X
শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪
২৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবৃদ্ধি নিয়ে সংশয় বিশ্বব্যাংকের

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৯ এপ্রিল ২০১৮, ১৭:৫১আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০১৮, ১৯:১৩





বিশ্ব ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন

দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) যেসব প্রতিবেদন দিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস। সোমবার (৯ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন অর্থনীতির হালনাগাদ পরিস্থিতি তুলে ধরার সময় এ প্রশ্ন তোলেন।
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘তথ্য-উপাত্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা বিবিএসকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আসলে এর সমপর্যায়ে কেউ নেই। তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে যে তথ্য দিয়েছে তারা, তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন ও সংশয় আছে। বিবিএস সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকলেও এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না বিষয়টা এমনটা নয়।’
আগারগাঁওয়ের বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসে হওয়া এ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রকাশ করা হয়।
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বিশ্বের যে কয়টি দেশে প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের বেশি হয়েছে, তাদের জিডিপির তুলনায় বিনিয়োগ অথবা রফতানি বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দুটিই বেড়েছে। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। কেননা, বাংলাদেশে সরকারি বিনিয়োগ বাড়লেও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ স্থবির। কমেছে রফতানি আয়। এক্ষেত্রে শুধু ভোগের ওপর ভিত্তি করে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, যা বিশ্বে একেবারেই ব্যতিক্রম।’
প্রসঙ্গত, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) অর্থনীতির বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়াবে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ বলে জানানো হয়। যা চলতি বাজেটে প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধির চেয়েও বেশি। চলতি বাজেটে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। আগের বছর প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।
প্রবৃদ্ধির হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তুলে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘প্রশ্নগুলো হলো এত প্রবৃদ্ধি কি অর্থনীতির সক্ষমতার অতি ব্যবহার নাকি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা? এত প্রবৃদ্ধির জন্য কাঠামোগত পরিবর্তনের কোনও প্রমাণ নেই নাকি উৎপাদনশীলতা বেড়েছে? আবার আইনি পরিবর্তন হয়নি, তেলের দামও কমেনি, স্বস্তিবোধের কোনও কারণও নেই।’
ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘জাতীয় আয়ের প্রকৃত হিসাব করার জন্য বড়মাপের প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজনীয়তা আছে। বিবিএস জেলা পর্যায় থেকেও তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। অনেক অর্থনীতিবিদ বলেন, বিবিএস হলো সুপ্রিম কোর্টের মতো। যেহেতু এখানে আইনি কোনও বিষয় নেই, তাই প্রশ্ন তুলতেই পারি। এসব বিষয়ে আরও বিশ্লেষণ করা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘এটা ব্যতিক্রমী প্রবৃদ্ধি, আগামীতে এই নিয়ে ঝুঁকি দেখা দেবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়লেও সেভাবে কর্মসংস্থান বাড়েনি। এ বছরে শহরগুলোতে তিন লাখ দরিদ্র বেড়েছে। প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির সঙ্গে দারিদ্র্য বিমোচন যেভাবে হওয়ার কথা তা হয়নি। দারিদ্র্য কমছে ঠিকই, কিন্তু সেই দারিদ্র্য কমার গতি কমে গেছে।’
বিশ্বব্যাংকের এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫ অথবা ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। আমাদের আয়ের প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৭ এবং কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ২ শতাংশ। আয় ও কর্মসস্থানের প্রবৃদ্ধির চিত্র যদি এমন হয়, তবে বছর শেষে সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি হবে না।’
বিশ্বব্যাংকের মতে, অর্থনীতিতে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া, বাণিজ্যঘাটতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা এবং রাজস্ব ঘাটতি।
অর্থনৈতিক ঝুঁকির ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে ব্যাংকিং খাতই সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের খাত হিসেবে উল্লেখ করে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এই খাতের দুর্নীতি দমনে, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য ব্যাংক খাতে তদারকি বাড়াতে হবে। আবার ঋণ আদায়ে আইনগত ও আর্থিক কাঠামোর উন্নতি করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকে তারল্য সংকট না থাকলেও খেলাপি ঋণ অনেক বেশি। আবার বেশ কিছু বেসরকারি ব্যাংকে তারল্য সংকট আছে।’
তার মতে, মুদ্রানীতি এখন সম্প্রসারণমূলক হয়ে গেছে। বিশ্ব অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি অনুযায়ী সতর্কতামূলক মুদ্রানীতি হওয়া উচিত।
বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে তেমন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। এটি মূলধন ঘাটতির অন্যতম কারণ। কয়েক বছর ধরে এই ঘাটতি নিরসনে বাজেটের মাধ্যমে অর্থ দেওয়া হচ্ছে।
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে খেলাপি বৃদ্ধি ও আমানতে কমে যাওয়ায় তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। এসব উত্তরণে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তাতে ব্যাংক খাতে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনিটরিং পলিসি ছয় মাস পর পর দেওয়ার কথা, কিন্তু এখন তারা আগেই দিচ্ছে।’
সামগ্রিক পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির জন্য বেশ কয়েকটি পরামর্শও দিয়েছে সংস্থাটি। জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থনীতির উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধীনভাবে মুদ্রানীতি প্রণয়নের সুযোগ দিতে হবে। এছাড়া অবকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফান, জনসংযোগ কর্মকর্তা মেহরীন এ মাহবুব উপস্থিত ছিলেন।

/জিএম/এইচআই/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মিরপুরে ‘অ্যাপ্রোচ’ বদলে খেলবে বাংলাদেশ
মিরপুরে ‘অ্যাপ্রোচ’ বদলে খেলবে বাংলাদেশ
রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যাকে চান পুতিন
রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যাকে চান পুতিন
দেশে বেকারের সংখ্যা কেন বাড়ছে?
দেশে বেকারের সংখ্যা কেন বাড়ছে?
বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
সর্বাধিক পঠিত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের বানান ভুল লিখলো সওজ, চলছে সমালোচনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের বানান ভুল লিখলো সওজ, চলছে সমালোচনা
আর্জেন্টাইন ক্লাবকে জামাল ভূঁইয়ার ২ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ ফিফার
আর্জেন্টাইন ক্লাবকে জামাল ভূঁইয়ার ২ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ ফিফার
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা: আজিজ মোহাম্মদসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা: আজিজ মোহাম্মদসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন
চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় আহত পাইলটের মৃত্যু
চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় আহত পাইলটের মৃত্যু
দেশের ব্যাংকগুলো ধ্বংস হচ্ছে, তার উদাহরণ এনআরবিসি: জিএম কাদের
দেশের ব্যাংকগুলো ধ্বংস হচ্ছে, তার উদাহরণ এনআরবিসি: জিএম কাদের