X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিমা খাতে অবৈধ ক্যাশ লেনদেন জনপ্রিয়

গোলাম মওলা
১৯ এপ্রিল ২০১৬, ০৭:২৩আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০১৬, ০৭:২৮

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ দেশের বিমা খাতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অবৈধ ক্যাশ বা নগদ প্রিমিয়াম লেনদেন। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ৫ হাজার টাকার বেশি প্রিমিয়াম নগদ লেনদেনকে অবৈধ ঘোষণা করে ২০১২ সালে। কিন্তু কোনও কোম্পানিই এই নির্দেশনা মানছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বিমা কোম্পানিগুলো প্রিমিয়াম থেকে যে পরিমাণ অর্থ আয় করে তার অর্ধেকেরও বেশি আসে নগদ বা ক্যাশ প্রিমিয়াম থেকে। যদিও বিমা খাতে অনিয়ম কমাতে ২০১২ সালে প্রিমিয়াম নেওয়ার ক্ষেত্রে নগদ লেনদেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি  করে আইডিআরএ। আইডিআরএ থেকে ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে বলা হয়, ৫ হাজার টাকার বেশি প্রিমিয়াম হলে বীমা কোম্পানিকে অবশ্যই ডিডি, পে-অর্ডার, ক্রেডিট অ্যাডভাইস, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার এবং অ্যাকাউন্টপেয়ি চেকের মাধ্যমে তা গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই নির্দেশনা মানছে না কোম্পানিগুলো।
আরও পড়ুন: মাস্টার্সের কার্যক্রম থেকে জবির ৩ শিক্ষককে অব্যাহতি

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের সূত্র মতে, ২০১৪ সালে সাধারণ বিমা খাতে কোম্পানির প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ ২ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি আয় হয়েছে ক্যাশ বা নগদ লেনদেনে। দেশে নন লাইফ বা সাধারণ বিমা কোম্পানি রয়েছে ৪৬টি। এর মধ্যে প্রিমিয়াম আদায়ে হরদম নগদ বা ক্যাশ লেনদেন করছে প্রগতি, মেঘনা, বাংলাদেশ ন্যাশনাল, এশিয়া, রিপাবলিক, ইস্টল্যান্ড, ইসলামী কমার্শিয়াল, ইউনাইটেড, রূপালী, সেন্ট্রাল, নিটল, ক্রিস্টাল, ফিনিক্স, পিপলস, গ্রিন ডেল্টা, পাইওনিয়ার, অগ্রণী, গ্লোবাল, প্রাইম, কন্টিনেন্টাল, প্যারামাউন্ট, রিলায়েন্স, বাংলাদেশ জেনারেল, সিটি জেনারেল, মার্কেন্টাইল, তাকাফুল ইসলামী ও জনতা ইন্স্যুরেন্স। এছাড়া বাকি ১৮ কোম্পানিও নগদ বা ক্যাশ লেনদেন করছে।

কয়েকটি বিমা কোম্পানির প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,তারা আইডিআরএ’র নির্দেশনা অমান্য করেই প্রিমিয়ামের টাকা নগদে বা ক্যাশে লেনদেন করছেন। এক্ষেত্রে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের এক ধরনের অলিখিত সর্মথন রয়েছে। যদিও ক্যাশ প্রিমিয়াম বা অবৈধ নগদ লেনদেন বাড়ার কারণে গ্রাহক ও কোম্পানির মধ্যে দেখা দিচ্ছে অবিশ্বাস। বাড়ছে গ্রাহক হয়রানি।ঘটছে নতুন নতুন অনিয়ম।

আরও পড়ুন: ফের রাজধানীতে মায়ের হাতে শিশুপুত্র খুন

এ প্রসঙ্গে মার্কেন্টাইল ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমিনুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কোম্পানিগুলো যে পরিমাণ প্রিমিয়াম আয় করে তার প্রায় অর্ধেক আসে ক্যাশ লেনদেনের মাধ্যমে। তার কোম্পানিও ক্যাশে লেনদেন করছে স্বীকার করে তিনি বলেন,প্রিমিয়াম নেওয়ার ক্ষেত্রে ক্যাশ প্রথা বন্ধ করা গেলে এই খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি অনেকাংশে কমে আসবে।তিনি বলেন, অনেক গ্রাহক আছেন যারা ক্যাশ দিতে চান,আবার অনেক কোম্পানিও আছে ক্যাশ নেওয়াতে সাচ্ছন্দবোধ করে। এতে গ্রাহক কম টাকার প্রিমিয়াম দিয়ে বেশি টাকা ভাউচার বা রশিদ নেন। আবার পলিসি বাড়াতে কোম্পানিগুলো নির্ধারিত হারের চেয়ে কম টাকায় পলিসি করে দেয়। তিনি বলেন,এই খাতের দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে প্রিমিয়াম নেওয়ার ক্ষেত্রে নগদ লেনদেন একেবারে বন্ধ করতে হবে। আইডিআরএ এ বিষয়ে যে নির্দেশনা জারি করেছে, তা মানতে হবে। সেই নির্দেশনা মানা হলে দুর্নীতি অনেক কমে আসবে।আমিনুর রহমান বলেন,প্রিমিয়ামের টাকা ক্যাশ আকারে নিলে কোনও ডকুমেন্টও থাকে না। এতে গ্রাহক ও কোম্পানির মধ্যে এক ধরনের অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়।

এ প্রসঙ্গে  এনআরবি গ্লোবাল ইন্সুরেন্সের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক খবির উদ্দিন রেজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,সত্যি কথা বলতে কোম্পানিগুলো বাধ্য হয়েই ক্যাশে লেনদেন করে। তার কোম্পানিও নগদ বা ক্যাশ টাকায় প্রিমিয়াম নিচ্ছে স্বীকার করে তিনি বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্রাহক ডিডি, পে-অর্ডার বা চেকের মাধ্যমে প্রিমিয়াম দিতে চান না। আর প্রিমিয়াম জমা না হলে পলিসি বন্ধ হয়ে যাবে। পলিসি বন্ধ হয়ে গেলে কোম্পানি লোকসানে পড়বে। তিনি জানান, প্রিমিয়ামের টাকা পেতে গ্রাহককে একাধিকবার তাগাদা দিতে হয়। তারপরও অনেকে সময়মতো প্রিমিয়ামের টাকা জমা দেন না।আর যারা জমা দেন,তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নগদে বা ক্যাশ জমা দেন। তিনি বলেন,কোম্পানিগুলো ৫০ শতাংশ প্রিমিয়াম পায় নগদে।

সূত্র জানায়,বিমা এজেন্টদের কমিশনের হার নির্ধারণ, জরিপকারীদের মাশুল ও অন্যান্য খরচাদি পুনঃনির্ধারণ,সেন্ট্রাল রেটিং কমিটির সুপারিশক্রমে ট্যারিফ রেট নির্ধারণ এবং বীমা ব্যবসা সংক্রান্ত ত্রৈমাসিক বিবরণী কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিমা এজেন্ট ব্যতীত অন্য কাউকে প্রিমিয়ামের ওপর শতকরা হারে পারিশ্রমিক প্রদান না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ কোম্পানি এইসব নির্দেশনা মানছে না।

বিমা খাতে শুধু যে অবৈধ নগদ লেনদেন হচ্ছে তা নয়, এই খাতে নানাভাবে চলছে হরিলুট। গত মাসে বীমা মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, একটি অনিয়ন্ত্রিত শিল্প হিসেবে বেড়ে উঠেছে দেশের বিমা খাত। এ খাতে এখনও নৈতিকতার ঘাটতি রয়েছে। অবশ্য কয়েক মাস আগে তিনি আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম. শেফাক আহমেদকে বীমা খাতের ‘হরিলুট’ বন্ধের চিঠি দিয়েছেন। নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষও সর্বশেষ বছর অনিয়মের কারণে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের লাইসেন্স বাতিল করেছে। এছাড়াও  মেঘনা, বাংলাদেশ ন্যাশনাল, এশিয়া, রিপাবলিক, ইস্টল্যান্ড, মার্কেন্টাইল, তাকাফুল ইসলামী, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ও জনতা ইন্স্যুরেন্সসহ ২৮ কোম্পানিকে আর্থিক জরিমানা করেছে।

এ প্রসঙ্গে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান এম. শেফাক আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় ৭৫ শতাংশ কম লোকবল নিয়ে পুরো বিমা খাত নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। তিনি বলেন,অনেক কিছু করার থাকলেও লোকবলের অভাবে করা যাচ্ছে না।

জিএম/এমএসএম/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!