X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গিবাদের ব্যাকরণ ও জাতীয় ঐক্যে'র অলীক স্বপ্ন

গোলাম মোর্তোজা
২০ জুলাই ২০১৬, ১৩:০৬আপডেট : ২০ জুলাই ২০১৬, ১৩:১০

গোলাম মোর্তোজা ব্যাকরণের সঙ্গে ভাষার সম্পর্ক, আমরা সাধারণত এভাবেই পরিচিত। ব্যাকরণ ভালো জানা না থাকলে, ভাষা ভালো শেখা যায় না। শুধু ভাষা নয়, সবকিছুর সঙ্গেই ব্যাকরণের সম্পর্ক আছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ জন্ম নেয় তার নিজস্ব ব্যাকরণ অনুযায়ী। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবিলাও করতে হয় ব্যাকরণ মেনে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পেশাদার বাহিনী ব্যাকরণ মেনেই গঠিত হয়, কার্যক্রম পরিচালনা করে। দেশ-মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করে। কোন ব্যাকরণ অনুযায়ী জঙ্গিবাদের জন্ম, তা জানা জরুরি। এই জানা মানে সঠিক-নির্ভুল ডায়াগনসিস। নির্ভুল ডায়াগনসিসে জঙ্গিবাদের গতি-প্রকৃতি-গঠন সম্পর্কে জানা গেলে, প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়। আমাদের সবচেয়ে দুর্বল এই ডায়াগনসিস ব্যবস্থা। বাস্তবে একেক ল্যাবের ডায়াগনসিস রিপোর্ট একেক রকম হয়, বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না। জঙ্গিবাদের ডায়াগনসিসেও ঠিক একই জটিলতায় আটকে গেছি। ব্যাকরণ অনুযায়ী ডায়াগনসিস হচ্ছে না। একেকজনের মুখ দিয়ে ডায়াগনসিসের একেক রকমের রিপোর্ট জানা যাচ্ছে। ব্যাকরণ মানলে সব ডায়াগনসিসের রিপোর্ট এক রকম হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। এক রকম না হওয়ায় নানা দিকে ঘুরপাক খাচ্ছি। আমাদের ডায়াগনসিস ল্যাব ঠিক নেই, ভুল বিভ্রান্তিকর রিপোর্ট আসছে। ব্যাকরণ না জেনে না মেনে চলার নীতিতে ল্যাবগুলো সময়োপযোগিতা হারিয়েছে।
১. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে বুঝতে পারছেন না, কেন জঙ্গি তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে উচ্চবিত্তের সন্তানরা কেন জঙ্গি হচ্ছে, সব ‘তথ্য’ থাকার পরও প্রধানমন্ত্রী তা বুঝতে পারছেন না। প্রধানমন্ত্রী ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, ‘হুর-পরি পাওয়ার জন্যে তারা জঙ্গি হচ্ছে...।’ এই বক্তব্য সঠিক ডায়াগনসিস না হওয়ার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। হুর-পরি বলতে প্রধানমন্ত্রী যা বোঝাচ্ছেন, জঙ্গি নিবরাসদের জীবনে অর্থ-সম্পদের সঙ্গে তারও কোনও অভাব নেই, পর্যাপ্ত জোগান আছে, ছিল। প্রধানমন্ত্রীর ‘তথ্যে’ বা ডায়াগনসিসে যা ধরা পড়েনি, উল্টো জঙ্গিবাদের মতো জটিল-গভীর একটি সমস্যা, অত্যন্ত হালকা করে দেখা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর 'তথ্য' মানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ডায়াগনসিস। তাদের ডায়াগনসিস ভুল হলে, সঠিক ব্যবস্থা আশা করা দুরাশা।
২. ‘ব্যাকরণ কাহাকে বলে’- ভাষার মতো জঙ্গিবাদের ব্যাকরণের সহজ-সরল কোনও সংজ্ঞা নেই। জাতীয় এবং আন্তজার্তিক, জঙ্গিবাদের দুই রূপ। সাধারণত, কিছু সংখ্যক লুটেরা অধিকাংশ জনমানুষের অর্থ-সম্পদ লুট করলে, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন অন্যায় -অনৈতিকতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উৎসাহিত করলে, জনগণের সম্পদ শাসকরা নিজেদের লাভের জন্যে বিদেশিদের হাতে তুলে দিলে, দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করলে -পাচারে সহায়তা করলে, জীবনমানের বৈষম্য প্রকোট হলে,অনায্যতা প্রতিষ্ঠা পেলে, জনগণের অধিকার কেড়ে নিলে, আইনের শাসন না থাকলে,  দমন-পীড়ন করে স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবেশ স্তব্ধ করে দিলে, তরুণ প্রজন্মের সামনে স্বপ্নের পরিবর্তে দুঃস্বপ্ন তৈরি করলে, শাসন ব্যবস্থা বলপ্রয়োগ নীতিতে ফ্যাসিবাদি রূপ ধারণ করলে, স্বাভাবিক উপায়ে শাসক পরিবর্তনের সকল পথ বন্ধ করে দিলে, দেশের জন্যে ক্ষতিকর -বিভ্রান্ত কিছু সংখ্যক মানুষ চরমপন্থার পথ বেছে নেওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। রাজনৈতিক জ্ঞানহীন সহজ-সরল তরুণদের একটি অংশকে তারা দলে টানতে সক্ষম হয়। এই চরমপন্থারই একটি রূপ জাতীয় পর্যায়ের জঙ্গিবাদ।

ধর্মীয় বা জাতিগত কারণে, সম্পদ দখলের জন্যে বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর নির্যাতন চালিয়ে, হত্যাকাণ্ড - অপমান-অসম্মান করে, যুদ্ধোম্মাদ নীতিতে একটি জাতিকে নিঃস্ব করে দিয়ে, দেশ ছাড়া করে, কিছু বিশ্বাসঘাতককে অর্থ -অস্ত্র -ট্রেনিং দিয়ে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে, তাবেদার শোষক টিকিয়ে রেখে, একটি জাতি বা কয়েকটি জাতিকে চরমপন্থী বা জঙ্গি হিসেবে পরিচিতি দেওয়া হয়। শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো শোষণ -লুণ্ঠন অব্যহত রাখার জন্যেই এই জঙ্গিবাদ তৈরি করে, টিকিয়ে রাখে। এই জঙ্গিবাদকে আদর্শ ভেবে দূর -দূরান্তের বহু মানুষ বিভ্রান্ত হয়।

এর বাইরেও আরও অনেক কারণ জঙ্গিবাদ উত্থাণে ভূমিকা রাখতে পারে। জাতীয় পর্যায়ে জঙ্গিবাদ উত্থানের কিছু কারণ বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।

ক. আমাদের মতো অভাব-অনটনের দেশে শিক্ষার্থীদের ভেতরে একটা প্রতিবাদী মনোভাব কাজ করে। এক ধরনের প্রতিষ্ঠানবিরোধী মানসিকতা তৈরি হয়। স্কুল পেরোনোর সময় থেকে এমন মানসিকতা জাগ্রত হতে থাকে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে তার প্রকাশ ঘটে। ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখে, অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো শেখে, নিজের এবং মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলতে শেখে। এই ছাত্র রাজনীতি কখনও পরিপূর্ণ বিশুদ্ধ ছিল না।

অন্যায়-অনিয়ম-অস্ত্র-সন্ত্রাস... ছাত্র রাজনীতিতে সবই ছিল। অন্যায়ের প্রতিবাদও ছিল। যা ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ছিল।

খ. ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অস্ত্র-সন্ত্রাস হয়েছে। অন্যায়ের প্রতিবাদও হয়েছে। শিক্ষার্থীরা কর্মী থেকে নেতা হওয়ার চেষ্টা করেছে, ছাত্রনেতারা ভালো ইমেজে পরিচিত হতে চেয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোট পাওয়ার বিষয়টি তাদের মাথায় কাজ করেছে। ১৯৯০ সালের পর থেকে ছাত্র সংসদের নির্বাচন না থাকায় ছাত্র রাজনীতি ভয়ঙ্করভাবে কলুষিত হয়ে পড়েছে। টেন্ডারবাজি আর চাঁদাবাজিতে জড়িত হয়ে গেছে ছাত্রনেতা- ছাত্র রাজনীতি।

গ. এখন ছাত্রলীগ ছাড়া শিক্ষাঙ্গনে আর কোনও ছাত্র সংগঠন নেই। ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে যেতে দেওয়া হয় না। বাম সংগঠনগুলোর মধ্যে রাশেদ খান মেননের ছাত্রমৈত্রী, হাসানুল হক ইনুর জাসদ ছাত্রলীগ, ‘সিপি গ্যাং’এর মতো গালিবাজ সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক, আওয়ামী ছাত্রলীগের অপকর্মের অংশীদার। ছাত্র ইউনিয়ন তার নিজস্ব অবস্থান ধরে রেখে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করেছে। কথা বলেছে, কাজ করেছে।

ঘ. ১৯৯০ সালের পর থেকে আওয়ামী ছাত্রলীগ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাম ছাত্র সংগঠনগুলো নতুন শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে পারেনি। নতুন শিক্ষার্থীরা দলে দলে এসে এসব সংগঠনে যোগ দেয়নি। শিক্ষার্থীরা অভিভাবকদের সম্মতি নিয়ে ছাত্র সংগঠনে যোগ দিত না। আবার ছাত্র রাজনীতি করা, অভিভাবকদের দৃষ্টিতে অপরাধও ছিল না। সেই পরিস্থিতি আমুল বদলে গেছে।

প্রিয় পাঠক, আপনি যে দল বা মতেরই হোন না কেন, বুকে হাত দিয়ে বিবেককে জাগ্রত রেখে জবাব দেন। আজ যদি আপনার সন্তান ছাত্রলীগে যোগ দেয় বা দিতে চায়- আপনি কি সম্মতি দেবেন? আপনার কোনও আত্মীয়ের সন্তানের ক্ষেত্রে কি সম্মতি দেবেন?

ধরে নিচ্ছি, আপনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ। ধারণা করি, আপনার উত্তর হবে ‘না’। কারণ কী? কারণ ছাত্রলীগের ইমেজ। ছাত্রলীগ এখন একটি ভয়ঙ্কর সংগঠন। চাঁদাবাজি-মাস্তানি-খুন-ধর্ষণ... কী করে না ছাত্রলীগ? যদি সব ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম থাকতো, নিজেদের মধ্যে মারামারি হতো, সন্ত্রাস হতো। ছাত্রলীগের এমন ভয়ঙ্কর দানবীয় ভীতিকর ইমেজ তৈরি হতো না। ছাত্র ইউনিয়নের ভাষায় ছাত্রলীগ ‘বাণিজ্যলীগে’পরিণত হতো না।

ঙ. ১৯৯০ সালের পর থেকে যারা শিক্ষাঙ্গনে এসেছে, তাদেরও একটা প্রতিবাদী মন ছিল। ছাত্রলীগ-ছাত্রদল-বাম সংগঠন তাদের মন বোঝেনি। ছাত্র রাজনীতি স্বাভাবিক না থাকায়, শিক্ষাঙ্গনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড প্রায় সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের ছোট একটি অংশকে ইসলামী ছাত্র শিবির টেনে নিয়েছে। বড় একটা অংশ নিষ্ক্রিয় থেকেছে, অনেকে মাদকাসক্ত হয়েছে। কেউ কেউ ঢুকে গেছে জঙ্গি সংগঠনে। সংখ্যায় যে তারা খুব বেশি, তা নয়। সংখ্যায় কম হলেও জঙ্গি সংগঠন তাদের আকৃষ্ট করেছে, আকৃষ্ট করানো হয়েছে। শিক্ষাঙ্গনে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু থাকলে হয়তো তারা জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতো না। রাজনীতিহীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, নিয়ন্ত্রণহীন মাদ্রাসা শিক্ষা জঙ্গিবাদের জন্যে আদর্শ হয়ে উঠেছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও এর বাইরে নয়।

এখন আবার ছাত্রলীগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি করতে চাওয়ায়, মানুষের দুশ্চিন্তা আরও বাড়ছে। একদিকে জঙ্গি, আরেক দিকে দানবীয় ছাত্রলীগ!

৩. ২০০৭ সাল থেকে দেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে। ক্রমেই সঙ্কোচিত করা হয়েছে। ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালের পর জনগণকে বাদ দিয়ে, প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় থাকার নীতিতে শুরু হয়েছে বিরোধী দল দমন। বিরোধী দল বিএনপি, জামায়াতের ওপর নির্ভর করে সহিংস জ্বালাও-পোড়াও অপকর্ম করে, সরকারের দমন-পীড়ন নীতির কিছুটা বৈধতা দিয়েছে। এখন রাজনীতিতে চলছে ‘জাতীয় ঐক্যে’র তর্ক-বিতর্ক। বিএনপি ঐক্য চায়, সরকার চায় না। সরকার কখনও চাইবে না। সরকার জাতীয় ঐক্য করলে শেষ পর্যন্ত একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। জনসমর্থনের কী অবস্থা সরকার তা ভালো করে জানে। সুতরাং সরকারের দিক থেকে ‘ঐক্য’ হয়ে গেছে এটা বলাই স্বাভাবিক। বিএনপির চাওয়া ‘ঐক্য’ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা আপাতত নেই। ‘ঐক্য’ না হলে কী হবে? বিএনপি স্পষ্ট করে বলতে পারে, জামায়াতের সঙ্গে আমাদের জোট নেই। জামায়াতকে জোটের বাইরে রাখতে পারে। তাতেও আওয়ামী লীগ ‘ঐক্য’ করবে না। নতুন কোনও কথা বলবে।

বিএনপি সারা দেশে জঙ্গিবিরোধী সভা-সমাবেশ আহ্বান করতে পারে। খালেদা জিয়া দেশব্যাপী বড় বড় জনসভা করতে পারেন। সরকার তাও বিএনপিকে করতে দেবে না। নানা কৌশলে বাধা দেবে। জনসমর্থনহীন প্রশাসন নির্ভর সরকার সারাক্ষণ জনবিস্ফোরণের ভয়ে আতঙ্কিত থাকে। এই কারণেই তারা বিএনপিকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে দেবে না। বিএনপি যদি জামায়াতকে বাদ দিয়ে জঙ্গিবাদবিরোধী সভা-সমাবেশ-বিক্ষোভের উদ্যোগ নেয়, রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি নিজে উপকৃত হবে। কর্মসূচি পালন করতে না দিলেও উপকৃত হবে। সরকারের বাধা অতিক্রম করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যদি কিছুটাও দৃশ্যমান করতে পারে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে পারবে।
৪. জঙ্গিবাদের মোকাবিলা করতে চাইলে দেশে স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতেই হবে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি-বাম রাজনৈতিক দলগুলো সারাদেশে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করলে, জঙ্গিবাদের ঝুঁকি এমনিতেই অনেকটা কমে যায়। সেই রাজনীতিতে সন্ত্রাস-সহিংসতা কিছু থাকলেও, জঙ্গিবাদ থাকবে না। সবচেয়ে বিপদের বিষয় এই যে, আওয়ামী সরকার যে ধারায় চলছে, তাতে এমন পরিবেশ তৈরি করার দিকে যাওয়ার কোনও সুযোগই রাখেনি।

৫. মস্তক ধোলাই বা ব্রেন ওয়াশের তত্ত্ব নতুন নয়। সব সময়ই ছিল। কমিউনিস্টরা অকমিউনিস্টদের, অকমিউনিস্টরা কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে মস্তক ধোলাইয়ের অভিযোগ এনেছে। মস্তক ধোলাই হয়েছেও। পরিবেশ ছিল দেখেই, মস্তক ধোলাই করা গেছে। এখনও পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলেই জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট করা যাচ্ছে, মস্তক ধোলাই করা যাচ্ছে। জঙ্গিবাদের ব্যাকরণ তাই বলে। আতঙ্কের বিষয়, জাতীয় -আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদ, নিম্নবিত্ত -মধ্যবিত্ত -উচ্চবিত্ত জঙ্গি ইস্যুতে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। নীতিগতভাবে বিরোধ থাকলেও, জামায়াত জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে দেখছে জঙ্গিবাদকে। সবচেয়ে বড় আতঙ্কের বিষয়, ভুল ডায়াগনসিস (জেনে -বুঝে  বা না জেনে না বুঝে, যাইহোক)।  পরিত্রাণ চাইলে সঠিক ডায়াগনসিস অপরিহার্য, অসত্য বলা পরিত্যাজ্য। দৃষ্টি দিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের দিকে।

তাৎক্ষণিক কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে, রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার কৌশল থেকে বিরত থাকা জরুরি। পুরস্কার ঘোষণা বা যাই করা হোক না কেন, সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।  ‘গুলশান আক্রমণের তথ্য আগেই জানতাম’,‘জঙ্গিরা বিচ্ছিন্নভাবে পায়ে হেঁটে রেস্তোরাঁয় ঢুকেছে’- এসব কথা বলে মানুষকে বিরক্ত-বিক্ষুব্ধ করা যাবে না। কোথা থেকে কোন দিক দিয়ে তারা পায়ে হেঁটে আসলো, সিসি ক্যামেরা পুরো গুলশান এলাকায় ছড়ানো- তা জানা এত কঠিন কিছু নয়। জানা দরকার ত্রুটি সংশোধন করে, ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে। আগেই যদি জানতেন সিসি ক্যামেরা ঠিক করলেন না কেন? সিসি ক্যামেরার ছবির মান এত খারাপ কেন?

এসব অস্পষ্ট ভিডিও ছেড়ে সুফল পাওয়া যাবে না, মানুষের আস্থা অর্জন করতে না পারলে। কোনও সুফলই পাওয়া যাবে না, রাজনৈতিক নেতৃত্ব আন্তরিকভাবে না চাইলে।
জঙ্গিবাদের ব্যাকরণ অনুযায়ী, সবচেয়ে বড় হতাশার জায়গা এটাই।

লেখক: সম্পাদক, সাপ্তাহিক

আরও খবর: নিহত জঙ্গিদের রক্ত-চুল সংগ্রহ করতে সিএমএইচে ফরেনসিক বিভাগ

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ