X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুই বছরে দেড় লাখ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি

গোলাম মওলা
০৭ আগস্ট ২০১৮, ১৪:২২আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০১৮, ১৭:৪৪

সঞ্চয়পত্র ২০১৭-১৮ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) বিক্রি হয়েছে ৭৮ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। এর আগের অর্থবছরে ২০১৬-১৭ বিক্রি হয়েছিল ৭৫ হাজার ১৩৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ দুই বছরে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৯১৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। এদিকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ার কারণে গত অর্থবছরে সরকারের সুদ পরিশোধও বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্রের মূল ও মুনাফা বাবদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে শুধু মুনাফাই (সুদ) পরিশোধ হয়েছে ২০ হাজার দুই কোটি টাকা।

জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের মূল ও মুনাফা পরিশোধে ব্যয় হয়েছিল ২২ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে মুনাফা পরিশোধের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরে (২০১৭-১৮) সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেশি হয়েছে ৩ হাজার ৬৫০ কোটি টাকার।

এদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা, যা ঘাটতি বাজেট অর্থায়নে সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা (সংশোধিত) থেকেও দুই হাজার ৫৩০ কোটি টাকা বেশি। বিদায়ী অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৪ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য চলতি অর্থবছরে এই খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে ২৬ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা।

প্রসঙ্গত, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সুদ পরিশোধের জন্য রাখা হয়েছিল ৩৭ হাজার ৯২০ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যাংকের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বেশি হওয়ার কারণেই এর বিক্রি বেড়েছে। আর সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় সরকারের ঋণের বোঝাও বেড়ে গেছে।’

এর আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও বিভিন্ন সময় সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন। সর্বশেষ তিনি গত ২ আগস্ট ব্যাংক মালিক ও নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক করে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর কথা বলেন। তবে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কত হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ৮ আগস্ট অর্থমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করবেন। এর আগে গত ৩১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ফজলে কবিরও সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমানোর প্রস্তাব করেন।

সমাজের কোন শ্রেণির মানুষ সঞ্চয়পত্র কিনছেন তার কোনও পরিসংখ্যান নেই সঞ্চয় অধিদফতরের কাছে। তবে অন্য কয়েকটি সূত্র বলছে, স্বল্প আয়ের মানুষ ও পেনশনভোগীদের কাছে বিক্রি করার কথা থাকলেও বর্তমানে সঞ্চয়পত্র কিনছেন বিত্তবানরাই। এই তালিকায় রয়েছেন রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে বড় পদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।

জানা গেছে, তিন বছর ধরে ধরে সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ শতাংশের ওপরে রয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৫ সালে মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার গড়ে ২ শতাংশ করে কমানো হয়।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রতি মাসে গড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। অর্থবছরের শেষ মাস জুনে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে পাঁচ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকার। দুই মাস আগে অর্থাৎ মে মাসে ১০ হাজার ৯৩০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। সব মিলে গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭৮ হাজার কোটি টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে পরিবার সঞ্চয়পত্র।

জানা গেছে, মূলত দুটি কারণে সবাই সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছে। প্রথমত, গ্রাহকদের কাছে অর্থের উৎস জানতে চাওয়া হয় না। দ্বিতীয়ত, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার যেকোনও আমানতের সুদের হারের চেয়ে অনেক বেশি। তবে সঞ্চয় অধিদফতরের মহাপরিচালক শামসুন্নাহার বেগম মনে করেন, ‘সঞ্চয়পত্র যারা কেনেন, তারা সুদের হার ছাড়াও এখানে টাকা রাখাকে নিরাপদ ভাবেন।’ তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ১৮ বছরের বেশি বয়সী বাংলাদেশের যেকোনও সুস্থ নাগরিক সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন।

এদিকে, বেসরকারি ব্যাংকগুলো তিন মাস মেয়াদি আমানতের সর্বোচ্চ সুদের হার ৬ শতাংশ নির্ধারণ করার পর সঞ্চয়পত্রের প্রতি মানুষের আগ্রহ আরও বেড়েছে। অনেকেই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সঞ্চয়পত্র কিনে রাখছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২ কোটি।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাওয়ার কারণে তারা সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছে। তবে স্বল্প আয়ের মানুষ ও পেনশনভোগীদের চেয়ে এই খাতে বিনিয়োগ বেশি করছেন বড় পদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনীতিবিদ ও ধনী ব্যক্তিরা।’

আরও পড়ুন- কারা কিনছে সঞ্চয়পত্র?

/এফএস/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ