X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এখনও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি বীরাঙ্গনা বিভা রানী

বরিশাল প্রতিনিধি
১৬ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৪:৪৭আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৪:৫০

প্রতিবন্ধী ছেলের সঙ্গে বিভা রানী

স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরেও গৌরনদীর বীরাঙ্গনা বিভা রানী মজুমদার (৬১) আজও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি। বীরাঙ্গনা হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের পর তার স্বামী তাকে নিয়ে ঘর করতে রাজি ছিলেন না। সম্পদ বলতে তার রয়েছে গৌরনদী উপজেলার টরকী চর এলাকায় বাবা উমেশ চন্দ্র মণ্ডলের সাড়ে চার শতক জমি এবং একটি টিনের ঘর। বিভা রানী কাপড় সেলাই করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন। তাই সবাই তাকে ডাকে সেলাই দিদিমনি।

সংসারের চাকা সচল রাখতে বীরাঙ্গনা বিভা রানীকে মাঝে মধ্যে ধাত্রীর কাজও করতে হয়।

মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ আসতেই বিভা রানী অনেকটা আনমনা হয়ে বলতে থাকেন, ‘আমার বাবা টরকী চরে বহুদিন ধরে বসবাস করেছেন। উনি ক্ষুদ্র ব্যবসা করতেন। এখানে আমরা ৪ বোন ও এক ভাই ছিলাম। ১৯৭১ সালে আমি টরকী হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিলাম। জ্যৈষ্ঠ মাসে এখানে পাকিস্তানি মিলিটারিদের নিয়ে আসে স্থানীয় রাজাকাররা। চারিদিকে আগুন দিতে শুরু করে। লোকজন যে যেদিক পারে ছোটাছুটি করছিল। আমার বাবা তখন পর্যন্ত বাড়িতে ছিলেন। এরপর বাবা বাড়ি থেকে আমাদের নিয়ে কালকিনির রমজানপুরের দিকে ছুটলেন। তবে পালাতে গিয়ে আমরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ি। আমিসহ বেশ কিছু মেয়ে রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ে যাই। সেদিন ওদের হাত থেকে আমরা কেউ রেহাই পাইনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি নির্যাতনের কারণে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে নির্যাতকরা রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। পরবর্তীতে বাবা আমাকে খুঁজে পেয়ে ঘরে নিয়ে আসেন। বাড়ি ফিরে দেখি একমাত্র আমার চাচাদের বসত ঘরটি ছাড়া আমাদের বাড়ির ১৪টি ঘর পাকিস্তানি আর্মিরা সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দিয়েছে।

বাবা শ্রাবণ মাসে আমাদের গ্রামের অনুকুল মজুমদার সঙ্গে আমার বিয়ে দেন। পরে আমরা ভারতে চলে যায়। দেশ স্বাধীনের পর সবাই আবার দেশে ফিরে আসি। দেশে ফিরে আসার পর আমার স্বামী আমার ওপর হওয়া নির্যাতনের কাহিনী জানতে পেরে একদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে উধাও হয়ে যায়। এরপর আমার স্বামী আবার ফিরে আসে। ১৯৮৮ সালে ছেলে সাগর জন্মাবার চার মাস পর আমাকে ত্যাগ করে ভারতে চলে যান।’

সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিবন্ধী ছেলে সাগরকে নিয়ে কোনও রকমে বেঁচে আছেন বিভা রানী।

তিনি বলেন, ‘আমি আগে তাঁতে লুঙ্গি বুনতাম। ছোটবেলা থেকেই সেলাইয়ের কাজ করতাম। তাই এখন অর্ডারে জামা-কাপড় সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করছি। মাঝখানে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবেও আমি ১০ বছর কাজ করেছি। এ  কারণে আমাকে আশপাশের এলাকায় ধাত্রীর কাজও করতে হয়।’

বীরাঙ্গনার হওয়ার বিষয়টি এলাকাবাসী জানলেও অবিবাহিত বোন ও ভাইয়ের সম্মানহানির কথা ভেবে ঘটনাটি স্থানীয় ৩/৪ জন মুক্তিযোদ্ধা ছাড়া কারও কাছে বলেননি বিভা রানী। 

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের সময়ে সম্ভ্রম হারানোর কারণে আমার সংসার ভেঙে গেছে। আমি বীরাঙ্গনা হয়েও স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাইনি। সরকারিভাবে আমি কোনও সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। এমনকি আমাদের কোনও তালিকাও করা হয়নি। অথচ আমার জীবন কাহিনী স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানেন।’

উপজেলার বার্থী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আলহাজ আবদুল হালিম সরদার বলেন, ‘বিভা রানী মজুমদার স্বীকৃতি পেতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের এখন পর্যন্ত আবেদন করেননি। আবেদন করলে যাচাই ব্ছাই করে কেন্দ্র সুপারিশ পাঠানো হবে।’

 

/এসটি/

সম্পর্কিত
নানা আয়োজনে রাজধানীবাসীর বিজয় উদযাপন
বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা
জাবিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী
সর্বশেষ খবর
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর যুবরাজ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর যুবরাজ
অবশেষে মুক্তির বার্তা
অবশেষে মুক্তির বার্তা
এমপিপুত্র প্রার্থী হওয়ায় ‘আগুন জ্বলছে’ সেলিম প্রধানের গায়ে
এমপিপুত্র প্রার্থী হওয়ায় ‘আগুন জ্বলছে’ সেলিম প্রধানের গায়ে
সর্বাধিক পঠিত
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন