X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কার কোপে কার মাথা...

শুভ কিবরিয়া
২১ মার্চ ২০১৬, ১৭:১০আপডেট : ২১ মার্চ ২০১৬, ১৭:১২

Shuvo Kibriaবাংলাদেশ ব্যাংকের সুরক্ষিত প্রযুক্তি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা ভেদ করে টাকা চুরির ঘটনা এখন অনেকদূর গড়িয়েছে। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক, সুইফট, ফিলিপাইনের সিনেট সর্বত্র বহু জল ঘোলা হলো। আমরা সাবেক গভর্নরের ক্রন্দনধ্বনি শুনলাম। অর্থমন্ত্রীর ক্রুদ্ধতাও টের পেলাম। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে দেশি-বিদেশি নানান এজেন্সি, নানান বিশেষজ্ঞ দলের ব্যাপকতর এবং বহুমাত্রিক এবং বিশ্লিষ্ট তদন্ত কার্যক্রম দেখতে পাচ্ছি। আমরা একজন কথিত প্রযুক্তিবিদ তানভীর জোহা-যিনি এ বিষয়ে বিস্তর কথা বলেছিলেন তার উধাও হওয়ার খবর জেনেছি। আমরা এখন বুঝতে পারছি ফিলিপাইনে চলে যাওয়া টাকা উদ্ধার খুব সহজ বিষয় নয়। এসব নানান বিষয় ও ঘটনা পর্যালোচনা করলে একটা দিক খুব সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে, ‘আমাদের সক্ষমতা’ বরাবরের মতো প্রশ্নবিদ্ধই শুধু না আমাদের সামগ্রিক প্রাতিষ্ঠানিকতার দশা বড়ই বেহাল। বড়ই করুণ।
আমরা মুখে বড় আওয়াজ তুলি বটে, আমাদের রাজনৈতিক আলোচনায়, আমাদের বিভাজিত রাজনৈতিক বিবেচনায় আমরা আমেরিকা-রাশিয়া-ভারত-চীন সবাইকে শত্রুজ্ঞানে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিই বটে কিন্তু বড় দুর্বল হয়ে পড়ছি আমরা দিনকে দিন নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্যের বিবেচনায়। বাংলাদেশ ব্যাংক তার বড় উদাহরণ। প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই ব্যাংক যে দুর্বলতা ও অক্ষমতা দেখিয়েছে তাতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব নিয়ে অনেক প্রশ্ন তোলা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পদত্যাগী সাবেক গভর্নর এই দশাকে ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ বলে চিহ্নিত করেছেন।
দুই.
একটা বড় ঘটনা ঘটলে দরকার হয় সমন্বিত উদ্যোগ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষেত্রে এর নানরকম ব্যতিক্রম দেখা গেল। নতুন গভর্নর নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার তাড়াহুড়া করলো। কোনও সার্চ কমিটি গঠন করা প্রয়োজন বোধ করলো না। অথচ দুজন ডেপুটি গভর্নর নিয়োগের বেলায় সার্চ কমিটির প্রয়োজন পড়লো। আবার সরকার একটা উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন সিভিল তদন্ত কমিটি গঠন করলো ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে। তারা কাজ শুরু করার আগেই নানান সংস্থা নানাভাবে তদন্ত শুরু করলো। বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা চুরি হয়েছে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে। কিন্তু এখন কি আমরা নিশ্চিত যে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যসব গোপনীয় তথ্য সুরক্ষিত থাকছে। নানাজনের হাত বেয়ে দেশের অর্থনৈতিক খাতের এই বিশেষায়িত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটি যে আরও নাজুক হয়ে উঠছে না, তা কি আমরা বলতে পারি?
তিন.
আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক এই সক্ষমতা অর্জনকে আমরা আমাদের রাষ্ট্রবিনির্মাণ প্রক্রিয়ার অংশ করে তুলতে পারিনি। হালে নির্বাচন কমিশনের দিকে তাকালেই এই দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে উঠবে। দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হচ্ছে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন বলে এর চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। এরকম প্রথায় নির্বাচন হলে এখানে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে। থাকবে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী। এরকম একটি নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের প্রথম কাজ হচ্ছে সব দলের জন্য, সব প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। বড় কাজ হচ্ছে নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা। সকল প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনি প্রচার নির্বিঘ্নে করা। সকল প্রকার সহিংসতা ও প্রাণহানির সুযোগ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা।
এই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের সুযোগ ছিল তার নিরপেক্ষতা, দক্ষতা ও সক্ষমতা প্রকাশের চেহারাটা জনসম্মুখে তুলে ধরার। যেহেতু পর্যায়ক্রমে, ধাপে ধাপে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেহেতু নির্বাচন কমিশন সুচারুরুপে তার যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারতো সদিচ্ছা থাকলেই। কিন্তু বাস্তবে তার ছিটেফোটাও দেখা যাচ্ছে না। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে এই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন দেশের মানুষের শ্রদ্ধা পাওয়া প্রতিষ্ঠান হিসাবে নিজেকে মেলে ধরতো পারতো খুব সহজেই। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তা পারছে না কিংবা হেলায় সে সুযোগ হারাচ্ছে তার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতায়।  
নীতি নিয়ম ভঙ্গ করে সরকারি দলকে খুশি করাই কোনও প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা হতে পারে না। বরং সকল বিরূপতার মধ্যে যারা দুর্বল, যারা বিপদগ্রস্ত তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দেওয়াই সক্ষম প্রতিষ্ঠানের দৃশ্যমান কাজ হওয়া উচিত। এভাবেই রাষ্ট্র শক্তিমান হয়ে উঠে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কাজের দিকে চোখ রাখলে বলা যায় আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা দিনকে দিন তলানিতে ঠেকছে। নির্বাচন কমিশন তার দুর্বল ও নতজানু ভূমিকা দিয়ে তার যোগ্যতার যে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করছে তাতে ভবিষ্যতে একটা ভালো নির্বাচন করতে হলে হয়তো এই কাজের জন্য বাইরের কোনও প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া করে আনার কথা উঠবে। এখন যেমন আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষেত্রে বিদেশি বিশেষজ্ঞ ভাড়া করছি, কিংবা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিদেশি সংস্থাকে ভাড়া করছি হয়তো ভবিষ্যতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সেইপথেই পা বাড়াতে হবে! এই ভাবনা কোনও দেশের রাষ্ট্রিকে সক্ষমতার জন্য সুখকর খবর নয়।

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ