X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

মাসে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বিতরণ করতে পারছে না ব্যাংক

গোলাম মওলা
০২ অক্টোবর ২০২০, ২৩:০০আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২০, ১৮:৩৮

টাকা

মহামারি করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বড় ভূমিকায় রয়েছে দেশের ব্যাংকিং খাত। এই ব্যাংক খাত থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার সামান্য বেশি ঋণ পাচ্ছেন গ্রাহক। যদিও ব্যাংকের কাছে বর্তমানে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে এক লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এরমধ্যে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা নগদ রয়েছে ব্যাংকের কাছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত এই আট মাসে ব্যাংকগুলো মাত্র ৪৮ হাজার ৫২৪ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এরমধ্যে গত আগস্ট মাসে বিতরণ করেছে ৬ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জানুয়ারি ও জুলাই এই দুই মাসে নতুন ঋণ বিতরণের চেয়ে আদায় বেশি হয়েছে। ফলে এই দুই মাসে বিতরণ করা ঋণের পুঞ্জিভূত পরিমাণ  কমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা যায়, গত এপ্রিল মাসে ব্যাংকগুলো থেকে ব্যবসায়ীরা ৮ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন। যদিও এপ্রিল মাসজুড়েই অর্থনীতিতে স্থবিরতা ছিল। গত মার্চ মাসে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৭ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসে বিতরণ করেছে ৬ হাজার ৪২৬ কোটি টাকার ঋণ।  তবে আট মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ গত মে মাসে বিতরণ করা হয়। ওই মাসে ১৪ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা নতুন ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। পরের মাস জুনে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৭ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের শেষ মাস অর্থাৎ ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পুঞ্জিভূত পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৫৩ হাজার ১৫১ কোটি টাকা। ২০২০ সালের আগস্ট মাসের শেষে বিতরণ করা ঋণের পুঞ্জিভূত পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত আট মাসে ব্যাংকগুলোর খাতায় নতুন ঋণ যুক্ত হয়েছে মাত্র ৪৮ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে। আমরাও সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে টাকা যেহেতু জনগণের, সেহেতু দেখেশুনে দিতে হচ্ছে। ফলে কিছুটা সময় লাগছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা যায়, ২০২০ সালের প্রথম মাস অর্থাৎ জানুয়ারিতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ১০ লাখ ৫২ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই মাসে কোনও ঋণ বিতরণ করেনি ব্যাংকগুলো। বরং, বিতরণ করা ঋণ আদায় হয়ে সমন্বয় হয়েছে। পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে বিতরণ করা পুঞ্জিভূত ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। মার্চে এই সংখ্যা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১০ লাখ ৬৬ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা এবং এপ্রিল মাসে বিতরণ করা ঋণের পুঞ্জিভূত পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১০ লাখ ৭৫ হাজার ১১০ কোটি টাকা। মে মাসে এটি বেড়ে দাঁড়ায় ১০ লাখ ৮৯ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা। জুন মাসে বেড়ে দাঁড়ায় ১০ লাখ ৯৭ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। জুলাই মাসে এটি কমে দাঁড়ায় ১০ লাখ ৯৫ হাজার ২০১ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, জানুয়ারি মাসে পুঞ্জিভূত ঋণের পরিমাণ কমেছে ৬৭৮ কোটি টাকা। আর জুলাই মাসে কমেছে ২ হাজার ৭০ কোটি টাকা।

সর্বশেষ আগস্ট মাস শেষে পুঞ্জিভূত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা।

এদিকে করোনা প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে চাপ থাকলেও ব্যাংকগুলো দেখেশুনে ঋণ বিতরণ করছে বলে জানান বিভিন্ন ব্যাংকের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা। ব্যাংকের এমডিদের বক্তব্য হলো— বর্তমান পরিস্থিতিতে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সতর্ক থাকছে। যে কারণে করোনাকালে তারল্যের পরিমাণ বেড়ে গেছে রেকর্ড পরিমাণে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যও বলছে, ব্যাংকগুলোতে আমানত আসার প্রবণতা বাড়লেও সেভাবে বিনিয়োগ  করতে পারছে না। যদিও আমানতের সুদ হার ৬ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। কিন্তু নিশ্চিত মুনাফা ও নিরাপদে টাকা ফেরতের আশায় সাধারণ মানুষ ব্যাংকগুলোতেই টাকা রাখছে। এছাড়া এই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহও বেড়েছে। এই বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকের কাছ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক কিনে নিয়েছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার সমপরিমাণ নগদ টাকা ব্যাংকের হাতে এসেছে। এতে ব্যাংকগুলোর কাছে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।

এদিকে গ্রাহক যাতে সহজেই ঋণ নিতে পারে, সে জন্য শতাধিক নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গঠন করা হয়েছে প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল। কমানো হয়েছে ঋণের সুদহার। কিন্তু তবু বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ বাড়ছে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি বছরের আগস্টের শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের স্থিতি বেড়ে হয়েছে ১১ লাখ ১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের আগস্টে ঋণের স্থিতি ছিল ১০ লাখ ৭ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বেসরকারি খাতের ঋণ বেড়েছে ৯৪ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। জুলাই মাসে ঋণের স্থিতি ছিল ১০ লাখ ৯৫ হাজার ২০১ কোটি টাকা।

মহামারি করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় গত ৫ এপ্রিল বিভিন্ন খাতের জন্য ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘোষিত মোট এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের ৭৫ হাজার কোটি টাকার বেশি জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য বেশ কয়েকটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন এবং বিদ্যমান তহবিলের আকার বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর আওতায় ৫১ হাজার কোটি টাকার মতো তহবিলের জোগান পাচ্ছে ব্যাংকগুলো। এছাড়া সিআরআর দুই দফায় দেড় শতাংশ কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে আরও ১৯ হাজার কোটি টাকা নতুন করে ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করে ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি গত ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্যান্য সব ধরনের ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ বেঁধে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গরমে পথচারীদের মাঝে শরবত বিতরণ করছে ‘স্বপ্ন’
গরমে পথচারীদের মাঝে শরবত বিতরণ করছে ‘স্বপ্ন’
আ.লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা মঙ্গলবার
আ.লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা মঙ্গলবার
ভারতের মণিপুরে আবারও জাতিগত সহিংসতা
ভারতের মণিপুরে আবারও জাতিগত সহিংসতা
বাংলা গানের উন্নয়ন ও বিকাশে ‘অংশীজন সভা’
বাংলা গানের উন্নয়ন ও বিকাশে ‘অংশীজন সভা’
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু