সঠিকভাবে চিনি সরবরাহের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে ফ্রেশ ব্রান্ডের চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপের মালিক মোস্তফা কামাল ও তীর ব্র্যান্ডের চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের মালিক ফজলুর রহমানকে মন্ত্রণালয়ে ডেকে এনে পরামর্শ দেবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। তবে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, বাজারে চিনিসহ কয়েকটি নিত্যপণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারকারী এই দুই প্রতিষ্ঠানের মালিককে মন্ত্রণালয়ে ডেকে না আনলেও তাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন মন্ত্রী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত দুই তিন বছর ধরে শবে বরাতের পর থেকেই বাজারে চিনির কৃত্রিম সংকট দেখা যায় যা চলে রোজার প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এসময় প্রতিকেজি চিনির দাম ৮০ টাকা পর্যন্তও ওঠে। অভিযোগ রয়েছে, ওই সময় মেঘনা গ্রুপসহ বড় কিছু চিনি উৎপাদন কারখানা সংস্কারের নামে বন্ধ রাখা হয়।এতে বাজারে প্রতিদিন ২ হাজার মেট্রিক টন চিনির ঘাটতি তৈরি হয়। ফলে চিনির কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমানে প্রতিদিন সিটি গ্রুপ থেকে ২৯০০ থেকে ৩০০০ হাজার টন, মেঘনা গ্রুপ থেকে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টন, ঈগলু গ্রুপ থেকে ৫০০ থেকে ৭০০ টন, দেশবন্ধু গ্রুপ থেকে ৫০০ টন, এস আলম থেকেও ৫০০ টন চিনি সরবরাহ করা হচ্ছে।
কিন্তু, ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, তারা ডিও মোতাবেক চিনি সরবরাহ পাচ্ছেন না।প্রতিদিনই ব্যবসায়ীরা মিলগেট থেকে খালি ট্রাক নিয়ে ফেরত আসছেন—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনও ব্যবসায়ী ডিও নিয়ে এসে ফিরে গেছেন বিষয়টি আমার জানা নাই।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘চাহিদার তো শেষ নাই। কিন্তু, উৎপাদন তো নির্দিষ্ট।’
চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের বাজারজাত করা আখের চিনি এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একজন ব্যবসায়ী যদি একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে ডিও কেনেন এবং সেই ডিও মোতাবেক একসঙ্গে সেগুলোর ডেলিভারি চান তাহলে তো কোনও মিল কর্তৃপক্ষই তা দিতে পারবে না।’
তিনি বলেন, টিসিবি চেয়ারম্যানকে আরও চিনি কেনার জন্য বলেছি। তবে তাদের পক্ষে দেশের ১৬ কোটি মানুষকে চিনি সরবরাহ করা সম্ভব নয়।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারি মিলগুলো চিনি উৎপাদন করছে এবং তা বাজারে ছাড়ছে। মিলগুলো সাধ্য অনুযায়ী রমজানে চিনির চাহিদা পূরণে অবদান রাখছে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজধানীর পাইকারি বাজার মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ী আবুল হাসেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মিলগুলো থেকে চাহিদা অনুযায়ী চিনি পাচ্ছি না। তাই বাজারে চিনির সংকট তৈরি হয়েছে। ১০০ টন চিনির ডিও নিয়ে গেলে ১০ টন চিনি দিয়ে বিদায় করা হচ্ছে। এতে চিনির দামও বেশি পড়ছে।’
কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘আমি হয়তো ১০০ টন চিনি আনার জন্য মিল গেটে ট্রাক নিয়ে গেছি। কিন্তু সেখানে যদি ১০ টন দিয়ে বিদায় করা হয়, তাহলে বাকি ৯০ টন চিনি পরিবহনের জন্য যে ট্রাক ভাড়া করেছিলাম সেই ভাড়াতো ঠিকই পরিশোধ করতে হয়। এই বাড়তি দাম তো ১০ টনের ওপর গিয়ে বর্তায়। এভাবেই বাজারে চিনির দাম বাড়ে।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ বছরে চিনির চাহিদা ২০-২২ লাখ মেট্রিক টন। আর রোজায় প্রয়োজন হয় প্রায় ৪ লাখ টন চিনি। দেশের ১৫টি চিনিকল সারা বছর মাত্র সাড়ে ৪ লাখ টন থেকে ৫ লাখ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করে। বাকি চিনির চাহিদা পূরণ করে বেসরকারি মিলগুলো। বেসরকারি চিনিকলগুলোর মধ্যে আবার বড় ভূমিকা রাখে সিটি ও মেঘনা গ্রুপ।
/এসআই/এসটি/টিএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিক্রির জন্য সবজি কিনে ফেরার পথে দুই ব্যবসায়ী নিহত
বিক্রির জন্য সবজি কিনে ফেরার পথে দুই ব্যবসায়ী নিহত
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
রাজধানীতে খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভ
রাজধানীতে খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভ
প্রচণ্ড গরমে দই-ফলের এই ডেজার্ট বানিয়ে খান
প্রচণ্ড গরমে দই-ফলের এই ডেজার্ট বানিয়ে খান
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি