X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৮ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতিতে ভুল করার সুযোগ কম

আবদুল মান্নান
০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:১৬আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:২১

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে রাজনীতি সবসময় একটি কৌশলের খেলা। সেই খেলায় অনেক সময় ভুল করার খুব বেশি সুযোগ থাকে না। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে তার ফলাফল হতে পারে সুদূরপ্রসারী। ১৯৪৭ সালের পর এই দেশে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচনের জন্য। তখন কেন্দ্রে ও বিভিন্ন প্রদেশে ক্ষমতায় মুসলিম লীগ যাদের নেতৃত্বে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৪৯ সালে গঠিত হয় আওয়ামী মুসলিম লীগ। মনে করা হতো যে দলটির নেতৃত্বে পাকিস্তান সৃষ্টি সেই মুসলিম লীগকে পরাজিত করা অনেকটা স্বপ্ন বিলাস। পূর্ব বাংলায় মুসলিম লীগের নেতা প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিন।  কিন্তু বাঙালি এমন একটা জাতি যারা ঐতিহাসিকভাবে কখনও পরাজয় মানেনি। তখন বাঙালির নেতা বলতে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী আর মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। মিলিত হলেন বাঙালির এই তিন নেতা।

নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত করতে হবে পাকিস্তানের কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহলের সব ষড়যন্ত্র। শহিদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা। অন্যদিকে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক কৃষক প্রজা পার্টির সভাপতি। এর মধ্যে প্রথম দুজন অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী (মুখ্যমন্ত্রী) ছিলেন। মাওলানা ভাসানী সবসময় মেহনতি মানুষের রাজনীতি করেছেন, কখনও ক্ষমতার রাজনীতি করেননি। তারাই মিলিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে লড়াই করে নির্বাচনে জিততে হলে তা করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। তারা সঙ্গে নিলেন তুলনামূলক বাম ঘরানার ছোট দল গণতন্ত্রী পার্টিকে। গঠিত হলো যুক্তফ্রন্ট। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন পারবে কি বাঙালির এই যুক্তফ্রন্ট পাকিস্তানের পরাক্রমশীল মুসলিম লীগের সঙ্গে লড়াই করতে?

তখন নির্বাচন পরিচালনার জন্য কোনও নির্বাচন কমিশন ছিল না। নির্বাচন পরিচালনা করা হতো প্রশাসনের মাধ্যমে। প্রশাসনে সব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি পশ্চিম পাকিস্তানের। তিন বাঙালি চষে বেড়ালেন সারা বাংলা। ভোট চাইলেন যুক্তফ্রন্টের মার্কা নৌকা প্রতীকে। নির্বাচনে ফলাফল ইতিহাস পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। প্রাদেশিক পরিষদের ৩০৯টি আসনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থীরা বিজয়ী আর মুসলিম লীগের ভাগ্যে মাত্র ৯টি আসন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। যে মুসলিম লীগের জন্ম এই বাংলায় সেই মুসলিম লীগের মৃত্যু হলো এই বাংলায়।

১৯৭০-এর নির্বাচনের আগে পাকিস্তানের সেনা শাসক ইয়াহিয়া খান ঘোষণা করলেন এই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ হবে একটি গণপরিষদ, যাদের একমাত্র দায়িত্ব হবে পাকিস্তানের জন্য একটি সংবিধান রচনা করা। সেই সংবিধান ইয়াহিয়া খানের পছন্দ না হলে তিনি সংসদ ভেঙে দেবেন। একটি গেজেটের মাধ্যমে তাঁর এই সিদ্ধান্ত প্রকাশ করা হয়। সবাই বঙ্গবন্ধুকে বললেন এমন একটা ঝুলন্ত খড়গ মাথার ওপর নিয়ে এই নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে না। বঙ্গবন্ধু সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে কখনও ভুল করেনি। তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, নির্বাচনে জয়ী হতে পারলে তিনি ইয়াহিয়া খানের এই নির্দেশনা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ছুড়ে ফেলবেন। সেই নির্বাচনে পাকিস্তানের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল মাওলানা ভাসানীর ন্যাপ বয়কট করে। সেই ন্যাপ এখন ইতিহাস।

শেষ হলো দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। এর আগে স্বাধীন বাংলাদেশে আরও ১১টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে কিন্তু এই নির্বাচনকে নিয়ে যত রকমের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক  ষড়যন্ত্র ছিল, অতীতে তেমনটা দেখা যায়নি। ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি এবারও দাবি করে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে তারা কোনও নির্বাচনে অংশ নিবে না। তাদের দাবি অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফিরিয়ে এনে তার অধীনে নির্বাচন করতে হবে। আরও দাবি নির্বাচন কমিশন ও সংসদ ভেঙে দিতে হবে। অনেকটা মামা বাড়ির আবদারের মতো। ২০১৪ সালে বিএনপি তাদের দাবি আদায়ে সারা দেশে এক ভয়াবহ সন্ত্রাস সৃষ্টি করে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায় ৫৫২ নিরীহ মানুষ। নির্বাচনের আগের দিন অগ্নিসংযোগ করা হয় ৫৫০টি স্কুলে, যেগুলো নির্বাচন কেন্দ্র হওয়ার কথা ছিল। ২৭টি ট্রেনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এফবিসিসিআইএ’র হিসাব অনুযায়ী দেশের ৬.৫ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছিল বিএনপি’র সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার জন্য বেগম জিয়া সামরিক কায়দায় তার গুলশানস্থ কার্যালয়ে একটি কমান্ড সেন্টার খুলেছিলেন। একজন সাংবাদিক তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন তার এই সন্ত্রাসনির্ভর কর্মসূচি দলের জন্য কি বয়ে আনলো? উত্তরে তিনি জানালেন ‘জনসমর্থন’! ‘জনসমর্থন’ আদায়ে এমন অদ্ভুত কর্মকাণ্ডের নজির বিশ্বের আর কোথাও আছে বলে জানা নেই।

২০১৮-এ বিএনপি যখন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তখন বেগম জিয়া দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে কারারুদ্ধ। দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন বেগম জিয়ার দণ্ডপ্রাপ্ত ও লন্ডনে পলাতক তারেক রহমান, যার একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দেওয়ার তেমন কোনও যোগ্যতা আছে বলে জানা যায় না। তারেক অর্থ ছাড়া আর কিছু তেমন একটা বুঝে  না। দুর্নীতিসহ নানা অপরাধে তারেক রহমানের মোট ৭৮ বছর সাজা হয়েছে। তার দুর্নীতির কাহিনি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তার দেশে ফেরা অনেকটা অনিশ্চিত। তেমন একজন ব্যক্তি বিএনপি’র মতো একটা রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে থাকলে কি হতে পারে তা সহজে অনুমেয়। বিএনপিতে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্য মানুষ আছে, কিন্তু তাদের সেই সুযোগ কখনও দেওয়া হবে না। কারণ, তারেক রহমান কখনও চাইবে না তার পিতার প্রতিষ্ঠিত দলের নেতৃত্ব পরিবারের বাইরে কারও হাতে যাক। দলের অনেক সিনিয়র নেতা তার হাতে প্রায়শ অপমানিত হন বলে দলের অনেকই বলে থাকেন।

২০১৪ সালে বিএনপি নির্বচনে অংশ নিলে তাদের পক্ষে সরকার গঠন করা হয়তো সম্ভব হতো না, কিন্তু ১০০ আসনে জয়ী হওয়াটা অসম্ভব ছিল না। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল দলের নিবন্ধন বাঁচানো আর মনোনয়ন বাণিজ্য। সেবার প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থীর কাছে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হয়েছে এবং সেই সুবাদে কয়েক শত কোটি টাকা লন্ডনে পাচার হয়েছে বলে সাধারণের ধারণা। সেই নির্বাচনে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ দলের ছয়জন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন। বিজয়ী হয়েও মির্জা ফখরুল তারেকের নির্দেশে শপথ নেননি। কারণ, এটি তারেকের কাছে মোটেও সুখকর কোনও বিষয় ছিল না যে তাকে দেখতে হবে মির্জা ফখরুল সংসদে বিএনপি’র সংসদীয় দলের নেতার দায়িত্ব পালন করছেন।

সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ সংসদে নির্বাচনে বিএনপি তো অংশগ্রহণ করেইনি। তারা নানা সব অদ্ভুত কায়দায় তা বানচাল করতে চেয়েছে। তবে এবার তাদের পূর্বের বানচাল করার সঙ্গে যোগ হয়েছে নাশকতা। যেভাবে যাত্রীবাহী ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে তার নজির কোনও সভ্য দেশে হতে পারে না। এবার বিএনপি হয়তো এত বেপরোয়া হতো না যদি তারা একটি দেশের প্রশ্রয় না পেতো। বাংলাদেশে সেই দেশের রাজদূত বিএনপি’র পক্ষ নিয়ে যেভাবে দৌড়ঝাঁপ করেছে তা সব আন্তর্জাতিক রীতিনীতির সম্পূর্ণ বরখেলাপ। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূত এক সামাজিক অনুষ্ঠানে আমাকে বলেছিলেন বিএনপি তাদের সব কর্মসূচি পরিচালনা করার জন্য ওই দেশ থেকে আর্থিক সহায়তাও পেয়ে থাকে। এবার বিএনপি’র মাথা নষ্ট করেছে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কিছু স্বঘোষিত বামপন্থি দল ও কতিপয় সুশীল ব্যক্তি। এদের খপ্পর হতে বের হয়ে বিএনপি যদি এবারও নির্বাচনে অংশ নিতো তাহলে তাদের সম্মানজনক আসনে বিজয়ী হওয়াটা অসম্ভব ছিল না।

৭ তারিখের নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। নির্বাচনের দিন বিএনপি ও তাদের মিত্ররা শুধু হরতালই ডাকেনি, ডেকেছিল গণকারফিউ। তারপরও ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গেছে, ভোট দিয়েছে। যদিও একাধিক কেন্দ্রের ভোট নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ আছে। একাধিক জায়গায় সহিংসতা হয়েছে। সেসব অভিযোগ খতিয়ে দেখার সুযোগ ও দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। একটি দলীয় সরকারের অধীনেও যে তুলনামূলক সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব  তা প্রমাণিত হলো। তার জন্য চাই সরকারের সহযোগিতা। প্রয়োজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা। প্রায় চার কোটি ভোটারের একটি নির্বাচন একশত ভাগ সুষ্ঠু হবে তা আশা করা সমীচীন নয়। এত বিশাল কর্মযজ্ঞ কোনও উন্নত দেশেও হয় না।

এবারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার জন্য ১১টি দেশের ৩৫ জন পর্যবেক্ষক সারা দিন বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে বেড়িয়েছেন। এ ছাড়া ছিল বিভিন্ন দেশের একাধিক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব,  দূতাবাসের কর্মকর্তা আর ছিল এই দেশের গণমাধ্যম। দিন শেষে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা সংবাদ সম্মেলন করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন তাদের মতে সুষ্ঠু হয়েছে এবং তারা নির্বাচন নিয়ে সন্তুষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

অনেকে মনে করেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি নিজের পায়ে নিজেই গুলি করেছে। সেই ক্ষত থেকে সেরে ওঠার একমাত্র উপায় তাদের কান্ডারি পরিবর্তন করা। দেশে গণতন্ত্রে বিকাশের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু ধারার একাধিক রাজনৈতিক দল। বিএনপি’র পক্ষে এদের একটি হওয়া সম্ভব যদি তারা তাদের দলের আমূল সংস্কার করতে পারেন। প্রয়োজন বিদেশিদের ওপর নির্ভরতা পরিহার করা। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করবে তখন দলের সভাপতির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ গতবারের কিছু ভুল হতে শিক্ষা নিয়ে একটি গতিশীল মন্ত্রিসভা গঠন করা। যেসব মন্ত্রী অযোগ্যতার প্রমাণ দেয় তাদের দ্রুত বরখাস্ত করা, যেমনটি সিঙ্গাপুরে করা হয়। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে সমাজের ক্যানসার দুর্নীতি দূর করা সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধু এই ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন, তবে তেমন একটা সফল হতে পারেননি। তাঁর কন্যা পারবেন এমন বিশ্বাস মানুষের আছে।

সব শেষে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কিছু খুত থাকলেও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন শেষ করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন। আরও অভিনন্দন প্রাপ্য দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। সরকারের সহায়তা না পেলে কোনও নির্বাচন সুষ্ঠু করা সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা আবারও প্রমাণ করলেন, তিনি সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম, যেমনটি তাঁর পিতা নিতে পারতেন।

লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শ্রমিকরাও অংশীদার হবে: এমপি কামাল
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শ্রমিকরাও অংশীদার হবে: এমপি কামাল
মোস্তাফিজের শেষ ম্যাচে চেন্নাইয়ের হার
মোস্তাফিজের শেষ ম্যাচে চেন্নাইয়ের হার
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ