X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কতটা সফল কেরির সফর?

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৩:৪৩আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৪:৫৭

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী ২৯ আগস্ট মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ৯ ঘণ্টার এক ঝটিকা সফরে বাংলাদেশ এসেছিলেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিষয়টা খুবই স্পর্শকাতর। ভারত, চীন, জাপান, রাশিয়া, সৌদি আরব সবার সঙ্গে বাংলাদেশ খুবই মধুর সম্পর্ক তৈরি করে চলছে। কিন্তু তার বন্ধুদের সঙ্গে পরস্পরের টানাপোড়ন সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং পররাষ্ট্র বিষয়ে বাংলাদেশকে খুবই সতর্ক পদক্ষেপ দিয়ে চলতে হয়।
ভারত, চীন, জাপান-এর সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে শুধু তাই নয়, তারা বাংলাদেশের উন্নয়নে সহযোগী শক্তিও। এদের সঙ্গে সম্পর্কের হেরফের হলে উন্নয়ন ব্যাহত হতে পারে। শেখ হাসিনার সরকার এ যাবৎ পররাষ্ট্র বিষয়াবলী সফলতার সঙ্গে পরিচালনা করে এসেছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শেখ হাসিনা তার নেতৃত্বের বিশ্বাসযোগ্যতা সৃষ্টি করতে পেরেছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিপুল উন্নতি হওয়ার কারণে আন্তর্জাতিকভাবে তিনি যথেষ্ট মর্যাদাও পাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটা জাতির জাতীয় নেতৃত্ব সমাদৃত হলে সে জাতির চলার পথ সহজ হয়। চাওয়া পাওয়াতেও প্রতিবন্ধকতা থাকে না।
গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার যথেষ্ট ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছিল। জন কেরির এ সফরের ফলে মনে হলো বাংলাদেশ আমেরিকার সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে সম্পর্কটাকে একটা উন্নত স্তরে নিয়ে পৌঁছিয়েছে। আমেরিকার উচ্চ পর্যায়ের একজন রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা এই প্রথম বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি যাদুঘর পরিদর্শন করলেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্প প্রদান করলেন আর যাদুঘর ঘুরে দেখে পরিদর্শক বইতে লিখলেন- ‘এক সহিংস ও কাপুরুষোচিত ঘটনার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে সাহসী ও উজ্জ্বল এক নেতৃত্বকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।’ জন কেরি কিসিঞ্জারের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ কথাটাকে ভুল বলে বাংলাদেশকে কিসিঞ্জারের অপবাদ থেকে মুক্ত করলেন এবার। বাংলাদেশের জন্মটাকে নিক্সন, কিসিঞ্জার মেনে নেননি। জন্মের পরেও তারা উভয়ে বাংলাদেশকে ভালো চোখে দেখেননি। কিসিঞ্জারের এ উক্তিটার জন্য বাংলাদেশের মর্যাদা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বহু ক্ষুণ্ন হয়েছিল। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির কারণে নিক্সনকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল, না হয় দ্বিতীয় মেয়াদে পরিপূর্ণ সময় যদি নিক্সন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকতেন তবে বাংলাদেশকে হয়ত আরও দুঃখ পোহাতে হতো। জন কেরির প্রতিটি কথাই ছিল সুন্দর আর মহানুভূতিশীল। তিনি এমন কোনও বাক্য উচ্চারণ করেননি যাতে বাংলাদেশ বিব্রতবোধ করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যখন কেরির বৈঠক হয় তখন প্রধানমন্ত্রী আমেরিকায় অবস্থানরত বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরৎ প্রদানের বিষয় উত্থাপন করেছিলেন। কেরি বলেছেন, ‘আমি আপনার দুঃখ বুঝি’। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন তিনি আমেরিকায় ফিরে গিয়ে এ বিষয়টা নিয়ে বিচার বিভাগের সঙ্গে কথা বলবেন। বিষয়টাকে ফলপ্রসূ করতে মনে হয় দ্রুত লবিস্ট তৎপরতা বাড়ানো দরকার।
বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। উভয়দেশ পরস্পরকে জঙ্গি তৎপরতার বিষয়ে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বহুদিন থেকে আমেরিকা বাংলাদেশে আইএস-এর উপস্থিতির কথা বলে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার প্রতিবারেই বলেছে যে বাংলাদেশের জঙ্গি স্থানীয় জঙ্গি। ইন্টারনেটের কারণে কেউই আর স্থানীয় পর্যায়ে নেই। অবশ্য তামিম চৌধুরী সম্ভবতো প্রথম জঙ্গি যে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আইএস-এর পত্রিকা তাকে বাংলাদেশে আইএস প্রধান বলেও প্রচার করেছে।

বাংলাদেশ সরাসরি আইএস-এর উপস্থিতির কথা স্বীকার না করায় অনেকে অনেক কথা বলছেন। আমার মনে হয় এ বিষয়ে বুদ্ধিজীবীদের কথা না বলাই ভালো কারণ পররাষ্ট্র বিষয়ে যারা জড়িত তারা নিশ্চয়ই কোনও না কোনও বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের জন্যই বারবার এ কথা বলেছেন। সবার মনে রাখা দরকার ২০০১ সালে ত্রাণের নামে আমেরিকার নৌ-বাহিনী যে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল তখন তারা কারও অনুমতি নেওয়ার তোয়াক্কা করেনি। এ ধরনের কাজ সার্বভৌমত্বের প্রতি উপহাস। আমেরিকার রাষ্ট্রদূত, আর দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বহু চেষ্টা করেছেন আইএস উপস্থিতির কথা স্বীকার করানোর জন্য। এমনকি রাষ্ট্রদূত এ বিষয়টা নিয়ে মন্ত্রীদের দফতরে দফতরে গিয়েছেন। সুতরাং বিষয়টা নিয়ে সন্দেহের উদ্বেগ জাগা স্বাভাবিক।

১৯৯৬ সালে যখন শেখ হাসিনা প্রথম সরকার গঠন করেছিলেন তখন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। কৌতুক করে আমেরিকার লোকেরা বলে তাদের একটা মাত্র দল আছে-  তার নাম ব্যবসায়িক দল। তার দুইটা উপদল আছে ডেমোক্রেটিক পার্টি আর রিপাবলিকান পার্টি। এ দু’দলের কাজ হলো নাকি ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষা করা। ক্লিনটন বাংলাদেশে এসেছিলেন আমেরিকান তেল কোম্পানি যারা গ্যাস ফিল্ডে গ্যাস উত্তোলন করছে তাদের হয়ে কথা বলতে। ক্লিনটন প্রস্তাব দিয়েছিলেন গ্যাস রফতানি করার জন্য। প্রধানমন্ত্রী ক্লিনটনকে বলেছিলেন- সার্ভে করে মোট মজুতের পরিমাণ নির্ণয় করে বাংলাদেশের জন্য ৫০ বছরের গ্যাস রেখে অবশিষ্ট গ্যাস রফতানি করা যায়। প্রেসিডেন্ট শেখ হাসিনার কথায় সন্তুষ্ট হননি। তিনি পরে ২০ মিনিটের এপোয়েন্টমেন্টের স্থলে ১ঘণ্টা বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম জিয়ার সঙ্গে কথা বলে বাংলাদেশ ত্যাগ করেছিলেন। ২০০১ সালে বেগম খালেদা জিয়া সরকার গঠন করলেও বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনার হুমকির মুখে গ্যাস রফতানির প্রচেষ্টা সফল করতে পারেননি।

বাণিজ্যমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও জন কেরির কথা হয়েছে। বাংলাদেশ তার পোশাক শিল্পের ৩০ শতাংশ উৎপাদিত পণ্য আমেরিকায় রফতানি করে। বাংলাদেশ ইউরোপের মতো আমেরিকায়ও শুল্কমুক্ত বাজার প্রত্যাশা করে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জিএসপি ব্যবস্থা আবার চালু করার জন্য চেষ্টা করে আসছেন। কয়দিন আগে হতাশ হয়ে তিনি বলেছেন, এ শতাব্দীতে মনে হয় হবে না। হতাশ হলে চলবে না। পরিশ্রম এবং  চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। পরিশ্রমইতো গরিব দেশের মূলধন।

সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ আর বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেও জন কেরির সাক্ষাৎ হয়েছে। রওশন এরশাদ জিএসপির সুবিধা পুনঃপ্রবর্তনের অনুরোধ করেছেন। বেগম জিয়া রাষ্ট্রদূতের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন সেখানেই তার সঙ্গে জন কেরির কথা হয়েছে। একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রদূতের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করাটাকে সৌজন্যমূলক নয় বলে মনে করেছেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমশের মুবিন চৌধুরী । কিন্তু বেগম জিয়াতো এর আগে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে হোটেলে গিয়ে সাক্ষাৎ করেছেন।

বেগম জিয়া জন কেরির সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলাপ করেছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচন স্থগিত করার চেষ্টা করেও আমেরিকা সফল হয়নি। এ কথাটা ভুলে যাওয়া বেগম জিয়ার উচিৎ নয়। বেগম জিয়ার মনে রাখা উচিৎ ‘বল বল বাহু বল’।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক

[email protected]

আরও খবর: খালেদার বিএনপিতে উপেক্ষিত জিয়ার আদর্শ

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ