X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্যাটেই মিলবে রাজস্ব, অথচ ভ্যাট বাড়াতে অনীহা

গোলাম মওলা
২৫ এপ্রিল ২০২৪, ২০:০৮আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ২০:০৮

নব্বইয়ের দশকে মূসক বা ভ্যাট চালুর যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল— তা বর্তমানে দেশের রাজস্ব আয়ের অন্যতম বড় উৎস বিবেচনা করা হয়। গত কয়েক বছর ধরে ভ্যাটের প্রবৃদ্ধিও ভালো। তবে দেশের অর্থনীতির তুলনায় অনেক তা কম। কারণ, অর্থনীতি যেভাবে বড় হচ্ছে, মানুষের আয় যেভাবে বাড়ছে— সেই গতিতে ভ্যাট তথা রাজস্ব আদায় বাড়ছে না। আর কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় না হওয়ার কারণে সরকারকে ঋণ করে বাড়তি খরচ মেটাতে হচ্ছে। এতে করে রাজস্ব আদায়ের তুলনায় সরকারের ঋণের বোঝা বেড়েই চলেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারের মোট পুঞ্জীভূত ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ ৯ লাখ ৭৪ হাজার ০৯২ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ ৬ লাখ ৮১ হাজার  ০৬৪ কোটি টাকা। তবে গত ডিসেম্বর মাসের শেষে বিদেশ থেকেই নেওয়া ঋণের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

ধারণা করা হচ্ছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের ঋণ-জিডিপি অনুপাত ৪০ শতাংশ অতিক্রম করতে যাচ্ছে। অথচ গত এক দশ ধরে রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত ৮ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। আর গত তিন বছরে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ প্রায় ৫০ হাজার টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলেছে, তিন বছর আগে মানুষের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দেড় লাখ টাকা।

এদিকে চলতি অর্থবছরের (ছয় মাসে) জুলাই-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ঋণের সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৫০ হাজার ২২৩ কোটি টাকা, যা ২০২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ছিল ৩৯ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশি-বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধে যে পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশকে খরচ করতে হচ্ছে, তা রাজস্ব আদায় ও অনুদানের ৭১ দশমিক ৮ শতাংশের সমান। চলতি অর্থবছরে তা বেড়ে ১০১ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।  আর বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ সালে সরকারের আদায় হওয়া রাজস্বের ২৬ শতাংশ ব্যয় হতো ঋণ পরিশোধে। অথচ এখন ঋণ পরিশোধে আদায় হওয়া রাজস্বের ৩৪ শতাংশ খরচ করতে হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কেবলমাত্র রাজস্ব আদায় বাড়ানোর মাধ্যমে এসব ঋণ পরিশোধজনিত চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব। এ ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই। বিশেষ করে ভ্যাট আদায়ে নজর দিলে দ্রুত এর ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে এনবিআরের সদিচ্ছা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারা বলছেন, প্রতিদিন লাখ লাখ দোকানদার, হাজার হাজার রেস্তোরাঁর মালিক ও বিভিন্ন পেশার মানুষ দৈনিক কোটি কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে। অর্থাৎ এই খাত থেকে আরও বেশি ভ্যাট আদায়ের সুযোগ রয়েছে। অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ বলছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনীহার কারণেই ভ্যাট আদায় বাড়ছে না। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের ‘যোগসাজশে’ প্রকাশ্যে ভ্যাট ফাঁকির ঘটনা ঘটছে।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভ্যাট আদায়ে গাফিলতির কারণে ঋণের বোঝা বাড়ছে।’ তিনি বলেন, ‘রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত অন্তত ২০-২২ শতাংশে উন্নীত করতে না পারলে সংকটের কোনও সমাধান হবে না। তবে

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চাইলে দ্রুত অর্থনৈতিক এই সংকট কেটে যাবে।’ এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, প্রতিদিন  অনেক বড় বড় রেস্তোরাঁ প্রকাশ্যে ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে। বেশিরভাগ খুচরা বিক্রেতা ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে। শুধু সুপারশপগুলো ঠিকঠাক মতো ভ্যাট দেয়। বাকি সব স্তরেই কমবেশি ভ্যাট ফাঁকি চলছে। এই ফাঁকি বন্ধ করতে পারলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘এই ভ্যাট বাড়ানোর ক্ষেত্রে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের আগে সৎ হতে হবে। তাদের মধ্যে সৃষ্ট অনীহা দূর করতে হবে। এনবিআরের অফসাইড সুপারভিশন বাড়াতে হবে। এনবিআরকে পুরোপুরি অটোমেশনে যেতে হবে। কাশলেস সিস্টেমে  যেতে হবে। সবকিছুর আগে ঘুষ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে পৃথক কর্মকর্তা দিয়ে সুপারভিশন, পৃথক কর্মকর্তা দিয়ে মনিটরিং ও পৃথক কর্মকর্তা দিয়ে অডিট করাতে হবে।’

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এনবিআর ঠিক হলে সরকারের অর্থনৈতিক সব সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে। বৈদেশিক ঋণের ও অভ্যন্তরীণ ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপও কমে আসবে। তিনি আশা করেন, আইএমএফের চাওয়াকে কেন্দ্র করে যে সংস্কার শুরু হয়েছে, তার সুফল কিছুদিন পর পাওয়া যাবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, আগামী অর্থবছরে ভ্যাট আদায় খুব বেশি না বাড়লেও ২০২৬-২৭ অর্থবছরে বড় পরিবর্তন আসতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আইএমএফের ঋণের শর্ত পূরণে এখন এনবিআরে নানা ধরনের সংস্কার হচ্ছে। এর সুফল আগামী দু-এক বছরের মধ্যে পাওয়া যাবে।’

তিনি বলেন, ‘বাড়তি রাজস্ব আদায়ের জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেশকিছু খাতে নতুন করে ভ্যাট আরোপ করার পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে ভ্যাটের হার বাড়তে পারে।’

এর আগে চলতি বছরের শুরুর দিকে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) এক গবেষণায় বলা হয়, করের পরিধি বাড়ানো ও ব্যক্তিগত আয়ের ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্সের মাধ্যমে কর-রাজস্ব আদায় দুই শতাংশ পয়েন্ট বাড়াতে পারলে বাংলাদেশ অতিরিক্ত ৬৫ হাজার কোটি টাকা কর-রাজস্ব পাবে।  এর ফলে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত দাঁড়াবে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। একইসঙ্গে দুর্নীতি কমানো, অটোমেশন, করছাড় হ্রাসের কথা বলেছে পিআরআই। এ ছাড়া ভ্যাট আইনের মূল দর্শন অনুসারে ভ্যাট হার ১৫ শতাংশে রাখার পক্ষে মত দিয়েছে সংস্থাটি।

এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘রাজস্ব আদায় কম এবং ঋণ বেশি নেওয়ার ফলে বাজেটের ওপর চাপ হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার কারণে বিনিয়োগের গতি কমে গেছে। আবার বিদেশি ঋণ বেশি নেওয়ার কারণে সুদাসল পরিশোধ করতে গিয়ে বিদেশি মুদ্রা চলে যাচ্ছে। ফলে অর্থনীতির ভারসাম্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই পরিস্থিতি নিরসনে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর বিকল্প আর কিছু নেই।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, গত এক দশকে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বেড়েছে চার গুণ। দেখা যাচ্ছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জিডিপির আকার ছিল ৭ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকায়। তবে অর্থনীতি বড় হওয়ার পুরো সুফল ঘরে তুলতে পারেনি এনবিআর। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার ৩ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছিল সংস্থাটি। এরপর  গত ১০ বছরে তা বেড়ে  সোয়া ৩ লাখ কোটি টাকা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে  বলেন, ‘ঋণের চাপ কমাতে অবশ্যই রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘মানুষের আয় বাড়ছে, অর্থনীতি সম্প্রসারিত হচ্ছে, সেইভাবে রাজস্ব আদায়ও বাড়ার কথা, কিন্তু সরকার কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব পাচ্ছে না।’

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ভ্যাট আদায় বেড়েছে ১৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এই ৯ মাসে এক লাখ ৭০২ কোটি টাকা আদায় করলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এনবিআর ভ্যাট আদায় কম করেছে ৪ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, সম্ভাবনাময় বেশ কয়েকটি খাত থেকেও কাঙ্ক্ষিত হারে ভ্যাট আসছে না।

পরিসংখ্যান বলছে, গত ১০ বছরের মধ্যে কোনও বছরই এনবিআর তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। ২০১৩-১৪ অর্থবছর ছাড়া অন্য কোনও বছরে সংশোধিত লক্ষ্যও অর্জন করতে পারেনি এই সংস্থাটি।

একাধিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায় আদায়যোগ্য ভ্যাটের ৯০ শতাংশই ফাঁকি হয়। বর্তমানে খুচরা ব্যবসায় ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ। দোকানের খুচরা ব্যবসা থেকে বছরে মাত্র পাঁচ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট আদায় হয়— যেখানে প্রতিবছর অন্তত পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব। এছাড়া  হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে ভ্যাট ফাঁকি বন্ধে এনবিআর কঠোর হলে এই খাত থেকে অন্তত তিন গুণ বেশি ভ্যাট পাওয়া সম্ভব। এর বাইরে  অভিজাত শপিং মলগুলোতে শত শত প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। কর ফাঁকির কৌশল হিসেবে বছরের পর বছর কম মূল্যে জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি হচ্ছে। সারা দেশে প্রকাশ্যে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ রোগীর কাছ থেকে ডাক্তাররা ভিজিট নিচ্ছেন।

এনবিআরের এক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে মোট আদায়কৃত ভ্যাটের ৪৭ শতাংশ পরিশোধ করেছে মাত্র ১১০ প্রতিষ্ঠান। অথচ সারা দেশে ভ্যাট প্রদানে সক্ষম প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫০ লাখের বেশি। অর্থাৎ বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই ভ্যাট দিচ্ছে না। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে ১০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে এমন ১১০টি প্রতিষ্ঠান— মোট আদায়কৃত ভ্যাটের ৪৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ পরিশোধ করেছে। বড় মাপের এসব প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ৫৮ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। অথচ এনবিআরের ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩ লাখ ৮০ হাজার। এর মধ্যে ভ্যাট রিটার্ন জমা দিয়েছে এক লাখের বেশি প্রতিষ্ঠান।

এই ১১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সিগারেট, মোবাইল ফোন, ওষুধ, ব্যাংক, গ্যাস, বিদ্যুৎ বিতরণ, কোমল পানীয়, সাবান, সিমেন্ট ও পানি সরবরাহকারী, এমএস রড, বাণিজ্যিক স্থান ভাড়া, মিষ্টি, আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট খাতের প্রতিষ্ঠান বেশি।

শুধু গত অর্থবছরে নয়, এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরেও বড় মাপের ১১০টি প্রতিষ্ঠান আদায়কৃত ভ্যাটের প্রায় ৫৩ শতাংশ পরিশোধ করেছে, যার পরিমাণ ৫২ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে মোট আদায়কৃত ভ্যাট ছিল ১ লাখ ৩০০ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরেও বড় মাপের এসব প্রতিষ্ঠান মোট আদায়কৃত ভ্যাটের প্রায় ৫২ শতাংশ পরিশোধ করেছে, যার পরিমাণ ৪৮ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে ভ্যাট খাতে মোট আদায় হয়েছিল ৯৩ হাজার কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ভ্যাট আদায় হয়েছে ৮৪ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। সে বছরেও বড় মাপের ১১০ প্রতিষ্ঠান দিয়েছে ৪২ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট আদায়কৃত ভ্যাটের প্রায় ৫০ শতাংশই দিয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান।

এনবিআরের তথ্য অনুসারে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ভ্যাট এসেছে সিগারেট খাত থেকে। এর পরিমাণ ৩২ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা, যা তার আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। এরপর মোবাইল ফোন কোম্পানি ভ্যাট দিয়েছে ৯ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা।

সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা ভ্যাটযোগ্য প্রতিষ্ঠান ৫০ লাখ— জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতাকালে এমন তথ্য দিয়েছিলেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।  স্বচ্ছভাবে ভ্যাট আদায়ে সারা দেশে আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, ফাস্টফুডের দোকান, মিষ্টির দোকান, আসবাবপত্রের বিক্রয় কেন্দ্র, পোশাক বিক্রির কেন্দ্র, বুটিক শপ, বিউটি পার্লার, ফ্রিজ, টেলিভিশন, মোবাইল ও মোবাইলের যন্ত্রাংশ বিক্রির দোকান, গৃহস্থালিসামগ্রী বিক্রির কেন্দ্র, অলংকার বিক্রির কেন্দ্রসহ আরও ১১টির বেশি ব্যবহৃত খাতে ইএফডি (ইলেকট্রিক ফিসক্যাল ডিভাইস) যন্ত্র ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গত ছয় বছর থেকে সারা দেশের বিক্রয় কেন্দ্রে ইএফডি যন্ত্র সরবরাহের কথা থাকলেও এখনও এ বিষয়ে এনবিআর সফলতা দেখাতে পারেনি।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, তিন দশক আগে ভ্যাট ব্যবস্থা চালু করা হলেও এখনও সঠিকভাবে ভ্যাট আদায় ও সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে না।  অভিযোগ আছে, বাংলাদেশে ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করলেও অনেকেই তা সরকারি কোষাগারে জমা করেন না।

মূলত কোনও পণ্য বা সেবার সর্বশেষ ভোক্তা বা ক্রেতাই সেই পণ্য বা সেবার মূসক দাতা। আর এই মূসক সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার দায়িত্ব বিক্রেতার।

১৯৯১ সালে ভ্যাট ব্যবস্থা চালুর পর ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে ভ্যাট খাতে ১ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা আদায় হয়েছিল। এরপর থেকে রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ ‘হাতিয়ার’ হিসেবে ভ্যাটকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরে মুল বাজেটে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি আদায় করা হবে পণ্য ও সেবা খাতের ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক থেকে।

আগামী অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বাজেটে ব্যয় পরিকল্পনা করছে অর্থ বিভাগ। এতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়— ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেশি। এরমধ্যে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত আয় ধরা হয় ৫০ হাজার কোটি টাকা। কর আদায়ের মধ্যে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত  খাত থেকে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং এনবিআর-বহির্ভূত খাত থেকে আদায় হবে ২০ হাজার কোটি টাকা।

আরও পড়ুন:

টাকা উড়ছে রেস্তোরাঁয়, নজর নেই এনবিআরের

দোকান থেকেই বছরে ২ লাখ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় সম্ভব

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
তীব্র গরমে ক্রেতা সংকট, বন্ধ ফুটপাতের বেশিরভাগ দোকান
তামাক কর বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ তরুণের অকালমৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব
টাকা উড়ছে রেস্তোরাঁয়, নজর নেই এনবিআরের
সর্বশেষ খবর
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
‘ফাইভ স্টার’ ম্যানসিটি, চার গোল হাল্যান্ডের
‘ফাইভ স্টার’ ম্যানসিটি, চার গোল হাল্যান্ডের
ঢাকায় পুনর্মিলন সেরে ক্যাঙ্গারুর দেশে...
ঢাকায় পুনর্মিলন সেরে ক্যাঙ্গারুর দেশে...
সর্বাধিক পঠিত
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
এডিবি কর্মকর্তা গোবিন্দ বরের বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনদের হয়রানির অভিযোগ
এডিবি কর্মকর্তা গোবিন্দ বরের বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনদের হয়রানির অভিযোগ