X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রেমিটেন্সের খরা কাটানোর বছর ২০১৮

গোলাম মওলা
৩১ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৭:৪৮আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৯:১১

রেমিটেন্স

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা মাত্র ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। রেমিটেন্স প্রবাহের মাস হিসেবে গত ছয় বছরের মধ্যে এটিই ছিল সর্বনিম্ন। শুধু সেপ্টেম্বরই নয়, বিগত বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি এই রেমিটেন্স কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও রেমিটেন্সের খরা ইতোমধ্যে কাটতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, ২০১৮ সালে রেমিটেন্স খরা পুরোপুরি কেটে যাবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী সাইদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি, ২০১৮ সালে রেমিটেন্সের খরা পুরোপুরি কেটে যাবে। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক এই রেমিটেন্স বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। হুন্ডি প্রতিরোধে অবৈধ মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আগামী জুন (২০১৮) নাগাদ অর্থাৎ এই অর্থবছর শেষে রেমিটেন্স প্রবাহ এক হাজার ৫০০ কোটি বা ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। কারণ, বর্তমানে এর প্রবৃদ্ধি ভালো। অচিরেই প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের ওপরে থাকবে।’
তিনি  আরও বলেন, ‘বর্তমানে ডলারের দাম কিছুটা বেড়েছে। এর প্রভাবেও রেমিটেন্স বাড়ছে। ডলারের চাহিদা মেটাতে ব্যাংক তার নিজের স্বার্থেই ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের রেমিটেন্স আনার চেষ্টা করছে। সে কারণেও রেমিটেন্স বাড়বে। এছাড়া, শ্রমশক্তি রফতানিও বেড়েছে। এরও একটা প্রভাব পড়বে ২০১৮ সালে।’

অবশ্য গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা আগের বছরের চেয়ে ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ কম।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্নমুখী উদ্যোগের কারণে গত অক্টোবর মাস থেকে এই রেমিটেন্স ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। অক্টোবর মাসে ১১৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিটেন্স আসে দেশে। যা গত সেপ্টেম্বর মাসের চেয়ে ৩০ কোটি ৩০ লাখ ডলার বেশি। আর ২০১৬ সালের অক্টোবরের চেয়ে এটি ১৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার বেশি।

প্রবাসীরা গত নভেম্বর মাসে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ১২১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। এর আগে অক্টোবরে পাঠিয়েছিলেন ১১৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এই হিসাবে নভেম্বর মাসে বেড়েছে পাঁচ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। 

এদিকে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বরে) রেমিটেন্স আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এই পাঁচ মাসে দেশে ৫৭৬ কোটি ৮৫ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে।

আর চলতি মাসের ২২ দিনে (১ থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত) এসেছে ৮৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য সাবেক নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রবাসী আয় বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এর সঙ্গে জনগণও বৈধপথে রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। এরই প্রভাব পড়েছে সার্বিক রেমিটেন্সে।’ তিনি বলেন, ‘আশা করা যায়, নতুন বছরে রেমিটেন্সের খরা আর থাকবে না।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. জায়েদ বখত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যেসব কারণে রেমিটেন্স নেগেটিভ হচ্ছিল, সেসব কারণ খুঁজে বের করা গেলে রেমিটেন্সের প্রবাহ বাড়বে। বর্তমানে এর গতি ইতিবাচক মনে হচ্ছে।’  অবৈধ মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রণ ও ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে রেমিটেন্স প্রবাহ এখন বাড়ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এছাড়া, সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগও প্রবাসী আয় বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।

এর আগে রেমিটেন্স বাড়াতে মাশুল না নেওয়াসহ বিভিন্ন ঘোষণা দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। একইসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকও প্রবাসীদের জন্য বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি অবৈধ মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধে কঠোর অবস্থান নেয়। সর্বশেষ হুন্ডি রোধে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। গত ১৪ সেপ্টেম্বর হুন্ডির মাধ্যমে রেমিটেন্স বিতরণের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের দুই হাজার ৮৮৭ জন এজেন্টের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসীরা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পাঠিয়েছেন ১১৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। দ্বিতীয় মাস আগস্টে ১৪১ কোটি ৮৬ লাখ ডলার পাঠান প্রবাসীরা। সেপ্টেম্বরে পাঠিয়েছেন ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার, অক্টোবরে পাঠিয়েছেন ১১৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার ও নভেম্বর মাসে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ১২১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে রেকর্ড পরিমাণ এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ (১৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স আসে। এরপর প্রতিবছরই রেমিটেন্স কমে যেতে থাকে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আড়াই শতাংশ কমে গিয়ে রেমিটেন্স আসে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) তা সাড়ে ১৪ শতাংশ কমে দাঁড়ায় এক হাজার ২৭৭ কোটি ডলারে, যা ছিল আগের ছয় অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জিডিপিতে ১২ শতাংশ অবদান রাখছে প্রবাসীদের পাঠানো এই বৈদেশিক মুদ্রা।

আরও পড়ুন: 

দুদক আশা পূরণ করতে পারেনি: অর্থমন্ত্রী

/এএম/এসএনএইচ/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ