X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনি বছরে এডিপি বাস্তবায়নে যত চ্যালেঞ্জ

শফিকুল ইসলাম
১৯ জানুয়ারি ২০১৮, ২০:৫৩আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০১৮, ১০:৪৭

এডিবি সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন না হওয়া এখন বাংলাদেশের জন্য স্বাভাবিক ঘটনা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরও এর ব্যতিক্রম নয়। বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতিবছর সরকার যে এডিপি গ্রহণ করে, তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হয় না। কোনও কোনও প্রকল্প ধীর গতিতে এগুলেও বেশিরভাগেরই কাজ শুরু হয় না। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় প্রতিবছরই এডিপি বাস্তবায়নের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়। এ বছরও তেমন আহবান জানানো হয়েছে। কারণ এটি নির্বাচনি বছর। এ কারণে নির্বাচনি এলাকায় নেওয়া প্রকল্প নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন না হলে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা কঠিন সমালোচনার মুখে পড়বেন বলেও অর্থনীতিবিদরা মনে করেন। 

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর) এডিপি বাস্তবায়নের হার মাত্র ২৭ শতাংশ। অর্থবছরের বাকি ছয় মাসে (১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন) সরকারকে এডিপির বাকি ৭৭ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে হবে। যা অনেটাই চ্যালেঞ্জিং বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে এডিপি বাস্তবায়নের হার প্রথমার্ধের হারের তুলনায় বেশি হয়। সেদিকটি বিবেচনায় নিলে এডিপি বাস্তবায়ন এই বছর সন্তোষজনক হবে বলে মনে করেন সরকারের নীতি-নির্ধারকরা। 

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এডিপি বাস্তবায়নের ধীর গতির বিভিন্ন কারণ চিহ্নিত করে তা সমাধানের সুপারিশ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে, সময়মতো অর্থছাড় না হওয়া, জমির অধিগ্রহণে বিলম্ব, দক্ষ প্রকল্প পরিচালকের অভাব। এছাড়া বাস্তব অভিজ্ঞতার অভাব, কর্মকৌশল গ্রহণে সরকারের ধীর গতি, ক্রয়কাজে জটিলতা, যোগ্য পরামর্শক প্যানেল না পাওয়া। সুপারিশে আরও যেসব সমস্যার কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন সহযোগীর সম্মতি পেতে দেরি, পরিবেশগত প্রভাবের বিষয়ে মূল্যায়নে জটিলতা, ঋণ নেগোশিয়েশন না হওয়া, সঠিক সময়ে বাস্তবসম্মত ক্রয় পরিকল্পনা, কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও অনুসরণ না করা, দরপত্র আহ্বান ও কন্ট্রাক অ্যাওয়ার্ড কাজে বিলম্ব, ভৌত কাজের ডিজাইন ও রেট শিডিউল পরিবর্তনের কারণে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি। পাশাপাশি প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ ও বদলির ক্ষেত্রে প্রচলিত বিধিবিধান অনুসরণ না করা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা কর্তৃক যথাযথ পরীবিক্ষণের অভাব, প্রকল্প বাস্তবায়নকালীন এবং বাস্তবায়নোত্তর আইএমইডির মনিটরিং প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নে গুরুত্ব না দেওয়া, সময়মতো প্রকল্পের পিসিআর না পাওয়াকেও দায়ী করা হয়েছে।

অন্যান্য বছরের প্রথম দিন থেকেই এডিপি বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে তাগিদ দিলেও এ বছর এ চিত্র ভিন্ন। অর্থ বছরের প্রথম দিন থেকে এডিপি বাস্তবায়নের জন্য মাঠে না নেমে কাগজপত্রের কাজ সমাধানও কেনাকাটার কাজ করার পরামর্শ দিয়েছে সরকারেরর সংশ্লিষ্ট বিভাগ। কারণ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই ও আগস্টে  বৃষ্টি থাকে। অন্যদিকে অর্থবছরের শেষ দুই মাস—মে ও জুনেও থাকে বৃষ্টি। এ সময়ে মাঠে না থেকে প্রকল্পের ঘরোয়া কাজের প্রতি মনোনিবেশ করার পরামর্শ তাদের। এরপর অর্থবছরের বাকি সময় অর্থাৎ আট মাস বিস্তারিতভাবে পরিকল্পনার সঙ্গে এডিপি বাস্তবায়নের জন্য যুগোপযোগী প্রকল্প গ্রহণ করলে লক্ষ্য অনুযায়ী এডিপি বাস্তবায়ন অসম্ভব নয়।

 এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এডিপির বাস্তবায়ন শুধু টাকার অঙ্কে বিচার করলে হবে না। যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এডিপির প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, তা সঠিকভাবে হয়েছে কিনা, তা দেখতে হবে। অন্যদিকে যারা বাস্তবায়ন করতে পারছে না, তার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া বিবেচনা করে এডিপি বাস্তবায়নের জন্য মাঠে নামতে হবে। বৃষ্টির দিনে প্রকল্প বাস্তবায়নে মাঠে নামলে কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। এতে সময় ও অর্থের অপচয় হয়।’

প্রতিবছরই জুনের মধ্যে এডিপি বাস্তবায়ন করতে নির্দেশনা জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রতি অর্থবছরই এডিপির ৯৫ শতাংশ বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এছাড়া সঠিক সময়ে এডিপি বাস্তবায়নে সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানে একটি ফান্ড গঠন করার কথাও বলা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায়। অগ্রাধিকার কর্মসূচি বা প্রকল্প বাস্তবায়নে এই ফান্ড থেকে অর্থ নেওয়া হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প পরিচালকদের প্রকল্প এলাকায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পেলে সেই প্রকল্প পরিচালকরা তা মানেন না। এমনকি অনেক প্রকল্প পরিচালকের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনও ধারণাও থাকে না। এসব কারণেই এ বছর বাকি ৬ মাসে ৭৭ শতাংশ বা এর কাছাকাছি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এডিপি বাস্তবায়ন হবে চ্যালেঞ্জিং।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কঠোর মনিটরিংয়ের কারণে আগের তুলনায় এখন এডিপি বাস্তবায়নের হার ভালো। বর্তমান সরকারের বড় বড় অনেক প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে এডিপি বাস্তবায়নের হার আরও বাড়বে।’ বাকি ৬ মাসে প্রত্যাশা অনুযায়ী এডিপি বাস্তবায়ন হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা