X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে বায়ুচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে লাভের হাতছানি

সঞ্চিতা সীতু
২১ এপ্রিল ২০১৮, ২৩:২০আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০১৮, ১৪:৩০





উইন্ডমিল (ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ছবি) এতদিন দেশে বায়ুশক্তি ব্যবহার করে খুবই অল্প পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। এখন বলা হচ্ছে, বায়ুচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়াও সম্ভব। আগে যেখানে পাইলট প্রকল্প হিসেবে এক বা দুই মেগাওয়াট ক্ষমতার বায়ুচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হতো, এখন তা বড় আকারে করা যাবে।
বাংলাদেশের নয়টি স্থানে বায়ুপ্রবাহের তথ্য বিশ্লেষণ করে আমেরিকার ন্যাশনাল রিনিউয়েবেল এনার্জি ল্যাবরেটরি (এনআরইএল) এই তথ্য দিচ্ছে।
১২ মাস থেকে ৪৩ মাস পর্যন্ত এসব এলাকায় বায়ুপ্রবাহের তথ্য পর্যালোচনা শেষে উইন্ড ম্যাপিংয়ের (বায়ু মানচিত্র) ফলাফলে এ মাসেই প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
সম্প্রতি এনআরইএল-এর প্রকল্প পরিচালক মার্ক জ্যাকবসন বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো প্রতিবেদনে বলেছেন, একটি বায়ুচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে আদর্শ বায়ুপ্রবাহের গড় কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ মিটার/সেকেন্ড হওয়া দরকার। বাংলাদেশের ওই নয়টি স্থানে গড়ে এই বায়ুপ্রবাহ পাওয়া গেছে। জ্যাকবসন তার রিপোর্টে বায়ুর এই গতিবেগকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক বলে মন্তব্য করেছেন।
পিডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, গোপনীয় এই প্রতিবেদন শুধুমাত্র তাদের জানার জন্য পাঠানো হয়েছে। এপ্রিলের মধ্যেই এনআরইএল চূড়ান্ত রিপোর্ট দেবে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে সবাইকে এ বিষয়ে অবহিত করবে বিদ্যুৎ বিভাগ। পাশাপাশি এ মাসে একটি সেমিনার করার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের পরিচালক (টেকসই জ্বালানি) আব্দুর রৌফ মিয়া বলেন, ‘বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনে কমপক্ষে দুই বছরের তথ্য থাকা দরকার। এতদিন যা আমাদের হাতে ছিল না। সাধারণত ২ দশমিক ৩ থেকে ২ দশমিক ৫ মিটার/ সেকেন্ড হলেই বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম বেশি পড়ে। কিন্তু ৫ থেকে ৬ মিটার/সেকেন্ড বাতাসের গতিবেগ হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক করা সম্ভব।’
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, নয়টি স্থানে সাউন্ড ডিটেকটিভ অ্যান্ড রেঞ্জিং (এসওডিএআর) পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তথ্য বাছাইয়ের পর মডেলিং ওয়ার্কের কাজ শুরু করেছে এনআরইএল। নয়টি স্থানের মধ্যে ২০১৪ সালে পাঁচটি এবং ২০১৫ সালের চারটি টাওয়ার স্থাপন করা হয়। টাওয়ারগুলোর মধ্যে ৪৩ মাস ধরে নাটোরের লালপুরের বায়ুপ্রবাহের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সেখানে ৮০ মিটার উচ্চতায় বাতাসের একটানা গতিবেগ পর্যালোচনা করা হয়। একইভাবে ৪৩ মাস ধরে চাঁদপুর সদরের জাফরাবাদে ৬০ মিটার উচ্চতার টাওয়ার স্থাপন করে বায়ুপ্রবাহের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে কক্সবাজারের ইনানি বিচে স্থাপন করা টাওয়ার দিয়ে ৪০ থেকে ২০০ মিটার পর্যন্ত বাতাসের অবস্থা পর্যালোচনা করা হয়। এখানে ১২ মাসের গতিবেগ পরীক্ষা করা হয়।
সীতাকুণ্ডে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ৮০ মিটারের একটি টাওয়ার স্থাপন শেষে ২৪ মাস ধরে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। একই সময়ে পার্কি বিচে একই উচ্চতার টাওয়ার স্থাপন করে ৩৬ মাস ধরে পরীক্ষা চলে। বদরগঞ্জে ২০ থেকে ২০০ মিটারের নানা ধরনের টাওয়ার স্থাপন করা হয়। ২০১৫ সালের আগস্টে স্থাপন করা এসব টাওয়ার থেকে ২৪ মাসের তথ্য নেওয়া হয়। একই সময়ে ময়মনসিংহের গৌরিপুর এলাকায় ৮০ মিটারের টাওয়ার স্থাপন করে ২৯ মাসের তথ্য নেওয়া হয়। হবিগঞ্জের মধুপুর চা বাগানে ২০১৫ সালের অক্টোবরে ৮০ মিটার উচ্চতার টাওয়ার স্থাপন করে ২৬ মাস ধরে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। একই সময়ে খুলনার দাকোপে ৮০ মিটার উচ্চতার টাওয়ার স্থাপর করে ২৬ মাস ধরে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
জানা যায়, বাংলাদেশের দক্ষিণে বছরে আট মাস অর্থাৎ মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বায়ুপ্রবাহ থাকে। এই সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। বাকি চার মাস অর্থাৎ নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি দক্ষিণে না থাকলেও উত্তরাঞ্চলে বায়ুপ্রবাহ ভালো থাকে। তবে যেহেতু গ্রীষ্মে বিদ্যুতের সংকট বেশি থাকে, তাই এই সময়ে বায়ুচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনকে লাভজনক বলে মনে করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
প্রাথকিভাবে কয়েক মেগাওয়াট ক্ষমতার বায়ুচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ১৫ থেকে ১৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়। তবে দিন দিন এই খরচ কমে আসছে। যেহেতু বায়ুই বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান উপকরণ, তাই কোনও জ্বালানি খরচ নেই। দীর্ঘ মেয়াদে এ ধরনের বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিবেশী দেশ ভারত ৩২ হাজার মেগাওয়াটের বায়ুচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি কোম্পানি বাংলাদেশে বায়ুচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। সেগুলো যাচাইবাছাই করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সাইফুল হক বলেন, ‘আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এখনই তার উপযুক্ত সময়। এখন অনেক আধুনিক প্রযুক্তি এসেছে। কাজেই এই সম্ভাবনাকে কাজে না লাগানো হবে বড় ভুল।’ একসময় জীবাশ্ম জ্বালানি (তেল-গ্যাস-কয়লা) শেষ হবে, তখন নবায়নযোগ্য জ্বালানিতেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বর্তমানে বাংলাদেশের কুতুবদিয়া ও ফেনীতে বায়ু বিদ্যুতের দুটি পাইলট প্রকল্প চালু আছে। কুতুবদিয়ায় এক মেগাওয়াট করে দুটি এবং ফেনীতে এক মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি কেন্দ্র রয়েছে।

 

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
সর্বাধিক পঠিত
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!