X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শর্তের বাধায় পুরোপুরি ব্যবহার হচ্ছে না ভারতের দেওয়া ঋণের টাকা

শফিকুল ইসলাম
২০ জানুয়ারি ২০১৮, ১৩:৪২আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০১৮, ১৯:১৮

শর্তের কারণে ভারত প্রতিশ্রুত ঋণের টাকা পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারছে না বাংলাদেশ। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ‘সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট’ এর নামে ভারত যে শর্ত দিচ্ছে তা বাস্তবায়ন অনেকটাই কঠিন হয় বাংলাদেশের জন্য। তাই ভারত প্রতিশ্রুত ঋণের বেশির ভাগ টাকা অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া ঋণের যেটুকু অর্থ ব্যবহার করা গেছে তা ভারত সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। এর বাইরে নয়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ-ভারত ইআরডি সূত্র জানায়, গত বছরের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় বাংলাদেশের জন্য সাড়ে চারশ’ কোটি ডলার ঋণের ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই সময় শেখ হাসিনা ও মোদির উপস্থিতিতে ২২টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তখন বাংলাদেশের সামরিক ক্ষেত্রে ৫০০ মিলিয়ন ডলারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে সহজ শর্তে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি।

এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের অক্টোবরে ভারতীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বাংলাদেশ সফরে এসে দু’দেশের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন করেন। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উপস্থিতিতে তৃতীয় ঋণরেখা বাস্তবায়নের জন্য চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। এর মধ্য দিয়ে গত ৬ বছরে বাংলাদেশকে দেওয়া ভারতের ঋণরেখা ৮০০ কোটি ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়।

এর আগে, ২০১০ সালেও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং প্রথম লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৮০ কোটি ডলার ঋণ, ২০ কোটি ডলার অনুদান। ওই ঋণের আওতায় নেওয়া হয়েছিলো ১৬টি উন্নয়ন প্রকল্প। যার মধ্যে ১২টির কাজ শেষ হয়েছে। ভারত সম্পৃক্ত এসব প্রকল্পের বিপরীতে গত সাত বছরে মাত্র ৩৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার ছাড় করেছে ভারত, যদিও আরও ৮৬ কোটি ডলার ঋণ সুবিধা দেওয়ার কথা ছিল। এরপর দ্বিতীয় ঋণ চুক্তির আওতায় মনমোহন সিং সরকার আরও ২০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। ওই অর্থে ১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাছাই শেষে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ১২টিতে। তবে প্রকল্পগুলোর মাঠ পর্যায়ের কাজই এখনও শুরু হয়নি।

সূত্র জানায়, প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি ভারত কর্তৃক ‘সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট’ শর্তের কারণে। সর্বশেষ তৃতীয় ক্রেডিট লাইন চুক্তির অর্থ ব্যয় করার জন্য চিহ্নিত ১৭টি প্রকল্প নির্ধারণ করা হয়েছে।

ইআরডি জানায়, ঋণের টাকায় অবকাঠামো উন্নয়নের প্রকল্প হলে ৬৫ শতাংশ সেবা ও মালামাল ভারত থেকে আনতে হবে। অন্য প্রকল্প হলে সেক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ মালামাল ও সেবা ভারত থেকে আনার শর্ত থাকে। ভারত থেকে পাওয়া ঋণের সুদ হার ১ শতাংশ আর প্রতিশ্রুতি মাশুল আধা শতাংশ। ২০ বছরে পুরো ঋণের টাকা পরিশোধ করার বিধান থাকলেও পাঁচ বছরের রেয়াত সময় পাওয়া যায়।

ইআরডির এক কর্মকর্তা জানান, ভারত থেকে পর্যাপ্ত ঋণ পাওয়া গেলেও তা কাজে লাগানো যায় না। আবার বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প নেওয়া হলেও তা অনুমোদন পেতে সময়ক্ষেপণ হয়। আবার প্রকল্প অনুমোদন পেলেও ওই প্রকল্পের টাকা ছাড়ের ক্ষেত্রে গড়িমসি রয়েছে। কারণ তাদের শর্ত খুব কঠিন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, শর্তের মধ্যে সব চেয়ে বড় শর্ত হচ্ছে তাদের (ভারত) নির্ধারিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্ব দিতে হবে। আবার প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাদের দেশের কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য প্রকল্পে ব্যবহার করতে হবে। তবে যে প্রকল্পগুলোয় ভারত-বাংলাদেশের যৌথ সম্পর্ক রয়েছে তেমন প্রকল্পে তারা আগ্রহভরে এর অর্থ ছাড় করে।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, শুধু ভারতই নয়, চীনের কাছ থেকে পাওয়া ঋণ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একই সমস্যায় পড়তে হয় বাংলাদেশকে। তবে এ ক্ষেত্রে চীনের শর্ত কিছুটা সহনীয়। চীন তাদের ঋণের টাকায় নেওয়া প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সে দেশের একাধিক প্রতিষ্ঠানের নাম প্রস্তাব করে, যেখান থেকে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠান পছন্দ করার এখতিয়ার রাখা হয়, যা ভারত দেয় না।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভারত থেকে পাওয়া প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির ঋণে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক না হলেও তৃতীয় কিস্তির ঋণের প্রকল্পের বিপরীতে ঋণের অর্থ ছাড় হচ্ছে। ছাড়কৃত অর্থে প্রকল্প বাস্তবায়নও হচ্ছে। এর অগ্রগতি ভালো।’

তবে কঠিন শর্তে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছে, এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সব ঋণ ব্যবহারের ক্ষেত্রেই কিছু নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হয়। ওই নিয়ম-নীতি ঠিক করতে কিছুটা সময় তো লাগবেই। এটিকে দায়ী করা ঠিক নয়।’

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুধু ভারত নয়, যেকোনও দেশই ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত দিতে পারে। সেক্ষেত্রে ঋণ গ্রহীতাকে সুবিধা-অসুবিধা ভেবেচিন্তে ঋণ নেওয়া উচিত। যে শর্ত মানতে পারবো না অথবা যে ঋণের শর্ত দেশের শতভাগ উপকারে আসবে না সেই ঋণ না নেওয়াই ভালো।’

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ৭ আগস্ট ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ১০০ কোটি ডলারের প্রথম ‘এলওসি’ ঋণচুক্তি হয়। এর মধ্য থেকে পরে ১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার অনুদানে রূপান্তর করে ভারত। ২০১৫ সালের জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় ২০০ কোটি ডলার ঋণ বা দ্বিতীয় এলওসি দেওয়ার সমঝোতা চুক্তি হয়। পরে ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি হয়।


/এমও/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কোনও রান না দিয়ে ৭ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে ইন্দোনেশিয়ার বোলারের বিশ্ব রেকর্ড
কোনও রান না দিয়ে ৭ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে ইন্দোনেশিয়ার বোলারের বিশ্ব রেকর্ড
রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
ঢামেক হাসপাতালে কারাবন্দীর মৃত্যু
ঢামেক হাসপাতালে কারাবন্দীর মৃত্যু
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত