X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘হাজার টাকার বাগান খাইলো দুই টাকার ছাগলে’

প্রভাষ আমিন
০৩ আগস্ট ২০১৭, ১৪:৪৬আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০১৭, ১৪:৫৫

প্রভাষ আমিন কবিরা সবসময় ভবিষ্যৎদ্রষ্টা হন। কবি নির্মলেন্দু গুণ অনেক আগেই আমাদের আত্মঘাতী অন্তর্কলহের কথা জানতেন। তাই তো তিনি তার বিখ্যাত কবিতা ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’তে লিখেছিলেন- ‘জানি, সেদিনের সব স্মৃতি মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত কালো হাত তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ কবির বিরুদ্ধে কবি, মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ, বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল, উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান, মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ...।’
কবি যদি এই কবিতাটি এখন লিখতেন, তাহলে তিনি নিশ্চয়ই আরও দুটি লাইন যুক্ত করতেন, ‘শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষক, সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাংবাদিক’। দেশে এখন ভানুমতির খেল শুরু হয়েছে। আমরা এখন আর কেউ কারও পক্ষে নই। সবাই সবার বিরুদ্ধে। সরকার মোলায়েম এক অস্ত্র তুলে দিয়েছে আমাদের হাতে। ৫৭ ধারা নামে এই অস্ত্র নিয়ে আমরা এখন একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে ওঠে পড়ে লেগেছি।
ঘায়েল করতে পারলেই যেন আনন্দ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ বাংলাদেশের সাংবাদিকতার সূতিকাগার। দেশের সেরা শিক্ষকরা এই বিভাগে পড়ান। দেশের অনেক তুখোড় সাংবাদিক এই বিভাগের ছাত্র। বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর যে কোনও আঘাতে প্রথম প্রতিবাদ হওয়ার কথা সাংবাদিকবতা বিভাগ থেকে। কিন্তু আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে কয়েকদিন আগে এই বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হকের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা করেন একই বিভাগের আরেক শিক্ষক আবুল মনসুর আহমেদ। সাংবাদিকতার একজন শিক্ষকও যখন ৫৭ ধারাকে নিজের মান বাঁচানোর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন, তখন এই ধারা টিকিয়ে রাখার যুক্তি তৈরি হয়।
আমরা মজা করে বলি, পাগলে কিনা বলে, ছাগলে কিনা খায়। সেই ছাগলের খাদ্য তালিকায় এবার উঠলো প্রতিমন্ত্রীর মানও। তাও একটি মরা ছাগল কিনা খেয়ে নিল প্রতিমন্ত্রীর মান! গত ২৯ জুলাই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ তার নিজ নির্বাচনি এলাকা খুলনার ডুমুরিয়ায় কয়েকজন দুস্থ ব্যক্তির মাঝে হাঁস, মুরগি ও ছাগল বিতরণ করেন।

জুলফিকার আলী নামের এক ব্যক্তির পাওয়া ছাগল ওইদিন রাতেই মারা যায় বলে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। ছাগলের মৃত্যুর খবরটি ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন খুলনার স্থানীয় দৈনিক প্রবাহের ডুমুরিয়া উপজেলা প্রতিনিধি আব্দুল লতিফ মোড়ল। ফেসবুকে শেয়ার করা নিউজের সাথে তিনি মৃত ছাগলের ছবি না দিয়ে প্রতিমন্ত্রীর একটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিয়েছিলেন। তাতেই নাকি হানি হয়েছে প্রতিমন্ত্রীর মান। একটি মৃত ছাগলের কত শক্তি, প্রতিমন্ত্রীর মান-সম্মান খেয়ে ফেলে! তা দেখে আর চুপ থাকতে পারেননি আরেক সাংবাদিক যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্পন্দন পত্রিকার ডুমুরিয়া উপজেলা প্রতিনিধি সুব্রত ফৌজদার। আবদুল লতিফ মোড়লের মতো দেশদ্রোহী সাংবাদিককে শায়েস্তা করতে সুব্রত ফৌজদারের মতো দেশপ্রেমিক সাংবাদিকই দরকার। প্রতিমন্ত্রী দাবি করছেন, তার মানহানী হয়নি। যদি হয়ও তাতে সাংবাদিকের পড়ান পোড়ে কেন? এই প্রশ্নটির উত্তর খুঁজছিলাম। পেয়েও গেলাম। মন্ত্রীর মানহানি হওয়ায় তিনি কেন মামলা করেছেন এই প্রশ্নের জবাবে সুব্রত বলেছেন, ‘আবদুল লতিফ মোড়ল প্রায়ই সরকারের বিরুদ্ধ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। স্যার (মন্ত্রী) এলাকায় অনেক ভালো কাজ করছেন। উনাকে নিয়ে নিউজ শেয়ার দেওয়ার কারণে কষ্ট পেয়েছি, ফলে আমি মামলা করেছি।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘আমরা বরাবরই আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত।’
মামলা করাতেই শেষ হয়নি। কত চাঞ্চল্যকর মামলার আসামীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর এই মামলা করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ রাত আড়াইটার সময় গিয়ে দেয়াল টপকে বাসায় ঢুকে একজন সাংবাদিককে ধরে নিয়ে আসে। ৫৭ ধারা নিয়ে এই ‘ছাগলামির’ পর আমার খালি একটা গান গাইতে মন চাইছে, ‘সাজিয়ে বাগান বসে আছি আসবে তুমি বলে, আমার হাজার টাকার বাগান খাইলো দুই টাকার ছাগলে’।
‘আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত সুব্রত ফৌজদারের মতো সাংবাদিকরা এভাবেই মন্ত্রী-এমপিদের সাজানো বাগান তছনছ করে দেবে। ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগের মহামারী দেখে মনে হচ্ছে, আইনটির মরার সময় হয়ে গেছে। মজাটা হচ্ছে, হয়তো একটি মরা ছাগলই আইনটির মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে দিলো।

একটা জিনিস আমার খুব ভালো লাগছে। আমরা নিম্ন মধ্যবিত্ত দেশ হওয়ার সাথে সাথে আমাদের মান-অপমান বোধও বেশ টনটনে হয়ে গেছে। পান থেকে চুন খসলেই আমাদের মানহানি হয়ে যায়। আর মানহানি হলেই টুক করে ৫৭ ধারায় মামলা ঠুকে দেই। আর মামলা হলেই পুলিশ খপ করে ধরে নিয়ে যায়। আমাদের মান-সম্মানবোধ যে বেড়ে গেছে, তার প্রমাণ ৫৭ ধারায় মামলার সংখ্যা ছয় মাসের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এই ধারাটির মূল ভিক্টিম সাংবাদিকরা। তবে শুধু সাংবাদিকরাই নয়, এই ধারার শিকার শিক্ষক, ছাত্র, আইনজীবী, শ্রমিক থেকে শুরু করে সব শ্রেণি পেশার মানুষকেই ঘায়েল করা সম্ভব এবং হচ্ছে।
সাংবাদিকদের সংগঠন বিএফইউজে, ডিইউজে, সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াব, সম্পাদকদের সংগঠন এডিটর্স কাউন্সিল, টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাটকো- সবাই ৫৭ ধারা বাতিলের দাবি তুলেছেন। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ৫৭ ধারার পক্ষে অন্তত দু’জন মানুষ আছেন- তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং আমি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যেমন বলেছেন, সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে আইসিটি আইন করা হয়েছে। আমি তার সাথে একমত। ইন্টারনেটে নানা ধরনের হেনস্থা থেকে মানুষকে বাঁচাতে, বিশেষ করে নারীদের রক্ষা করতে; ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা অনলাইন থেকে মানুষকে বাঁচাতে, হলুদ সাংবাদিকতার কবল থেকে সাধারণ মানুষের মান-সম্মান রক্ষা করতে একটা আইনি সুরক্ষা থাকা দরকার। কিন্তু ঘটেছে উল্টো ঘটনা। ৫৭ ধারা হয়ে উঠেছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে গলা টিপে হত্যা করার প্রধান হাতিয়ার। মানুষকে বাঁচানোর বদলে হয়রানি করছে বেশি। যে ছুরি আপনি কিনেছিলেন, অপারেশন করে মানুষের জীবন বাঁচাবেন বলে; সেই ছুরি এখন পড়েছে ছিনতাইকারীর হাতে, যাতে মানুষের জীবন বাঁচানোই দায়। সাংবাদিক-সম্পাদকদের সকল সংগঠনের দাবি উপেক্ষা করে তথ্যমন্ত্রী গোয়ারের মতো ৫৭ ধারার পক্ষে সাফাই গেয়ে যাচ্ছেন।

যার হয়ে ওঠার কথা সাংবাদিকদের অভিভাবক, তিনিই কিনা ৫৭ ধারায় সাংবাদিকদের হয়রানি করার বিষয়টি দূর করা তো দূরের কথা, স্বীকারই করছেন না। অথচ হওয়ার কথা ছিল উল্টো। অন্য মন্ত্রীরা হয়তো ৫৭ ধারার পক্ষে থাকবেন, আর তথ্যমন্ত্রী থাকবেন বিপক্ষে।

যেখানে প্রয়োগ করার কথা, সেখানে প্রয়োগ না করে ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগই হচ্ছে বেশি। আর এই আইনের অপপ্রয়োগের আশঙ্কা করা হচ্ছিল শুরু থেকেই। এমনিতে বিএনপির কোনও উদ্যোগকে ভালোভাবে এগিয়ে নেয় না আওয়ামী লীগ। কিন্তু ক্রসফায়ারের নামে মানুষ খুন আর ৫৭ ধারা- বিএনপির দুটি অপকর্মকে দারুণভাবে এগিয়ে নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। আ্ওয়ামী লীগ আইসিটি আইনের সংশোধন করেছে, তবে তাতে ৫৭ ধারাকে আরও কঠোর করা হয়েছে। তথ্যমন্ত্রী ৫৭ ধারার পক্ষে সাফাই
গাইলেও আইনমন্ত্রী বলছেন, ডিজিটাল সুরক্ষা আইন তৈরি হচ্ছে এবং সেটা হলে থাকবে না আইসিটি আইন। কিন্তু সাজার পরিমাণ কমানোর সুপারিশ থাকলেও নতুন আইনের ১৯ ধারায় নাকি পুনঃস্থাপিত হচ্ছে ৫৭ ধারা। ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে পড়ার শঙ্কায় আছি আমরা। তবে আমি বিশ্বাস করি, তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে মানুষকে হয়রানি থেকে বাঁচানোর জন্য অবশ্যই একটা আইন দরকার। যাতে ভুয়া নিউজ মানুষকে হয়রানি করা না যায়, ফেসবুকে যা ইচ্ছা তা লিখে যাতে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা না হয়।

আমার ধারণা আগামী নির্বাচনের আগে ৫৭ ধারা থেকে পিছিয়ে আসবে না সরকার। নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে ৫৭ ধারার চেয়ে মোক্ষম কোনও অস্ত্র নেই এমপিদের হাতে। হবিগঞ্জের এমপি আবদুল মজিদ খান আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন নাও পেতে পারেন, এমন নিউজ প্রকাশের অপরাধে জেল খাটতে হয়েছে সত্তরোর্ধ বয়সের স্থানীয় সাংবাদিক গোলাম মোস্তফাকে। ৩০ কোটি টাকার কাজ না করে বিল তুলে নেওয়া সম্পর্কিত একটি নিউজ শেয়ার করে সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজির মানহানি করার অপরাধে মামলা হয়েছে সাংবাদিক আজমল হক হেলালের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, আজমল হক হেলালের প্রতি ফেসবুকে সমবেদনা জানানোয় আরও দুজনের বিরুদ্ধে পরে মামলা হয়েছে। মজাটা হলো, নিউজ হয় এমপি বা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। আর মামলা করেন তার চামুন্ডারা। কিন্তু এমপির বিরুদ্ধে নিউজ হলে তাতে তার চামুন্ডাদের লাগে কেন বুঝি না।

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে মন্ত্রী-এমপিদের নানান দুর্নীতির খবর প্রচার হতে পারে। এটা ঠেকানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, অপকর্ম না করা। কিন্তু তারা বেছে নিয়েছে, ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখার কৌশলে। মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে নিউজ করা, সে নিউজ শেয়ার করা, সে শেয়ারে মন্তব্য করা বা লাইক দেয়াও অপরাধ। গণমাধ্যম তো স্বেচ্ছা নিয়ন্ত্রিত, এভাবে যদি সামাজিক মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে তো পোয়াবারো। আমরা রাজনীতি নিয়ে কোনও নিউজ করবো না, কোনও নিউজ শেয়ার করবো না, কোনও স্ট্যাটাস দেবো না, কোনও স্ট্যাটাসে মন্তব্য করবো না, লাইক দেবো না। মৃত ছাগল নিয়ে মরা কান্না জুড়ে দেবো না।

ব্যস, তাহলেই সব ফকফকা। তাহলেই আর ৫৭ ধারার মামলা হবে না। ফেসবুক হবে ফুল-ফল, লতাপাতাময়। আমরা কুমির চাষের সম্ভাবনা নিয়ে জ্ঞানগর্ভ স্ট্যাটাস দেবো। সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপিদের চামুন্ডাদের ৫৭ ধারায় মামলা করার ধরন দেখে মনে হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা করাটাই অপরাধ।

৫৭ ধারার অপব্যবহারের সুযোগটা এর ভেতরেই রয়ে গেছে-‘(এক) কোনো ব্যক্তি যদি ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনও ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনও ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ। (দুই) কোনও ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক চৌদ্দ বছর এবং অন্যূন সাত বৎসর কারাদণ্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’ ব্যস এই ধারার অধীনে প্রতিদিন আসলে শত শত মামলা করা সম্ভব। সকল নিউজ, সকল স্ট্যাটাসই কারো কারো বিরুদ্ধে যায়।

মন্ত্রী-এমপিরা অনেক দয়ালু। তারা তো প্রতিদিন মামলা করছেন না। যখন ধৈর্য্যের বাধ ভেঙে যায়, তখনই কেবল তারা চামুন্ডাদের লেলিয়ে দেন। ৫৭ ধারায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে গলা টিপে হত্যা করা হলেও সংবিধানে কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা আছে। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচণা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে, ক. প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব-প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের, এবং খ. সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার, নিশ্চয়তা দান করা হইল।’ এখন সংবিধান বড় না ৫৭ ধারা বড়।

৫৭ ধারা দিয়ে সরকার যে ভয়ের আবহ তৈরি করতে চাচ্ছে, ভিন্নমতকে  দমন করতে চাচ্ছে, এই ডিজিটাল বাংলাদেশে সেটা আর সম্ভব নয়। সত্য চেপে রাখার চেষ্টা নয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেই জনগণের কাছে যেতে হবে। ভয় দেখিয়ে যে জয় করা যায় না, এটা একটু কেউ তাদের বুঝিয়ে বলুন প্লিজ।

এই লেখাটি শেষ করার পর জানলাম, ৫৭ ধারার কোনও মামলা নিতে পুলিশ সদর দফতরের অনুমতি নিতে হবে। যাক আস্তে আস্তে শুভ বুদ্ধির উদয় হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ যেভাবে সরকারের আজ্ঞাবহ, তাতে মন্ত্রী-এমপিদের ‘ডিজায়ার’-এর বাইরে তারা যেতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। তাই আপাতত পুলিশ সদর দফতরের অনুমতির কথা বলে একটা রক্ষাকবচ তৈরি করা গেলেও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ৫৭ ধারা পুরোটাই বাতিল করতেই হবে। আর সবার মতামত নিয়ে ডিজিটাল সুরক্ষা আইন করতে হবে।

লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ
[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে: ওবায়দুল কাদের
ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে: ওবায়দুল কাদের
লেবাননের ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২
লেবাননের ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২
হামলার ঘটনায় মামলা করায় এবার বোমা হামলা, আহত ১৫
হামলার ঘটনায় মামলা করায় এবার বোমা হামলা, আহত ১৫
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ