X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আজ বন্দরে ভিড়ছে এলএনজির জাহাজ

সঞ্চিতা সীতু
২৪ এপ্রিল ২০১৮, ১৩:০৭আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০১৮, ১৩:০৭

 

এলএনজি বাংলাদেশের উপকূলে আজ মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) দুপুর ২টা থেকে রাত ২টার মধ্যে যেকোনও সময়ে তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) রি-গ্যাসিফিকেশন (পুনরায় গ্যাসে রূপান্তর) ইউনিট প্রবেশ করবে। মহেশখালীর ভাষমান এলএনজি টার্মিনালে এলএনজি বহনকারী জাহাজটি নোঙর করবে। এরমধ্য দিয়ে আমদানি করা গ্যাস দিয়ে দেশের জ্বালানি সংকট নিরসনের দরজা খুলছে।

কাতার থেকে ইউনিটটি এক লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার এলএনজি নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশে গত ১৪ এপ্রিল ছেড়ে আসে। সোমবার জাহাজটি শ্রিলঙ্কা উপকূলে ছিল। তবে সাগরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে যাত্রায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। কাতারের আগে রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটটি দুবাই ছিল।

জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম সচিব জনেন্দ্র নাথ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রথমবার বলে ইউনিটটি গ্যাসভর্তি করে নিয়ে আসছে। পরে অন্য জাহাজ এসে গ্যাস দিয়ে যাবে। যা ইউনিটটিতে মজুদ রেখে সরবরাহ করা হবে।’

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ও বুয়েটের অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, ‘এলএনজির আমদানি বর্তমান সরকারের একটি বড় উদ্যোগ। এতে দেশের গ্যাস ঘাটতি কিছুটা হলেও কমবে। এখন পর্যন্ত যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশে প্রায় ২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি হবে। এতে গ্যাসের ঘাটতি যেমন পূরণ হবে, তেমনি গ্যাসের দামও সমন্বয় করতে হবে সরকারকে।’

জ্বালানি বিভাগ এবং পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে এলএনজি আমদানির চুক্তিতে বলা হয়েছে, ১৫ বছর ব্যবহারের পর বাংলাদেশের কাছে রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটটি হস্তান্তর করবে তারা। তখন এর মালিকানা থাকবে বাংলাদেশের কাছে। তবে এ ধরনের স্থাপনার অর্থনৈতিক আয়ু ২৫ বছর বিবেচনা করা হয়ে থাকে। সেই হিসেবে বাংলাদেশের আরও ১০ বছর ইউনিটটি ভালোভাবে ব্যবহার করার কথা।

তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা বলছেন, চুক্তিতে রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটের নির্মাণ নিয়ে এক ধরনের অস্পষ্টতা রয়েছে। এতে করে ২০০৫ সালে নির্মাণ করা একটি রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট বাংলাদেশে আনছে এক্সিলারেট এনার্জি। ইতোমধ্যে যার অর্থনৈতিক আয়ু ১৩ বছর পার হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এলএনজি আমদানি সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এখন প্রতিদিন ২ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়। আগামী দুই বছরে আরও অন্তত ২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে দেশের জ্বালানি সংকট সমাধানের সঙ্গে শিল্পায়ন বেগবান হবে। ইতোমধ্যে এলএনজি আসলে দেশের শিল্প কারখানায় গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জ্বলানি বিভাগ। তবে স্থলভাগে আর কোনও গ্যাস না পাওয়া গেলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে যাবে।

সাগরে অনুসন্ধান উত্তোলনের পরিকল্পনা ধরে কাজও শুরু হয়নি। এতে ২০২০ এর পর দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন ধীরে ধীরে কমতে থাকলে আবার সংকট দেখা দিতে পারে। যার সমাধান করতে আরও বেশি মাত্রায় জ্বালানি আমদানির দিকে সরকারকে ঝুঁকতে হবে। এতে মূল্যস্ফিতি বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সস্তায় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রাপ্তি থেকেই সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হবে। সেক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকির পরিমাণ বৃদ্ধি না করলে সাধারণ মানুষকে আন্তর্জাতিক বাজার দরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি কিনতে হবে। ইতোমধ্যে এলএনজি আমদানির শুরুতেই গ্যাসের দাম সমন্বয়ের কাজ শুরু করেছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ভবিষ্যৎ জ্বালানি সংকট সমাধানে দেশের মহেশখালী, মাতারবাড়ি, কুতুবদিয়া এবং পায়রা এলাকাতে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যেগ নিয়েছে সরকার। এলএনজি জাহাজ ভেড়ার জন্য ১৮ থেকে ২০ মিটার ড্রাফট প্রয়োজন হয়। কেবলমাত্র মহেশখালী মাতারবাড়ি এলাকায় বঙ্গোপসাগরের ছয় কিলোমিটার পরে এই ড্রাফট রয়েছে। পায়রা বন্দর এলাকায় ৩৫ নট্যিকাল মাইল বা ৫২ দশমিক ৫ কিলোমিটার দূরে সাগরের এই পরিমাণ ড্রাফট রয়েছে। সেক্ষেত্রে মহেশখালী এলাকায় সাগরের তলদেশ দিয়ে ৬ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করলে গ্যাস আনা সম্ভব। পায়রা এলকায় ড্রেজিং বা খনন না করা হলে ৫২ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণ করতে হবে। এক কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণে ১০ মিলিয়ন বা ১ কোটি ডলার প্রয়োজন হয়। যে কারণে পায়রাতে কোনও বিদেশি কোম্পানি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে রাজি হচ্ছে না।

সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে ৫ থেকে ১০ দিন লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা। সে হিসেবে মে মাসেই এলএনজি পৌঁছে যাবে গ্রাহকের কাছে। প্রথম পর্যায়ে চট্টগ্রামে এই গ্যাস সরবরাহ করা হবে।

এখন প্রতিদিন চট্টগ্রামে ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে দেওয়া হচ্ছে ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুট। চট্টগ্রামে সরবরাহ না করতে হলে এই ২৮০ মিলিয়ন অন্য জায়গাতে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। যাতে দেশে গ্যাসের ঘাটতি কিছুটা হলেও কমে আসবে।

এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই চুক্তি করে পেট্রোবাংলা। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি ইউনিট এলএনজি আবার রিগ্যাসিফিকেশন বা গ্যাসে রূপান্তর করতে ৪৯ সেন্ট করে দিতে হবে। এছাড়া সব ধরনের কর এক্সিলারেটরের পক্ষে পরিশোধ করবে পেট্রোবাংলা। যাতে এর পরিমাণ বেড়ে দাড়াবে ৫৬ সেন্ট। এলএনজি আমদানি করবে পেট্রেবাংলা। শুধুমাত্র রিগ্যাসিফিকেশন করে দেবে এক্সিলারেট।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল দেশীয় সামিট গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করে পেট্রোবাংলা। তাদেরও এ বছরের অক্টোবরে এলএনজি আনার কথা রয়েছে। এছাড়া রিলায়েন্স ও হংকং সাংহাই মানজালার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে রিলায়েন্স ২০১৯ সালের জুন মাসে এবং মানজালার ২০২০ সালের জুন মাসে এলএনজি আমদানির সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

/এআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদকর্মীদের প্রবেশে বাধা: উদ্বিগ্ন টিআইবি
বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদকর্মীদের প্রবেশে বাধা: উদ্বিগ্ন টিআইবি
আপাতত গরমেই খেলতে হচ্ছে সাবিনা-সানজিদাদের
আপাতত গরমেই খেলতে হচ্ছে সাবিনা-সানজিদাদের
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর যুবরাজ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর যুবরাজ
সর্বাধিক পঠিত
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন