X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শফিক রেহমানের প্রশ্ন : বাংলা ট্রিবিউন টাকা দেয়?

আনিস আলমগীর
১৪ মে ২০১৬, ১৬:৪৮আপডেট : ১৪ মে ২০১৬, ১৭:২২

আনিস আলমগীর ফোনটা করেছিলাম আমি। গত ১১ এপ্রিল, ২০১৬। শফিক রেহমান ভাইকে টক শোতে আমন্ত্রণ জানাতে। পহেলা বৈশাখ নিয়ে টক শো, এশিয়ান টিভিতে।  ‘টেবিল টক’ অনুষ্ঠানে। যদিও আমরা রাজনীতি নিয়েই বেশিরভাগ কথা বলি,  চেয়েছিলাম একটু ভিন্ন মাত্রা থাকুক সেদিন।
শফিক রেহমানকে চাচ্ছিলাম, কারণ তিনি ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছেন বাংলাদেশে, ১৪ এপ্রিলকেও আমরা কী করে আরও সমৃদ্ধভাবে উদযাপন করতে পারি, সেটা শোনা তার মুখ থেকে। এর অবশ্য নেপথ্য কারণও আছে। তিনি আমাকে নিয়ে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান করতে চেয়েছিলেন বিটিভিতে। সময়টা ২০০৩ সাল। আমি ইরাক যুদ্ধের সংবাদ কাভার করে দেশে ফিরেছি মাত্র। প্রথমে বিটিভি থেকে তার ‘লাল গোলাপ’-এর প্রযোজক ফোন করে জানালেন। বিস্তারিত শুনে আমি রাজি হলাম না। পরপরই শফিক ভাইয়ের ফোন। তার প্রযোজকের মতোই তিনি আশ্চর্য হয়েছেন আমার ‘না’ শুনে। কারণ বিটিভি তখনও জনপ্রিয়তা হারায়নি। আমার সঙ্গে তার সম্পর্কও খারাপ নয়। সে কারণে ‘না’ শোনাটা অস্বাভাবিক ছিল বটে।
শফিক রেহমান যখন এরশাদের পতনের পর দেশে এলেন তার নিষিদ্ধ যায়যায়দিন প্রকাশ করতে, তখন বিমানবন্দরে গিয়েছিলাম আমি। আমি তখন দৈনিক দেশের স্টাফ রিপোর্টার। এয়ারপোর্টে সাক্ষাৎকার নিলাম আমি। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা টাইপ হ্যাট-স্যুট পরা শফিক রেহমানকে স্বাগত জানাতে সেদিন বিমানবন্দরে আরও গিয়েছিলেন সাপ্তাহিক পূর্বাভাসের সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু ও সাংবাদিক আমিনুর রশীদ। ছিলেন বিচিন্তার ফজলুল বারী ও আক্কাস মাহমুদ। পরদিন দৈনিক দেশে আমার আর তার ছবি দিয়ে লিড নিউজ ছিল ‘এরশাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে ঢাকায় এসেছি : শফিক রেহমান’।
আমি ‘লাল গোলাপ’ বা বিশেষ অনুষ্ঠানটিতে কেন অংশগ্রহণ করতে পারব না ব্যাখ্যা দিতে হয়েছিল। এর কারণ তিনি বা বিটিভি নয়। আসল কারণ ছিল আমার পাশে তিনি যাকে বসাতে চেয়েছিলেন, তার বিষয়ে আমার এলার্জি আছে। সব সময় ফটকামি করে নাম কামাতে চান ওই ব্যক্তি, যিনি আবার একটা চটি পত্রিকার স¤পাদকও। আমি বললাম আপনি যদি উনাকে রাখতে চান তাহলে ‘অমুক’ সাংবাদিককেও রাখেন। শফিক ভাই রাজি হলেন না। কারণ ওই সাংবাদিকের পত্রিকা তখন খালেদা জিয়া সরকারের চক্ষুশূল। আমি বললাম, তাহলে আপনি যাকে রাখতে চাচ্ছেন সেই স¤পাদককে নিয়েই অনুষ্ঠান করুন। তিনি পাল্টা বললেন, না তুমি না এলে আমি অনুষ্ঠানটি করব না।

আরও পড়তে পারেন: অনলাইন সাংবাদিকতায় নতুন যুগের সূচনা করেছে বাংলা ট্রিবিউন
আমি শুনেছি, শফিক ভাই এরপর আমার সম্পর্কে ধারণা রাখতেন, আমার নাক উঁচু। যায়যায়দিন যখন সাপ্তাহিক থেকে প্রচুর ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে দৈনিক হচ্ছিল তার এক সহকর্মী আমাকে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তিনি নাকি বলেছিলেন, ‘ও আসবে না। ওর ফুটানি বেশি।’ একবার এক আত্মীয় অন্যায়ভাবে বিপদে পড়ায় তার যায়যায়দিনের কাজ করেন এমন এক হাওয়া ভবনের দালালের কাছে যেতে হয়েছিল। কারণ তখনকার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে দিয়ে সেই দালালই আমার আত্মীয়কে জেলে ঢুকিয়েছিলেন। ব্যর্থ হয়ে যখন অফিস থেকে নামছিলাম, তখন শফিক ভাই সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলেন। আমার একটি হাত তার বগলে আটকিয়ে চিরচেনা হাসিমুখে বললেন, ‘এই লোকটিকে তো আমি চিনি। আমার অফিসে এসে আমার সঙ্গে দেখা না করে কী করে চলে যাবে?’ তারপর নিজের রুমে বসিয়ে
নিজের হাতে কফি বানিয়ে খাইয়েছেন। তার ও তালেহা ভাবীর সঙ্গে যখনই দেখা হয়েছে, তারা আমার সাক্ষাৎকারটির কথা স্মরণ করতেন।
আমি সব সময় চেয়েছিলাম তার সঙ্গে টিভিতে না যাওয়ায় আমার সম্পর্র্কে তার ‘ফুটানি’বিষয়ক যে ধারণা আছে, তা কাটাতে। কিন্তু সাংবাদিকতার বাইরে এসে যে রাজনৈতিক ধারা তিনি গ্রহণ করেছিলেন, তাতে বছরের পর বছর আমাদের  দেখা হয়নি বললেই চলে। কারণ যে গোষ্ঠীর সঙ্গে তিনি উঠাবসা করেন, সেখানে আমাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। তবে যেখানেই পেতাম, তার লেখা পড়তাম।
গল্পের সঙ্গে চমৎকার করে কৌতুক উপস্থাপনের যে গুণ আমি তার মধ্যে দেখি, সেটি দ্বিতীয় কারও মধ্যে পাইনি। তার মতো বাংলা ভাষায় স্যাটায়ার লেখকও আমার চোখে পড়ে না, যতই সেটা আমার বিরুদ্ধ মত বা তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হোক। শুধু অবাক হই, যার লেখা পড়ে আমাদের প্রজন্ম লিখতে অনুপ্রাণিত হলো, সেই লোকটি কী করে এতটা বিপরীত মেরুতে যেতে পারে!

আরও পড়তে পারেন: শুভেচ্ছা প্রিয় বাংলা ট্রিবিউন
ফোনে উদ্দেশ্য শোনার আগেই শফিক রেহমান বললেন, তোমার খবর কী? লেখালেখি কী ছেড়ে দিয়েছ টিভিতে ঢুকে? আমি বললাম, না তো নিয়মিতই লিখছি। আমি  তো লেখা বন্ধ করিনি কখনও। তিনি অনুযোগ করেন, আমি তো দেখি না। বুঝলাম তিনি যতই আধুনিক মানুষ হোন না কেন, অনলাইনে বোধহয় কমই থাকেন। বললাম কোনও পত্রিকায় লিখি না, এখন সে কারণে দেখেন না।
পত্রিকায় লিখলে ছাপা হতে হতে লেখা বাসি হয়ে যায়। টাকা-পয়সারও কোনও পাত্তা নেই। আমি অনেক কষ্ট করে লিখি। টাকার জন্যও লিখি। তাই এখন শুধু অনলাইনে লিখি। বাংলা ট্রিবিউনে লিখছি নিয়মিত। প্রতি সপ্তাহে। আপনি বোধ হয় পড়েন না। এরপরই তিনি বাংলা ট্রিবিউন সম্পর্কে ধারণা নিলেন। প্রশ্ন করলেন, ওরা কি টাকা দেয়? আমি শুধু বললাম, দেয় না! বাসায় এসে দিয়ে যায়। তিনি আশ্চর্য হলেন বলে মনে  হলো। বলো কী? আমি তো ‘তমুক’নিউজ ডটকমে অনেক লিখেছি। ওরা তো আমাকে কলামের জন্য কোনও টাকা দেয়নি!  বললাম, প্রতি মঙ্গলবার আমি লিখি, দেখবেন। তার স্যাটায়ার মিস করছি জানিয়ে বললাম, আপনি এখন কোথায় লেখেন? শফিক ভাই জানালেন, অনিয়মিত নয়া দিগন্তে লেখেন। দুই-এক দিনের মধ্যে একটি যাবে। আমি যেন দেখি। আমি দেখেছি। মধুর ক্যান্টিনের মধুকে নিয়ে তিনি চমৎকার একটা লেখা লিখেছেন। তবে আমার লেখা দেখবেন বললেও তিনি যে দেখতে পাননি, সেটা নিশ্চিত বলতে পারি। কারণ ততদিনে তিনি গ্রেফতার হয়েছেন সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যার একটি ষড়যন্ত্র মামলায়। নিজের লেখাটিও ছাপার অক্ষরে দেখতে পারেননি।
পুনশ্চ: আমার টক শোতে শফিক রেহমান আসতে আগ্রহী হননি। যে কারণ তিনি দেখিয়েছেন এবং প্রাসঙ্গিক আরও যেসব কথা তিনি ফোনে বলেছেন সেটা আমাদের একান্তই থাক। কারণ ওনার বিরুদ্ধে এখন বড় ধরনের একটা মামলা চলছে। শুধু এটুকু বলবো, একজন নেত্রীকে অপছন্দ করার বাতিক একজন তুমুল জনপ্রিয় এবং জ্ঞানী সাংবাদিককে কতটা লাইনচ্যুত করতে পারে— তার সেদিনের কথায় তাই মনে হয়েছে। তারপরও আমি তার লেখা পড়তে চাই। মুক্তি চাইব। খুব খুশি হবো যদি শফিক রেহমান নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে জেল থেকে বেরিয়ে আসেন।
লেখক: সাংবাদিক ও শিক্ষক

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ