X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কলঙ্কের দায় সবার

গোলাম মোর্তোজা
০৬ জুলাই ২০১৬, ১২:৫৪আপডেট : ০৬ জুলাই ২০১৬, ১৩:০৭

গোলাম মোর্তোজা একজন সাধারণ সাংবাদিক হিসেবে 'লিখতে পারছি না বা লেখা আসছে না' - বড় লেখকদের মতো বলার সুযোগ থাকে না। লিখতে হয়, লিখতে হবে। চেষ্টা করতে গিয়ে দেখছি, লিখতে পারছি না। গত কয়েকদিন প্রায় কিছুই লিখিনি। দেশ-বিদেশ থেকে অনেকে জানতে চাইছেন, কেন লিখছি না?
কী করে লিখব!
এত বড় গুলশান ট্র্যাজেডির পরও কোনও বোধদ্বয় হলো না। আবার ক্রসফায়ারে হত্যা করা হলো মিতু হত্যার সন্দেহভাজন দুই জনকে!
তদন্ত নেই, নেই কোনও অনুশোচনা। মিথ্যার সংস্কৃতি আমাদের এমনভাবে জাপটে ধরেছে যে, সত্যের কাছাকাছিও পৌঁছতে পারছি না। ৬ জন জঙ্গি ২৮ জন মানুষকে হত্যা করলো। ১৬ কোটি মানুষ তা তাকিয়ে দেখলাম। তারাই জীবিত ফিরে এলেন, যাদেকে জঙ্গিরা গলা কেটে হত্যা করলো না। এর মধ্যেই আইএস ভিডিও বার্তায় বাংলা -আরবি -ইংরেজিতে পুনরায় হামলার হুমকি দিয়েছে।
যুদ্ধাপরাধের বিচার করছেন, মানুষ সমর্থন করছে। জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছেন, মানুষ সমর্থন করছে না। একদিকে রক্তাক্ত হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট, আরেক দিকে 'সাফল্যে'র গল্প। কার দায়, কার ব্যর্থতা, কার সাফল্য -কোনও প্রশ্নের উত্তর নেই। সর্বত্র গোঁজামিল।
১. গুলশান ট্র্যাজেডির পর কিছু প্রসঙ্গ স্বচ্ছভাবে সামনে এসেছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি বিষয়, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা। একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে কেউ কেউ হইচই করে উঠতে পারেন। গোস্বা করতে পারেন। আমেরিকা-ইউরোপের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীও সব সমস্যা সমাধান করতে পারে না। পারে না সব আক্রমণ ঠেকাতে। বাংলাদেশের পুলিশ সব আক্রমণ ঠেকিয়ে দেবে, তেমন কিছু প্রত্যাশা করছি না। তা বিবেচনায় নিয়েই লিখছি। লেখা দরকার মনে করে লিখছি।
ক. আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ চোর- ডাকাত- ছিনতাইকারী- সাধারণ সন্ত্রাসী -রাজনৈতিক ক্যাডার -হত্যাকারী... ধরায় পারদর্শী। যদি রাজনৈতিক সরকার তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়, এসব ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন নেই।
খ. পুলিশের যোগ্যতা, দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন আছে জঙ্গিবাদ বিষয়ে। শুরুতে জঙ্গিবাদ যেমন ছিল, তা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা পুলিশের ছিল। এখন জঙ্গিবাদ যে জায়গায় পৌঁছেছে, তা বোঝা বা নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা পুলিশের নেই।
গ. ওসি সালাহউদ্দিন, এসি রবিউলের মর্মান্তিক মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তা প্রমাণ হয়েছে। তাদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন নেই। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বোঝার সক্ষমতা নিয়ে বড় প্রশ্ন আছে। সাধারণ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মনে করে একজন এসআই প্রথমাবস্থায় যেভাবে সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিরোধ করতে গিয়ে আহত হয়েছেন, তা অবশ্যই প্রশংসার। জঙ্গিরা এসআই ও তার সঙ্গে থাকা চারজন পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। পুলিশও গুলি করে জবাব দিয়েছে। জঙ্গিরা ভেতর থেকে রেস্টুরেন্টের মূল গেট বন্ধ করে, দোতলা থেকে গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। এই প্রতিরোধ না হলে, জঙ্গিরা হয়তো হত্যা করে পালিয়ে যেত। রেস্টুরেন্টের সামনে একটি জিপ অপেক্ষা করছিল।
জঙ্গিরা ভেতরে অবস্থান নেওয়ার পরও পুলিশের বড় কর্তারা পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুমান করতে ব্যর্থ হয়েছেন। একটি প্রফেশনাল বাহিনীর সদস্যরা যেভাবে  সম্পূর্ণ নিরাপত্তাহীনভাবে এগিয়ে গেছেন, মানা যায় না। দু'জন নিহত, ত্রিশ জনের মতো পুলিশের গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়া মর্মান্তিক। যোগ্যতা দক্ষতা প্রফেশনালিজমের ঘাটতিও প্রকট।
ঘ. জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশেষ বাহিনী অপরিহার্য। সেই উদ্দেশ্যেই গঠিত হয়েছিল র‌্যাব। র‌্যাবকে সাধারণ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং বিরোধীদল দমনে অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে নানা 'অনিয়ম -অনৈতিকতা' এমন কী 'গুম-খুনে'র সঙ্গেও জড়িয়ে র‌্যাব লক্ষ্যচ্যুত হয়েছে। র‌্যাবকে যদি এই অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে পুনর্গঠন করা হয়, তবে হয়তো জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। বিশেষ বাহিনী 'সোয়াত' গঠন করা হয়েছে। তাদের সক্ষমতা এখনও পরীক্ষিত নয়। অতিরিক্ত ব্যবহারে লক্ষ্যচ্যুত না হলে সোয়াত হয়তো জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারবে।
৩. এসব কোনও আলোচনা কোনও কাজে আসবে না, যদি না রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন হয়। অস্বীকার করার প্রবণতা থেকে আমরা অসত্য বলার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছি। যেকোনও ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক অসত্য বলা শুরু করি। রাজনৈতিক অসত্যের কারণেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও অসত্য বলে। তারা কাজ না করে, তদন্ত না করে অসত্য বলে। আগের আরও অনেক ঘটনা দিয়ে প্রমাণ দেওয়া যায়। সেদিকে না গিয়ে গুলশান ট্র্যাজেডি দিয়ে বলছি।
জঙ্গিরা আক্রমণ করেছে রাত নয়টার দিকে। গুলশান এলাকা পুরোটা সিসি ক্যামেরার আওতায়। সিসি ক্যামেরা মনিটরিংয়ের কোনও তথ্য পুলিশের কাছে ছিল না। পুলিশ বলেছে, তারা জঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করছে। পুলিশের সূত্র উল্লেখ করে ভারতের এনডিটিভিসহ আরও অনেক গণমাধ্যম বলেছে জঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। বাস্তবে পুলিশের সঙ্গে সারারাতে জঙ্গিদের কোনও আলোচনা হয়নি। পুলিশ বলেছে, তারা পুরো রেস্টুরেন্ট ঘেরাও করে রেখেছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সকাল বেলাও জঙ্গিরা নিশ্চিন্তে নির্ভাবনায় চলাচল করছে। আশেপাশের ভবন থেকে পুলিশ বা র‌্যাব তা দেখেনি। আসলে সেসব জায়গায় র‌্যাব বা পুলিশের কোনও অবস্থানই ছিল না সারারাত। বাংলাদেশ সময় ভোররাতে আইএস টুইটারে বিভৎস ছবি দিয়ে বিশজনের হত্যাকাণ্ডের তথ্য জানায়। পুলিশ বা র‌্যাব সে বিষয়ে আদৌ অবগত ছিল কিনা সন্দেহ আছে। জঙ্গিরা যে আক্রমণের আগে টুইটারে বার্তা দিয়েছিল, তাও পুলিশের নজরে আসেনি। আইএস হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গিদের ছবি প্রকাশ করেছে। পুলিশ নিশ্চুপ থেকেছে। ছবি প্রকাশের ঘণ্টা দেড়েক পরে সেনাবাহিনী অপারেশন চালিয়ে ছয় জঙ্গিকে হত্যা করেছে। আইজিপি বলেছেন,  এই জঙ্গিদের আমরা খুঁজছিলাম। পুলিশ ৫ জঙ্গির লাশের ছবি প্রকাশ করেছে। অন্য জঙ্গি বিষয়ে কিছু জানায়নি। এর মধ্যে রেস্টুরেন্টের বাবুর্চিকেও জঙ্গি বলেছে পুলিশ। এসবই তথ্য না থাকার প্রমাণ।
ডন, বাধন, বিকাশ... জঙ্গিদের আজগুবি নাম বলেছে পুলিশ। ততক্ষণে গণমাধ্যম-সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গিদের প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ হয়ে গেছে। আইজিপি 'খুঁজছিলাম' বললেও এই জঙ্গিদের নাম পরিচয় ঠিকানা বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনও তথ্য ছিল না। সারারাত র‌্যাব- পুলিশ অপেক্ষা করেছে, কারণ আক্রমণের সক্ষমতা তাদের ছিল না। রেস্টুরেন্টের ভেতরে থাকা জঙ্গিদের শক্তি সম্পর্কে তাদের কাছে কোনও তথ্য ছিল না।
৪. সেনাবাহিনী ডাকতে হয়েছে, প্যারা কমান্ডোদের সিলেট থেকে ঢাকায় আনতে মাঝরাত পার হয়ে গেছে। অভিযানের জন্য দিনের আলোর অপেক্ষা করা হয়েছে। ১৩ মিনিটে অভিযান সফল হয়েছে। যতটুকু ভিডিও চিত্র দেখা গেছে তাতে আদৌ জঙ্গিদের থেকে প্রতিরোধ হয়েছিল কিনা, বোঝা যায়নি। ছয় জঙ্গি নিহত হয়েছে। জীবিত তেরজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। সেই তের জনই জীবিত উদ্ধার হয়েছেন, যেই তেরজনকে জঙ্গিরা হত্যা করেনি।
৫. 'বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি'-খালেদা জিয়া সরকার এই নীতি থেকে সরতে বাধ্য হয়েছিল দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চাপে। শেখ হাসিনা সরকার পণ করেছেন কোনও ভাবেই স্বীকার করা হবে না যে, দেশে আইএস আছে। আইএস তার অস্তিত্ব এত বড়ভাবে প্রমাণ দেওয়ার পরও। ঠিক আছে স্বীকার করে আমেরিকার ফাঁদে পড়ার দরকার নেই। সমর্থন করবো এই নীতি। কিন্তু ব্যবস্থা তো নিবেন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে। হেফাজতকে পুষে রাখবেন, হিজবুত তাহিরীর নেতাকে বেতন দেবেন, হিজবুত জঙ্গিদের ধরে ছেড়ে দেবেন, আর অস্বীকার করবেন আইএস নাই!
এই নীতি সমর্থন করতে হবে? এই নীতির বিরোধীতা করলেই একদল নিম্নশ্রেণির ক্ষমতাবান দিয়ে চরিত্রহনন করাবেন। বলবেন, সবাই জামাত, সবাই রাজাকার। একটি স্বাধীন দেশের সরকারের খারাপ কাজের সমালোচনা কেন করতে পারবো না? একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে একদল চিৎকার করে উঠবেন, কেন সমালোচনা তো করছেন। কতটা ভয়, কতটা আতঙ্ক নিয়ে তা করতে হচ্ছে, যারা করছেন তারা বুঝছেন। নিম্নশ্রেণির ক্ষমতাবানদের দিয়ে সিপি গ্যাং তৈরি করানো হয়েছিল মানুষের চরিত্রহনন করানোর জন্য। সিপি গ্যাং বন্ধ হলেও সিপিগ্যাং নেতাদের নোংরামি বন্ধ হয়নি।
৬. এখন সময় সরকারের সমালোচনার নয়, ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। তা বিবেচনায় নিয়েই বলছি, উদ্যোগটা নিতে হবে সরকারকেই। গুলশান ট্র্যাজেডির পর সরকারকে অনেক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে হবে। জাইকার চলে যাওয়ারশ প্রসঙ্গ আলোচনা হচ্ছে। আমি যতটুকু জাপানিদের জানি, মনে করছি না জাইকার এখনই এমন সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু আবার হামলা হবে না, এই নিশ্চয়তা দেওয়া না গেলে বা আরেকটি হামলা হলে, জাইকার সিদ্ধান্ত কী হবে বলা যায় না। এর আগেই আমেরিকা নিজেদের নিরাপত্তার জন্যে অস্ত্রসহ সৈন্য আনতে চায়। ইউরোপের কয়েকটি দেশেরও একই মনোভাব। সরকারের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতির ওপর তাদের আর বিশ্বাস নেই। সর্বোচ্চ নিরাপত্তার মধ্যেই কূটনৈতিক এলাকায় হামলা হয়েছে। যুদ্ধাবস্থা ছাড়া আর কোনও দেশে তা হয়নি।
এখন জরুরি জাতিগত ঐক্য। ডা. জাফরুল্লাহর মতো মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করিয়ে তা সম্ভব নয়। ডা. জাফরুল্লাহর খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ আছে। এরশাদের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল, আছে। এই জাফরউল্লাহই ওষুধনীতির রুপকার। এরশাদকে দিয়ে যা করিয়েছিলেন। তার প্রেক্ষিতে ওষুধ শিল্পের বিকাশ কতটা হয়েছে, সবারই জানা। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেই তিনি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, এই নীতি পরিত্যাগ করতে হবে। সরকারের কাজের সমালোচনা করলেই জামাত, রাজাকার বলে গালি দেওয়া যাবে না।
জঙ্গিবাদ পুষলে তা নিয়ন্ত্রণে থাকে না। গুলশান ট্র্যাজেডির পরেও যদি তা সরকার বুঝতে না পারে, কিছু বলার নেই।
'জামাত করেছে, বিএনপি করেছে'- এই কোরাস গাওয়া বন্ধ করতে হবে। সরকারে 'খালেদা জিয়া' বিষয়ক মন্ত্রণালয় রাখা যাবে না। জামাত বিএনপি যেই জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হোক, পৃষ্ঠপোষকতা করুক- সঠিক তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সমর্থন করবো, সাধুবাদ জানাবো। গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান বলবেন, মাদারীপুরে ধরা পড়া জঙ্গি ফাহিম হিজবুত তাহরীর করতো। আর রাজনৈতিক  নেতৃত্ব বলবেন, শিবির করতো, এই অসত্য বলার ধারা পরিত্যাগ করতে হবে।
৭. নিম্নবিত্তের সঙ্গে মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তের সন্তানরা যে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হয়েছে, এটা নতুন কোনও তথ্য নয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজবুত তাহিরীর কর্মকাণ্ড দিয়ে আমরা তা বারবার বলেছি। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে হিজবুত তাহিরীরকে সবচেয়ে বেশি পৃষ্টপোষকতা করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের সময়েও হিজবুতের জঙ্গিরা ধরা পড়েছে। তারা ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ীদের সন্তান।
তাদের জামিনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। জঙ্গি হিসেবে ধরে সাধারণ আইনে মামলা করা হয়েছে। পুলিশের কাছে জানতে চান, শত শত প্রমাণ রয়ে গেছে। এখনও এই নীতি থেকে সরকার সরে আসেনি। আওয়ামী লীগ নেতার জঙ্গি ছেলের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, তার বাবা মা দায়ী নয়। আর বগুড়ার দিন মজুর জঙ্গির বাবা মাকে পুলিশ গ্রেফতার করছে। একই ঘটনায় সম্পূর্ণ বিপরীতমূখী আচরণ। এই আচরণ দিয়ে জঙ্গি দমন করা যাবে না।
৮. জামায়াত অস্তিত্ব সংকটে আছে। জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হয়ে, পৃষ্ঠপোষকতা করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করতেই পারে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিন। বিএনপির ঘাড়ে বসে জামায়াত অপকর্ম করছে। বিএনপিকে জঙ্গি বলে দূরে ঠেলে দিলে জামায়াতের জন্যে তা সহায়কই হবে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে, বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসুন। আপনারা খুব ভালো করে জানেন, বিএনপি জঙ্গি দল নয়। তারা যুদ্ধাপরাধী দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে রাজনীতি করে। আলোচনায় বসার আগে শর্ত দিন জামায়াত ছেড়ে আসার। আন্তরিতার পরিচয় দিন, কূটকৌশল নয়। এখন কূটকৌশলে বিজয়ী হওয়ার সময় নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনিই খালেদা জিয়াকে ফোন করেছিলেন। আপনার কৌশলের কাছে খালেদা জিয়া পরাজিত হয়েছেন। এখন আলোচনার উদ্যোগ নিলে খালেদা জিয়া বিজয়ী হয়ে যাবেন না। আপনার মহত্বের প্রকাশ ঘটবে।
আওয়ামী লীগ -বিএনপি এক সঙ্গে না বসলে জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করতে পারবে না বাংলাদেশ। এই সত্য দেশের সব মতের মানুষকে বুঝতে হবে। বাইরের সহায়তা, সেটা পাশের বন্ধু রাষ্ট্র বা দূরের আমেরিকা- ইউরোপ যেই হোক, সমাধান মিলবে না। নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হতে না পারলে, বাইরের সহায়তা নিতে বাধ্য হবেন। সেটা হবে সিরিয়ার পরিণতি বরণ করে নেওয়া।
৯. দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। গণতন্ত্র থাকলেই কি জঙ্গি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? গণতন্ত্র থাকলে কি গুলশান ট্র্যাজেডি ঘটতো না? নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না যে, এমন ঘটনা ঘটতো না। জঙ্গি সমস্যার সমাধান হয়ে যেত, তাও বলা যায় না। গণতন্ত্র আছে এমন দেশেও জঙ্গিবাদের বিস্তৃতি ঘটেছে। তারপরও একথা বলা যায় যে, গণতন্ত্র থাকলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থাকত। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে দেশ চালাতে হতো না। আরও পরিষ্কার করে বলি, আওয়ামী লীগ -বিএনপি -বাম দলগুলো যদি গণতান্ত্রিক পরিবেশে সুষ্ঠু রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে, জঙ্গিবাদের ঝুঁকি এমনিতেই কমে যাবে। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেই, এখন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতায় আসবে। তা যদি হয়ও, আওয়ামী লীগের মতো শক্তিশালী রাজনৈতিক দল বিরোধী দলে থাকলে, বিএনপি পূর্বের মতো জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারবে না।
১০. জঙ্গিদের 'পূর্বপরিকল্পিত হামলা' অস্বীকার করার চাপা দেওয়া 'পরিকল্পনায়' পরিত্রাণ মিলবে না। জঙ্গি আছে, মুখে স্বীকার করাও জরুরি নয়। দল মত নির্বিশেষে ব্যবস্থা নেওয়াটা জরুরি। ধরা পড়া জঙ্গি, সে ফাহিম বা মিতুর সন্দেহভাজন হত্যাকারী যেই হোক, ক্রসফায়ারের নামে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করার মানে, অবিশ্বাসের জন্ম দেওয়া। জঙ্গিবাদকে পালন করা। প্রমাণ করা সরকারের নিজেরই রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা নেই। সরকারের আস্থা না থাকলে, জনগণের আস্থা থাকে না। আইনের শাসন বহু দূরের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
১১. দায় চাপানো, অসত্য চাপা দেওয়া সংস্কৃতি পরিহার করা অতীব জরুরি। নিম্নবিত্তের সন্তান জঙ্গি হলে বাবা -মা'র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন, আর উচ্চবিত্তের জঙ্গি সন্তানের জন্যে 'সন্তান পালন, কেমিক্যাল ওয়াস' ইত্যাদি হাইপোথিসিস সামনে এনে সহানুভূতি দেখাবেন -এটা ভয়ঙ্কর ভুল ও শ্রেণি বৈষম্যমূলক নীতি। আওয়ামী লীগ -বিএনপি নেতা বা কর্মী -সমর্থকদের সন্তানরাও যে জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে, অসত্য বলে চাপা দিয়ে তা গোপণ রাখা যাবে না।
আপনারা যারা বিভিন্ন সময়ে দেশ পরিচালনা করেছেন, এখন করছেন -তাদের ভুল এবং অসৎ নীতির ফসল জঙ্গিবাদ। এই কলঙ্কের দায় আপনাদের সবার।  নিশ্চয়ই সবাই সমান দায়ী নন। বর্তমানে যারা ক্ষমতায় আছেন দায় তাদেরই বেশি, জঙ্গিবাদের এতটা বিস্তৃতি আর কখনও হয়নি। নিক্তি দিয়ে না মেপে, তর্কে লিপ্ত না হয়ে -ঐক্যবদ্ধভাবে সমাধানের উদ্যোগ নিন।

লেখক: সম্পাদক, সাপ্তাহিক

আরও পড়তে পারেন: হলি আর্টিজান কাভারেজ বিতর্ক

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ