X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

মাস্টার্সের কার্যক্রম থেকে জবির ৩ শিক্ষককে অব্যাহতি

জবি প্রতিনিধি
১৮ এপ্রিল ২০১৬, ১৩:৩১আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০১৬, ১৮:২০

রাজীব মীর, বর্ণনা ভৌমিক ও প্রিয়াঙ্কা স্বর্ণকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মীর মোশারফ হোসেন (রাজীব মীর), বর্ণনা ভৌমিক ও প্রিয়াঙ্কা স্বর্ণকারকে বিভাগের মাস্টার্স শ্রেণির একাডেমিক ও অন্যান্য কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দিয়ে অফিস আদেশ জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত মঙ্গলবার রাজীব মীরসহ তিন শিক্ষককে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত মাস্টার্সের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. সেলিম ভূঁইয়া বলেন, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে শিক্ষক রাজীব মীরের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন, অনৈতিক প্রস্তাব, হুমকি প্রদানসহ নানা বিষয়ে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, তদন্ত কমিটি নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। তিন সপ্তাহের মধ্যে এ কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-ব্যাংক রিজার্ভ লোপাটে জড়িত ২০ বিদেশি শনাক্ত

রাজীব মীর ছাড়া অন্য দুই শিক্ষক বর্ণনা ভৌমিক ও প্রিয়াঙ্কা সরকারকেও অব্যাহতি দেওয়া কারণ তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, রাজীব মীর অভিযোগকারী এক ছাত্রীকে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘তার কথা না শুনলে ওই দুই শিক্ষকও তাকে নম্বর কম দেবে। এইসব কথোপকথনের মোবাইল রেকর্ডিং তদন্ত কমিটির হাতে রয়েছে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা যাতে কোনও রকম ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে দিক বিবেচনা করেই এই তিন শিক্ষককে সাময়িক অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। তবে তদন্ত কমিটি কাজ করছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এই কমিটিই দেবে।’

এর আগে ২০১৪ সালের ৬ এপ্রিল নিয়মিত ক্লাস না করা, ছাত্রীদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়ানো, জঙ্গিবাদের মদদ দেওয়াসহ নানা অভিযোগ এনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজীব মীরকে অপসারণ করার দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছিলেন।

অন্যদিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ায় ২০০৪ সালের ২৯ মার্চ রাজীব মীরকে তার তৎকালীন কর্মস্থল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলে ছাত্রীরা অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ‘দখলদার’ ছাত্রদলের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগও ছিল।

রাজীব মীরের  বক্তব্য

মাস্টার্সের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত শিক্ষক মোশারেফ হোসেন (রাজীব মীর) পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করে জানান, গত ১১ এপ্রিল বিভাগের অ্যাকাডেমিক সভায় আমরা তিনজন শিক্ষক বর্ণনা ভৌমিক, প্রিয়াঙ্কা স্বর্ণকার এবং আমি বিভাগের সভাপতির কাছে জানতে চেয়েছিলাম, বিভাগে নবীনবরণ হলো কিন্তু কোনও কমিটি গঠন করা হয়নি কেন, কোনও অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি কেন?   তিনি আমাদের প্রশ্নের কোনও জবাব দেননি। এ সময় একটি ফোনকল আসলে তিনি বাইরে চলে যান।

এরপরই মাস্টার্স শ্রেণির অ্যাকাডেমিক এবং অন্যান্য  কার্যকক্রম থেকে অব্যাহতির আদেশনামা আসে।  এতে ভিসির পক্ষে রেজিস্ট্রার  স্বাক্ষর করেছেন। আদেশে বলা হয়েছে, মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায়  অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

১২ এপ্রিল এ ব্যাপারে আমরা ভিসি স্যারকে আমরা চিঠি দেই। চিঠিতে আমরা বলেছি, আমরা কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছি। কারণ, আদেশনামায় কোন শিক্ষার্থী কি অভিযোগ করেছে তার উল্লেখ নেই। আমাদের বিষয়ে কোনও কমিটি হয়েছে কিনা আমরা তাও জানি না। কমিটি আমাদের ডেকে সাক্ষাৎকারও নেয়নি।এটা একতরফাভাবে করা হয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয় আইনের পরিপন্থী।এরপর ভিসি স্যারের নির্দেশে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৭দিন পর কমিটি রিপোর্ট দেবে।  ৭দিন এখনও শেষ হয়নি।

রাজীব মীর বলেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি একজন জামায়াতপন্থী। আমার বিরুদ্ধে নারী ঘটিত বিষয় এনে এখন ঘটনা সাজানো হচ্ছে। এগুলো সব মিথ্যে। মূলত ডিপার্টমেন্টে আমাকে চেয়ারম্যানশিপ না দেওয়ার চক্রান্ত। 
বর্ণনা ভৌমিকের বক্তব্য

এদিকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিক্ষক বর্ণনা ভৌমিক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তিনি ১১ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অব্যাহতির অফিস আদেশ পেয়েছেন। বর্ণনা বলেন, ' সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, একজন শিক্ষার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে বিয়য়টি প্রাথমিকভাবে সঠিক বলে প্রতীয়মান হয়েছে। অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আমাকে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে সাময়িকভা অব্যাহিত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, অভিযোগ কী সেটাই জানানো হয়নি।'

বর্ণনা বলেন, 'চিঠি পাওয়ার পর আমি তার একটি উত্তর দিই। সেখানে জানতে চাই, অভিযোগ কী, অভিযোগকারী কে, তদন্ত কমিটি কবে গঠিত হলো। চিঠিতে বলেছি, তদন্ত কমিটির কোনও সদস্য আমার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেনি। আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। এরপর আজ আবার একটি চিঠি এসেছে। সেখানে জানানো হয়েছে, আমাকে তদন্ত কমিটি তলব করেছে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে আমি এখনও জানি না, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ কী। চিঠির মাধ্যমেই আমি এই ঘটনা জেনেছি। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ কী, তা আজ পর্যন্ত জানি না। জানি না অভিযোগকারী কে।'

বর্ণনা আক্ষেপ করে বলেন, 'আমিতো একজন নারী। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের লিঙ্গীয় সমতা নিয়ে পড়াই আমি। সবসময় নারীর জন্য সমতা নিশ্চিত করার মনের মধ্যে ধারণ করেই আমি বড় হয়ে উঠেছি। আমার পক্ষে এই অভিযোগ হজম করা সত্যিই খুব কষ্টের।'

 

আরও পড়ুন: স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্তের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে

/আরএআর/এসটি/এজে/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বৃষ্টিতেই কাটলো ওয়াসার পানির সংকট
বৃষ্টিতেই কাটলো ওয়াসার পানির সংকট
টিভিতে আজকের খেলা (৭ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৭ মে, ২০২৪)
খুলনায় আড়াই ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরে জলাবদ্ধতা
খুলনায় আড়াই ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরে জলাবদ্ধতা
রৌমারীতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ওপর প্রতিপক্ষের হামলা
রৌমারীতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ওপর প্রতিপক্ষের হামলা
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস