X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

মজিদের এই দেশে মামুনরাই ‘ঠিক আছে’

শেগুফতা শারমিন
১০ জুলাই ২০১৮, ১১:২২আপডেট : ১০ জুলাই ২০১৮, ১৬:০৯

শেগুফতা শারমিন ‘খট খট খট…’।  শব্দটা কি চেনা চেনা লাগছে? না, ঠিক খট খটও নয়। এমন আওয়াজ তো হয় দেয়ালে  হাতুড়ি ঠুকলে। মানব শরীরে হাতুড়ি ঠোকার শব্দটা আরেকটু অন্যরকম। আবার আবহতে আছে মানুষের আর্তচিৎকার। সব মিলে একটা ‘কমপ্লিট মিউজিক্যাল শো’। ‘হরর মিউজিক’। ২০১০ সালের বিশ্বকাপের সময় শাকিরার ‘ওয়াকা ওয়াকার’ সুর শব্দ যেমন মগজে গেঁথে গিয়েছিল। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে একইভাবে আমার মস্তিষ্কে গেঁথে গেছে হাতুড়ি আর মানুষের যৌথ যন্ত্রসংগীত। মুক্তি পাই না। সাদাসিধা মানুষেরা প্রেসক্রিপশন দেয়, ফুটবল খেলা দেখার। মন বসে না অথবা মন ঘোরে না। মন পড়ে থাকে সত্যিকারের সাধারণ গেঁয়ো ছেলেমেয়েগুলোর কাছে। তরিকুল আর ফারুকের কাছে। মন পড়ে থাকে মরিয়মের কাছে।
প্রতিবার এদের কথা মনে পড়ে আর প্রতিবার ছোট হয়ে যাই। নিজের কাছে নিজেকে এতটুকু কীটপতঙ্গ মনে হয়। নিজের অক্ষমতাকে উপলব্ধি করি। কিছু করতে পারি না। ওদের জন্য আমার বা আমাদের আসলে কিছু করার থাকে না। শুধু অস্থিরতায় ভোগী। কাউকে দেখাতে পারি না। হাঁসফাঁস করি। কানের ভেতর আহাজারি চলে। মগজের কোষে কোষে হানা দেয় হাতুড়ির ঘা।

বোকা ছেলেগুলো, বোকা মেয়েগুলো কেন স্রোতে ভাসে না? কেন ওরা মামুন না হয়ে তরিকুল হয়ে যায়? কেন ওরা ‘উন্নয়নের জয়যাত্রায়’ ছিদ্র খুঁজে পায়? কেন ওরা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে পথে নামে? কেন ওরা ন্যায্যতা চায়? কেন ওরা সমতার প্রত্যাশী? তরিকুল বলে, নুরু বলেই ওরা ঠিক থাকে না। কোথাও বেঠিক থাকলে, ওরা ঠিক করতে অনুরোধ করে, দাবি জানায়।  মামুন হলে ওরা ঠিক থাকতো। মামুনদের জীবন নিশ্চিত, ওদের চাকরি নিশ্চিত, ব্যবসায় নিশ্চিত, পাহাড় সমান সম্পদ নিশ্চিত। উচ্চশিক্ষিত যোগ্যতাসম্পন্ন বউও নিশ্চিত। এই নিশ্চিত জীবন তরিকুলরা, নুরুরা দেখে নাই। এরা দেখে মেধাবীদের বঞ্চিত হতে থাকা। এরা দেখে বাবার হালের গরু বেচে, ক্ষেতের জমি বেচে পড়তে আসার ফলাফল অনিশ্চিত। ভালো রেজাল্ট করেও নিশ্চিত নয় ভবিষৎ। এদের নিজস্ব শিক্ষা সনদের ওজন কমে যায়, পিতা বা পিতামহের একটি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির কাছে। যে স্বীকৃতি বা সনদ কতজনের সঠিক, কতজনের ভুয়া। রাষ্ট্র তা নিশ্চিত জানে না।

চারদিকে ইদানীং মনে হয় সব লালসালুর মজিদ। মজিদ যেমন ধর্মের দোহাই দিয়ে সবকিছু বৈধ করে নিত। মনগড়া ধর্মের ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে নাজেহাল করতো। আধুনিক বাংলাদেশ আসলে এখন মজিদের বাংলাদেশ। এখানে কথায় কথায় নাজেহাল। এখানে লাল চশমায় না দেখলেই অবৈধ। টিকে থাকতে চাও লাল চশমায় দেখ, প্রশ্ন করো না। প্রশ্ন করলেই তুমি দেশদ্রোহী। তুমি ঠিক নাই।

অথচ হাতুড়ি পিটিয়ে মানুষ মারলেও কেউ ঠিক আছে। শহীদ মিনারে, সিএনজির ঘুপচিতে, থানার অফিসে মেয়েদের গায়ে হাত বুলালেও তুমি ঠিক আছো। হাসপাতাল থেকে মুমূর্ষু আহত ছেলেগুলোকে বের করে দিলেও তুমি ঠিক আছো। কারণ, তুমি স্রোতে ভাসতে পারো। তুমি অন্ধের মতো হাতি দেখতে পারো। তুমি চেতনার লালসালু বিছিয়ে পুরো দেশ ইজারা নিতে পারো। তরিকুল, ফারুকরা যখন কাতরায় যন্ত্রণায়, তুমি তাই দাম্ভিকভাবে বলতে পারো, ‘আমি ঠিক আছি’। তোমার পাশে থাকে রাষ্ট্রযন্ত্র। তোমার পাশে থাকে সকল সাদাসিধা বুদ্ধি বিক্রেতা।

তোমাদের ‘ঠিক থাকা’ দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। ভোররাতেও ঘুম ভাঙে, ভ্রমে শুনি দূর থেকে ভেসে আসা গোঙানির আওয়াজ। ঠিক থাকতে পারি না। কোনোমতেই ঠিক থাকা যায় না। আমি ঠিক নাই। আপনি ঠিক আছেন কি?

লেখক: উন্নয়নকর্মী

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
থাইল্যান্ড সফর একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীথাইল্যান্ড সফর একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে
‘গরমে অসুস্থ’ হয়ে মারা যাওয়া সেই শ্রমিকের পরিবারের পাশে জেলা প্রশাসন
‘গরমে অসুস্থ’ হয়ে মারা যাওয়া সেই শ্রমিকের পরিবারের পাশে জেলা প্রশাসন
ওমরাহ করতে স্ত্রীসহ সৌদি আরব যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল
ওমরাহ করতে স্ত্রীসহ সৌদি আরব যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল
ঢাকার অধস্তন আদালতগুলোতে এসি লাগাতে আইনি নোটিশ
ঢাকার অধস্তন আদালতগুলোতে এসি লাগাতে আইনি নোটিশ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ