X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমেরিকার বিপদ আপাতত কেটেছে

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী
২৬ নভেম্বর ২০২০, ১৪:৪৫আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২০, ১৫:১৭

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসীদের দেশ। আমেরিকার প্রাচুর্যের কথা শুনে দলে দলে ইউরোপ থেকে লোক গিয়ে বসতি স্থাপন করেছিল আমেরিকায়। শুধু যে ইউরোপ থেকে লোক গিয়ে বসতি করেছে তা নয়, বিশ্বের অন্যান্য মহাদেশ থেকেও প্রচুর লোক গিয়ে বসতি স্থাপন করেছে। তবে ইউরোপ থেকেই এসেছিল বেশি। কারণ, তখন ইউরোপের বিভিন্ন শক্তির অধীনে ছিল আমেরিকার বিভিন্ন অংশ। আমেরিকায় ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গরাই বেশি। তারাই আমেরিকার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী।
১৩টি রাজ্য নিয়ে যেদিন আমেরিকাকে তার স্থপতিরা গঠন করেন সে থেকে এখন পর্যন্ত তারাই নিরবচ্ছিন্নভাবে দেশটা শাসন করে আসছেন। ব্যতিক্রম শুধু একজন বারাক হোসেন ওবামা। কেনেডিরা জার্মান থেকে যাওয়া, বুশেরা আয়ারল্যান্ড থেকে যাওয়া অভিবাসীদের সন্তান। সব অভিবাসী এক চিন্তাচেতনার মানুষ হতে পারে না, সে কথা চিন্তা করেই স্থপতিরা শাসনতন্ত্র রচনা করেছিলেন। যে কারণে ১৮৬০ সালের গৃহযুদ্ধ ছাড়া আর কোনও বড় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়নি রাষ্ট্রটি। অথচ অভিবাসীর দেশ হিসেবে কলহ লেগে থাকাই স্বাভাবিক ছিল।
২০২০ সালের ৩ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর পরাজিত প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতে যাওয়া প্রার্থী ডেমোক্রেট দলীয় জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানাননি এবং পরাজয়ও স্বীকার করেননি। অভিনন্দন জানানো এবং পরাজয় স্বীকার করা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রীতিনীতি, এটা কোনও শাসনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতা নয়। ট্রাম্প রীতিনীতি না মেনে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সৌন্দর্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন, কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তরের পথে তেমন কোনও বাধা সৃষ্টি করেননি। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট শপথগ্রহণের দিন অর্থাৎ ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত কিছু কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকেন, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে সহযোগিতা করে থাকেন।
এবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওভার অ্যাক্টিংয়ে বিভ্রান্ত হয়ে জেনারেল সার্ভিসেস সহযোগিতা প্রদানে এগিয়ে যেতে কিছুটা বিলম্ব করেছে। জেনারেল সার্ভিসেসের প্রধান এমিলি মারফিকে নিয়োগ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কিন্তু মিশিগানের ফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশের পরপরই জো বাইডেনের বিজয় চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার ফলে জেনারেল সার্ভিসেস এখন বিলম্বে করতে আর পারে না। তাই জেনারেল সার্ভিসেস-এর প্রধান এমিলি মারফি নিজেই উদ্যোগী হয়ে বাইডেনের টিমকে চিঠি লিখেছেন এবং তাদের বরাবরে খরচ চালানোর জন্য ৬৩ লক্ষ ডলার অবমুক্ত করেছেন। এখন এমিলি মারফি বিলম্ব করলে শাসনতন্ত্র ভঙ্গের অপরাধের অপরাধী হবেন। সুতরাং তিনি নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের টিমকে চিঠি লিখেছেন। ট্রাম্প বলছেন, তিনি তার অনুমতি এমিলিকে প্রদান করেছেন। ট্রাম্পের অনুমতির কথা এমিলি স্বীকার করেননি।
আমেরিকার শাসনতন্ত্র সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট নির্বাচনের, শপথগ্রহণের দিন তারিখ শাসনতন্ত্রেই সুস্পষ্ট লিখা রয়েছে। সুতরাং এমিলির অসহযোগিতা শাসনতন্ত্রের বাধ্যবাধকতা পালনে কোনও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে এখানে এমিলি নিজেই দায়ী হবেন সে কারণেই তিনি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের টিমকে চিঠি লিখেছেন আর খরচের জন্য ৬৩ লাখ ডলার অবমুক্ত করেছেন। বাইডেন এখন প্রতিদিন আন্তর্জাতিক হুমকি এবং নানা বিষয়ের তথ্যের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং দায়িত্বভার গ্রহণের কাজে এই তহবিল থেকে ব্যয় করবেন। ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরুর পক্ষে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্মতি দিয়েছেন বলে এখন থেকে সর্বোচ্চ গোপনীয় বা টপ সিক্রেট গোয়েন্দা তথ্য পেতে শুরু করবেন জো বাইডেন।
এখন রিপাবলিকান নেতৃবৃন্দও আর কোনও বাড়াবাড়িতে যুক্ত থাকার কথা নয়, তারাও শাসনতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নেবেন। এতদিন ট্রাম্প যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন তাও অকার্যকর হয়ে যাবে। কারণ, ৪৪টি মামলা হয়েছে, ট্রাম্প-পক্ষ কারচুপির কোনও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনতে পারেনি। আদালত সব অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন। তারপরও ট্রাম্প এখনও পরাজয় মেনে নিতে রাজি নন।
মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট জো বাইডেন তার নতুন প্রশাসনের জন্য ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মকর্তাদের নাম ঘোষণা করেছেন। ‘আমেরিকা ঘুরে দাঁড়িয়েছে’, এই ঘোষণা দিয়ে তিনি বলছেন, ‘বিশ্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নয়, বরং বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত’। বিশ্ব পরিবেশ রক্ষায় আমেরিকাকে আগের অবস্থানে নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছেন বাইডেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এবং ওবামার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক দূত করেছেন। প্যারিস জলবায়ু সমঝোতার অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন জন কেরি, যে চুক্তি থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে গিয়েছিলেন। ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতা চুক্তিতেও ভূমিকা রেখেছিলেন কেরি।
বাইডেন আমেরিকায় বসবাসরত আন-ডকুমেন্টেড প্রায় ১২ মিলিয়ন লোককে নাগরিকত্ব দেওয়ার অঙ্গীকারও পুনরায় ব্যক্ত করেছেন। মন্ত্রিসভায়ও বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছেন। তার নতুন ঘোষিত নিয়োগ অনুমোদন পেলে এভ্রিল হাইনেস হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের প্রথম নারী পরিচালক। আলেহান্দ্রো মায়োর্কাস হবেন প্রথম ল্যাটিনো হোমল্যান্ড সিকিউরিটি প্রধান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ওবামা আমলের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনকে। ব্লিনকেন বলেছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র খুব শিগগিরই নম্রতা এবং আস্থার সঙ্গে সমতার সম্পর্ক গড়ে তুলবে।
আমেরিকায় বর্ণবাদ খুবই সক্রিয় ছিল, কিন্তু এই বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বহু আন্দোলন হয়েছে। ২০০৮ সালে যখন বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন, তখন বিশ্ববাসী মনে করেছিলেন আমেরিকায় বর্ণবাদের অবসান হয়েছে। কিন্তু ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প বর্ণবাদকে উপজীব্য করে নির্বাচন করেছিলেন এবং জিতেছিলেন। গত চার বছর তিনি বর্ণবাদকে তৃণমূল পর্যায়ে সক্রিয় করেছেন এবং সমাজকে বিভক্ত করেছেন। জো বাইডেন নির্বাচিত হয়েছেন সত্য, কিন্তু এ বিভক্তিকে শেষ করে সমাজকে পুনরায় একত্রিত করা বেশ কঠিন হবে। এছাড়া আমেরিকা টিকে থাকা খুবই কষ্টকর হবে। ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি নতুন টেলিভিশন, রেডিও গড়ে তুলবেন তার বর্ণবাদী আদর্শ প্রচার করার জন্য। আমেরিকার সুশীল সমাজকে তা সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করতে হবে।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক
[email protected]

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
হারিয়ে গেছে প্রাণ, নদীর বুকে বুনছে ধান
হারিয়ে গেছে প্রাণ, নদীর বুকে বুনছে ধান
টিভিতে আজকের খেলা (৬ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৬ মে, ২০২৪)
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ