X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘তুই ভালো না, মুই ভালো’

বিভুরঞ্জন সরকার
১২ নভেম্বর ২০১৭, ১৫:১৩আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০১৭, ১৫:১৮

বিভুরঞ্জন সরকার যে যাই বলুন না কেন, আমাদের দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এখন আর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, তারা পরস্পর শত্রু। আওয়ামী লীগ মনে করে বিএনপি যেমন দেশের শত্রু, তেমনি আওয়ামী লীগেরও শত্রু। আবার বিএনপিও মনে করে আওয়ামী লীগ দেশ এবং বিএনপির দুশমন। এই দুই দলের শত্রুতা দিন দিন কেবলই বাড়ছে। আওয়ামী লীগ চায় বিএনপি শুধু দুর্বল ও শেষ হয়ে যাক। আর বিএনপি কামনা করে আওয়ামী লীগের ধ্বংস। অবশ্য দুই দলের চাওয়ার মধ্যে মৌলিক কিছু পার্থক্য আছে। এই ভিন্নতা দুই দলের জন্ম ও বিকাশের ধারার মধ্যেই নিহিত আছে। আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায়, সাধারণ মানুষের চাহিদা পূরণের প্রয়োজনে। আর বিএনপির জন্ম হয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক শাসকের গায়ে বেসামরিক লেবাস পরিয়ে তার ইচ্ছা তথা স্বার্থ পূরণের উদ্দেশে। তাই আওয়ামী লীগের কাছে মানুষের স্বার্থ আগে, পরে ক্ষমতা। আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমান তাই নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হয়েও বলতে পারেন, আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, বাংলার মানুষের অধিকার চাই। আর বিএনপির কাছে প্রধান হলো ক্ষমতা, তারপর জনস্বার্থ। বিএনপি জনগণের স্বার্থে কোনও আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে তেমন নজির খুব একটা পাওয়া যাবে না।

এই যে দুটি বড় দল একে অপরের শত্রু হয়ে গেলো, কিভাবে এটা হলো? এর জন্য কোন দলের দায় বেশি? এই প্রশ্নের জবাবও পাওয়া যাবে ভিন্ন ভিন্ন। কেউ বলবেন, আওয়ামী লীগই বিএনপিকে দূরে ঠেলেছে, বৈরি করে দিয়েছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা, তাকে পাকিস্তানের চর বানানো, বঙ্গবন্ধুর খুনের সঙ্গেও তাকে জড়ানো – ইত্যাদি ঘটনা বিএনপিকে আওয়ামী লীগ বিমুখ করে তুলেছে। আবার অন্যরা বলবেন, সব দোষ বিএনপির। বিএনপিই প্রথম জিয়াকে বঙ্গবন্ধুর প্যারালাল দাঁড় করাতে চেয়েছে। বাঁশের চেয়ে কঞ্চিকে বড় করতে গিয়ে বিপত্তি ঘটিয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা চাননি, জিয়ার বেতার ঘোষণাই স্বাধীনতা যুদ্ধ ত্বরান্বিত করেছে – এমন সব ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও বালখিল্য প্রচারণা আওয়ামী লীগকে পীড়িত করেছে, আহত করেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রধান বেনিফেশিয়ারি জিয়াউর রহমান। জিয়া বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত খুনিদের বিচারের আওতামুক্ত রেখে, বিদেশে দূতাবাসে চাকরি দিয়ে নিজেকে তাদের মিত্র হিসেবেই প্রমাণ করেছেন। এ নিয়ে বিতর্ক করা অর্থহীন।

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ক্ষমতায় এসেও বিএনপি আওয়ামী লীগকে ‘নির্মূলের’ ধারা থেকে সরে আসেনি। শেখ হাসিনাকে হত্যা-চেষ্টার মতো জঘন্য কাজেও বিএনপি নেতৃত্বের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের অনেক জনপ্রিয় নেতাকে বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপিকে দুর্বল করতে বা দেখতে চায় আওয়ামী লীগ কিন্তু সেটা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায়। হত্যা-খুনের মাধ্যমে নয়।

দেশে বিদ্বেষপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির পেছনে কোন দলের দায় বেশি বা কম তা নিয়ে বিস্তর বাগ-বিতণ্ডা করা যেতে পারে, কিন্তু কোনও বিতর্কই দুই দলকে আর কাছাকাছি আনতে পারবে বলে মনে হয় না। দুই দলের পথ আগাগোড়াই দুই দিকে। এদের একমুখো করার সাধ্য কারও নেই। সে জন্যই দেশের রাজনীতিতে নিরবচ্ছিন্ন শান্তি-স্বস্তি বজায় থাকার সম্ভাবনাও কম। দেশের মানুষকে সারাক্ষণ টেনশনে থাকতে হবে ক্ষমতার রাজনীতির উন্মাদ প্রতিযোগিতার ফলাফল কখন কী হয় তা দেখার জন্য।

দুই.

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। বিশেষ করে বড় দুই দল– আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি নেতাদের মধ্যে বাগযুদ্ধ জমে ওঠার লক্ষণ প্রতিদিনই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ‘তুই ভালো না, মুই ভালো’ ঢঙের কথা চালাচালি জোরেসোরেই চলছে। একদলের সাধারণ সম্পাদক এখন যা বলছেন, কতক্ষণ পরেই অন্যদলের মহাসচিব তার বিরোধিতা করছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রচুর কথা বলছেন, এবং স্ববিরোধী কথাও বলছেন। তিনি কেবল বিএনপির বিরুদ্ধে শব্দবোমা নিক্ষেপ করছেন তা নয়। নিজ দলের বক্ষভেদী তীরও তিনি মাঝেমধ্যে ছুঁড়ছেন। সম্প্রতি এক সভায় তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগকে উল্লেখ করেছেন ‘সাইনবোর্ড সর্বস্ব’ সংগঠন হিসেবে। আর ছাত্রলীগ সম্পর্কে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ও সরকার খেটেখুটে যে সুনাম অর্জন করে, ছাত্রলীগের একদিনের অপকর্মেই তা ধ্বংস হয়ে যায়?’

কার উদ্দেশে তিনি এই ‘মহৎ’ বাণী দিলেন? এ তো সেই আকাশের ঠিকানায় চিঠি লেখার মতো। তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক। দলের স্বার্থ রক্ষা করা তার দায়িত্ব। সাইনবোর্ড সর্বস্ব এবং ধ্বংসাত্মক দুইটি সহযোগী সংগঠনের উশৃঙ্খল কর্মী-সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণের কোনও উদ্যোগ কিংবা কার্যকর কোনও পদক্ষেপ তিনি নিয়েছেন কি? বক্তৃতায় চটকদার কথার চাটনি মিশিয়ে তিনি বেহুদা পপুলারিটি নিতে চাইলেও একসময় এটা ব্যাকফায়ার করবে।

ওবায়দুল কাদেরের বক্তৃতা শুনে কখনও কখনও মনে হয় তিনি নিজ দলের চেয়ে বিএনপির ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি চিন্তিত। যেমন সেদিন বলেছেন, আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপি মুসলিম লীগের পরিণতি বরণ করবে। এমন ভবিষ্যৎবাণী তিনি আগেও করেছেন। বিএনপি যদি মুসলিম লীগের পরিণতি বরণ করে তাহলে তো ওবায়দুল কাদের সাহেবদের খুশি হওয়ার কথা। বিএনপির ভালো-মন্দ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে নিজের দলের ভেতরটা একবার ভালো করে পর্যবেক্ষণ করেন না কেন?  নিজের ঘরের দুর্গন্ধ দূর না করে পরের ঘরের ময়লা দেখা খুব ভালো কাজ কি? স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের কথা নিজেই বলেছেন। মূল দল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা কি খুব ভালো? এমন কোনও জেলা আছে যেখানে আওয়ামী লীগ অন্তর্কলহে জর্জরিত নয়? আগামী নির্বাচনে একক প্রার্থী মনোনয়ন দিতে কী বেগ পেতে হবে তা কি তিনি জানেন? আওয়ামী লীগ যে সারাদেশে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে, সেই সংকট নিরসনের কথা ভেবেছেন কি?

ওবায়দুল কাদের একদিন বললেন, বিএনপির বুদ্ধিজীবীরাই বলেন দলটি মাজাভাঙা, হাঁটুভাঙা, কোমরভাঙা। বিএনপিকে তিনি এলোমেলো পার্টি, নালিশ পার্টি বলেও উল্লেখ করেছেন। প্রায়ই এরকম করেন। দলবাজরা সম্ভবত এতে খুশি হয়। কিন্তু আবার ভিন্ন কথাও তিনি বলছেন। সেদিন তিনি বলেছেন, সাংগঠনিকভাবে এলোমেলো হলেও জনসমর্থনের দিক থেকে বিএনপি দুর্বল ভাবা ঠিক হবে না। এক মুখে এত কথা বললে মানুষ বিশ্বাস করবে কোনটা?

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কক্সবাজার আসা-যাওয়ার পথে ফেনীতে হামলার ঘটনা নিয়ে দুই দলের সাধারণ সম্পাদক/মহাসচিব কথার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব পাল্টপাল্টি বক্তব্যে মানুষ কি খুব খুশি হচ্ছে? নাকি বিরক্ত হচ্ছে? খালেদা জিয়ার বহরে থাকা সাংবাদিকদের গাড়ি ভাঙচুর ও হামলার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির কোনও নেতা কেন আহত হলেন না? তিনি (খালেদা জিয়া) ও তার গাড়ি অক্ষত আছে। আহত হলো সাংবাদিক। সাংবাদিকদের ওপর হামলা হলে নিউজটা বড় হবে, চাঞ্চল্যকর হবে, দেশে-বিদেশে সাড়া জাগাবে। এ জন্য বিএনপি পরিকল্পিতভাবে ওই হামলা করেছে।

ওবায়দুল কাদের হয়তো ভেবেছেন, তার এই বক্তব্যে বিএনপি কুপোকাত হয়ে যাবে। মানুষ ভাববে, তাইতো, বেগম জিয়া যেহেতু আহত হননি, তাই হামলার ঘটনা সাজানো। কিন্তু তার এই যুক্তিজাল অনেকের কাছেই খুব মজবুত বলে মনে হয়নি। মনে আছে তো, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর বিএনপিও প্রশ্ন তুলেছিল, শেখ হাসিনা যেহেতু প্রাণে বেঁচেছেন সেহেতু হামলাটা আওয়ামী লীগই ঘটিয়েছে!

এবার দেখুন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের জবাব। তিনি বলছেন, খালেদা জিয়া রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দেওয়ার জন্য উখিয়া গেলেন। পথিমধ্যে লাখ লাখ মানুষ সাড়া দিলো। ফেনীতে গিয়ে দেখা গেলো, তার গাড়িবহরের পেছন দিকে সাংবাদিকদের গাড়িতে আক্রমণ হলো। আমাদের কর্মীদের গাড়িও আক্রমণ হলো। ১৩টি গাড়িতে আক্রমণ করে ১৪জনকে আহত করে। তিন জনকে গাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরমধ্যে একজন নিখোঁজ ছিলেন দুই-তিন ঘণ্টা। পরে পুলিশ তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করেছে। ফেরার সময়ও একই ঘটনা। আমার গাড়ির পাশেই ককটেল বিস্ফোরণ হলো। তারপর উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থাকা দুটো বাসের মধ্যে শব্দ হলো, আগুন লেগে গেলো মুহূর্তের মধ্যে। তাতে বোঝা গেলো, সে আগুনটা তৈরি ছিল। এরপরও তারা অবলীলায় বলে দিচ্ছেন এবং গ্রেফতার করছেন। সরকার যদি একটা অসত্যকে সত্য প্রমাণ করতে চায়, তাহলে তো সে সরকারকে কখনও বিশ্বাস করা যায় না।

বিএনপি কি সরকারকে খুব বিশ্বাস করে? বিএনপি যেমন সরকারকে বিশ্বাস করে না, তেমনি সরকারও বিএনপিকে বিশ্বাস করে না। এই বিশ্বাসের সংকট এখন সাধারণ মানুষের মধ্যেও ছড়িয়েছে। রাজনৈতিকভাবে মানুষ বিভক্ত। অনুসারীরা নিজ নিজ নেতার কথায়ই সত্য বলে মানবে। যার হাতে তামাকের গন্ধ সেও দিব্যি বলবে, আমি ঘুমিয়ে ছিলাম ‘অমুক’ আমার হাতে কল্কে রেখে তামাক খেয়ে গেছে!

এতো গেলো দুই দলের অবস্থানগত ভিন্নতা। এবার দেখুন, বিএনপির মধ্যও কেমন ভিন্নতা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ৩ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, যত প্রতিকূল পরিবেশই আসুক না কেন, বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। নির্বাচনের আগে সরকার সংলাপ-সমঝোতা করতে বাধ্য হবে। কারণ বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন বিএনপিবিহীন হবে না।

খুব ভালো কথা। জনপ্রিয়তায় আস্থা থাকলে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়েই তা প্রমাণ করবে। জনপ্রিয় দল কখনও নির্বাচন বর্জনের উছিলা খোঁজে না। ১৯৭০ সালে ইয়াহিয়ার অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার প্রমাণ দিয়ে গেছেন। কিন্ত মওদুদের প্রত্যয় ফুটো করে দিয়েছেন তার দলের আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মওদুদ আহমদের বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেছেন, আমি এখানে একটু সংশোধন করতে চাই –দেশে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিকূল অবস্থা নিরসন না করে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। জনগণের ভোটে কোনও ধরনের বাধার প্রসঙ্গ থাকলে সে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি।

মানে কী দাঁড়ালো? নির্বাচনে অংশ নেওয়া-না নেওয়া নিয়ে বিএনপিতে মতভিন্নতা আছে। আমাদের নেতারা কথা বলতে খুব পছন্দ করেন। তাদের কথা শুনে সাধারণ মানুষ রাজনৈতিকভাবে সচেতন না হয়ে বরং গোলক ধাঁধাঁয় পড়েন।

লেখক: কলামিস্ট

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘আমার স্ত্রী শুধু অন্যের পরামর্শ শোনে’
‘আমার স্ত্রী শুধু অন্যের পরামর্শ শোনে’
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
লিভারপুলের নতুন কোচ স্লট!
লিভারপুলের নতুন কোচ স্লট!
ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে: ওবায়দুল কাদের
ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে: ওবায়দুল কাদের
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ