X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের সন্ধানে

আনিস আলমগীর
০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১২:৫১আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৪:৪৮

আনিস আলমগীর কলকাতার গোয়ালারা একবার সংকটে পড়েছিল কারণ ভেজাল প্রতিরোধ করতে না পেরে ভোক্তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে তারা আর দুধই কিনবে না। তখন বাজার হারানোর বিপদ থেকে নিজেদেরকে রক্ষার জন্য গোয়ালারা এক অভিনব পন্থার আশ্রয় নিলেন এবং তারা গাভি নিয়ে ভোক্তার বাড়িতে হাজির। ভোক্তার সামনেই তারা গাভি থেকে দুধ দুইয়ে দেবেন। সুতরাং ভেজালের ঝামেলা শেষ। ভারতে কোথাও কোথাও এই প্রথা এখনও আছে।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে কলকাতার গোয়ালাদের মতো মুসিবতে পড়েছেন মনে হচ্ছে। উপায় উদ্ভাবনের জন্য তিনি সার্চ কমিটি গঠন করেছেন। তাতেও কোনও নির্ভেজাল সমাধান খুঁজে পাবেন বলে মনে হয় না। এত পদ্ধতি অনুসরণ করার পরও যে কমিশন গঠন করা হবে তা অনেকে মানবেন না। বিএনপি নাখোশ হওয়ার বিষয় তো নিশ্চিত করে বলা যায়। আসলে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হ্যাঁ-না ভোট থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে এতো অপকর্ম করানো হয়েছে যে প্রতিষ্ঠানটি এখন বিশ্বাসযোগ্যতার সংকটে পড়েছে। এরশাদের সময়ে নির্বাচনি ফলাফলের গেজেট প্রকাশের পর গেজেট পুনঃমুদ্রণের ব্যবস্থা করে পুরনো নাম কেটে নতুন নামও ঢুকানো হয়েছিল।
নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে 'লীলা' করেন নাই এমন সরকার বাংলাদেশে নেই। এখানে নির্বাচন কমিশনকে বহু অসাংবিধানিক কাজও করতে হয়। যেমন হ্যাঁ-না ভোট তার একটি। এই ভোটে ‘না’ ভোটের কোনও প্রার্থী থাকে না সুতরাং নির্বাচন কমিশনকে খুবই সতর্ক থাকতে হয় যেন ‘না’ ভোট  জিতে না যায়। প্রয়োজনে তাকে ‘হ্যাঁ’ ভোটে সিল মারতে হয়। এই ‘ইয়েস’ আর ‘নো’ ভোটের অবতার হলেন জিয়াউর রহমান এবং হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। এই দুই ব্যক্তিই নিবাচন কমিশনের ভাবমূর্তিকে ফালাফালা করে ছেড়েছেন।

মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন কমিশন গঠন করা। সংবিধানের কোনওখানে সার্চ কমিটি গঠনের কোনও কথা নেই। সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতি গঠন করেছেন সংবিধানের বাইরে গিয়ে। প্রত্যেক কাজে রিট করার কিছু উকিল বাহাদুর আছেন। এ বিষয়টা নিয়ে ওইসব উকিল বাহাদুরদের দৃষ্টি এড়িয়ে গেলো কেন জানি না। তারাতো এ বিষয়টা নিয়েও একটা শাসনতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টির চেষ্টা করার সুযোগ হারালেন। হিতাকাঙ্ক্ষির অভাব নেই এদেশে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি অবিতর্কিত কমিশন গঠনের জন্য চেষ্টা করছেন আন্তরিকতার সঙ্গে। সফল হলে জাতি খুশি হবে।

নির্বাচন কমিশন সাফসুতরা হলেই নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষ হবে তেমন কোনও কথা নেই। বাংলাদেশ গরিব দেশ তার নির্বাচন কমিশনে প্রয়োজনীয় স্টাফ নিয়োগ করা সম্ভব নয়। সুতরাং নির্বাচনের সময় সম্পূর্ণ নির্বাচনটা পরিচালনা করতে হয় সরকারি কর্মচারীদের ওপর নির্ভর করে। সরকারি কর্মচারীদের নিরপেক্ষতার গ্যারান্টি দেবে কে?

সুতরাং বলতে হয় নির্বাচন কমিশনের বর্তমান রূপ অসীম জটিলতার একটা সরল ছবি মাত্র। বিশ্বাস মেলায় স্বর্গ তর্কে বহু দূর। আসলে উন্নত বিশ্বে হোক আর তৃতীয় বিশ্বে হোক নির্বাচন শতভাগ শুদ্ধ করা সম্ভব নয়। ট্রাম্প নির্বাচনে জিতেছেন অথচ তিনি অভিযোগ তুলে বলেছেন পপুলার ভোটে হাজার হাজার মৃত্যু ব্যক্তির ভোট, দেশে না থাকা ব্যক্তির ভোট প্রদানের প্রচুর প্রমাণ তার হাতে রয়েছে। খুঁটে খুঁটে দেখলে ব্রিটিনের নির্বাচনেও বহু ত্রুটি বের হবে।

বিদেশিরাও নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এখনও তারা দেখা করতে পারেননি। আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বিদেশিদের মাথা দেওয়ার প্রয়োজন কী? অবশ্য বিদেশিদের দোষ কী! আমরাইতো তাদেরকে উদ্যোগী করে তুলি। এ বিষয়ে বিএনপির ভূমিকা অগ্রণী। সালুনে ব্যঞ্জনে বিদেশিদের কাছে দৌড়ে গিয়ে নালিশ করা তার অভ্যাস। অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন গভর্নর জেনারেল স্যার নিনিয়ান পর্যন্ত আমাদের দেশে এসেছিলেন আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতির জটিলতা মীমাংসার জন্য। কিন্তু নিনিয়ান কোনও কিছুই করতে পারেননি। ব্যর্থ হয়ে ফিরে গিয়েছিলেন।

২০১৪ সালের নির্বাচন স্থগিত করার জন্য বিএনপির হয়ে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত আকাশ পাতাল ঘুরেছেন। এমনকি দিল্লি পর্যন্ত গেছেন। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। ভালো হোক খারাপ হোক নির্বাচন হলোই। বিশ্বব্যাপীও নির্বাচনটা এখন স্বীকৃত হয়েছে।

আমরা বিএনপিকে অনুরোধ করবো এ অভ্যাসটা পরিত্যাগ করার জন্য। প্রতিটি বিষয়ে আমরা যদি বিদেশিদের ডেকে এনে এটাকে একটা রীতি প্রথা বানিয়ে ফেলি তবে শেষ পর্যন্ত বিদেশিদের আমাদের প্রতিটি বিষয়ে নাক গলাবার কুঅভ্যাস পেয়ে বসবে। শেষ পর্যন্ত সেটি সুখকর হবে না। সব কিছুতে ‘না’ বলা বিএনপির রীতি প্রথা হয়ে গেছে। বিএনপিকে বুঝতে হবে যে কোনও বিষয় চলার মতো হলে মেনে নিতে হবে। শতভাগ বিএনপির কথা মতো হবে এরূপ প্রত্যাশা করা উচিৎ নয়।

আওয়ামী লীগও এদেশের ডমিনেন্ট পার্টি। তার হাতেই এদেশের জন্ম হয়েছে। সুতরাং আওয়ামী লীগের গুরুত্ব উপলব্ধি করার প্রশ্নে বিএনপিকে চোখ বন্ধ করে রাখলে হবে না। বাংলাদেশ এখনও দুই দলীয় প্রভাবে চলছে- আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এক গুয়েমির পথ পরিহার না করলে বিএনপিকেই হয়তো একদিন হারিয়ে যেতে হবে। শক্তিশালী তৃতীয় একটা পক্ষ দাঁড়িয়ে গেলে বিএনপি বুঝতে পারবে কত ধানে কত চাল।

এরই মাঝে জাতীয় পার্টি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিরাট এক সমাবেশ করেছে। তারা তিনশত আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী দু’ বছর মাঠ ঘাট চষে বেড়ালে তারাও একটা অবস্থানে গিয়ে পৌঁছাবে নিশ্চয়ই। জনপ্রিয়তা বাষ্পসম  ব্যাপার। এটা উবে যেতে সময় নেয় না। আমরা আশা করবো জনপ্রিয়তার হুল্লোড়ে যেন খালেদা জিয়া ডুবে না যায়।

প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়ে বলেছেন আগামী নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে স্বচ্ছ নির্বাচন হবে। প্রধানমন্ত্রীর কথাকে বাতিল করে দেওয়ার কোনও যুক্তি নেই। সাধারণত প্রধানমন্ত্রী হালকা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার মানুষ নন। আমাদের জীবিত নেতাদের মাঝে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক খ্যাতি তারই বেশি। তিনি কখনও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তার খ্যাতি ম্লান করতে চাইবেন না। সুতরাং সব দলকেই আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার কাজ শুরু করা দরকার। যেন আগামী নির্বাচনটা আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক, তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হিসেবে পাই।

লেখক: সাংবাদিক ও শিক্ষক

[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ