X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাতৃভাষায় শিক্ষা: উপকরণ আছে, শিক্ষক নেই

জিয়াউল হক, রাঙামাটি
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:১৩আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১১:২৬

মাতৃভাষায় পড়বে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা যাতে নিজের ভাষায় পড়ালেখা শুরু করতে পারে সেজন্য বিপুল উৎসাহে শুরু করা হয়েছিল  ‘মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম’। তবে  শুরুতেই এই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কিছুটা দেরিতে শিক্ষা উপকরণ পেলেও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাবে মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি এখনও। এ কারণে সংশ্লিষ্টরা এই উদ্যোগের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

সরকার গত ১ জানুয়ারি বই উৎসবে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষায় শিক্ষক সহায়িকা, শিখন চর্চা খাতা ও মূল পাঠ্য বই আনুষ্ঠানিকভাবে বিতরণ করে। তবে রাঙামাটির ১০ উপজেলার ছয় শতাধিক বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির মাতৃভাষার এসব বই পৌঁছাতে কিছুটা দেরি হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।  উপকরণ পৌঁছানোর পর এখন উদ্বেগ পাঠদান নিয়ে।  উপজেলাগুলোতে খবর নিয়ে দেখা যায়, শুধু প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাবে এখন পর্যন্ত কেউ শিক্ষা কার্যক্রম শুরুই করতে পারেনি।

কাউখালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পরিণয় চাকমা বলেন, ‘বই তো পেয়েছি। কিন্তু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারছি না। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিন্ধান্ত নেবো কীভাবে শুরু করা যায়। প্রশিক্ষিত শিক্ষক ছাড়া এই কার্যক্রম চালাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে।’

বনরূপা সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অর্চনা তালুকদার বলেন, ‘জানার আগ্রহ থেকেই আমি চাকমা ভাষা আয়ত্ত্ব করেছি। আমার অন্য এক শিক্ষিকারও এই ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান আছে। তবে চর্চার অভাবে আমরা ইতোমধ্যে অনেকটা ভুলেও গেছি।  প্রশিক্ষণ পেলে হয়তো আবারও পারবো। কিন্তু যারা বিষয়টি নিয়ে ভাবেনি, কখনও চর্চা করেনি সমস্যা তাদের জন্য।’

পার্বত্য অঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির মাতৃভাষা নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী মুক্তাশ্রী চাকমা সাথী বলেন, ‘চাকমা ভাষা শেখার জন্য চাকমা, মারমা ভাষা শেখার জন্য মারমা সম্প্রদায় থেকে শিক্ষক নির্বাচন করতে হবে। তবেই এই কার্যক্রম গতি পাবে।’

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে চাকমা ভাষার জন্য বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রসন্ন চাকমা বলেন, ‘শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার আগে অবশ্যই প্রশিক্ষণের প্রয়োজন ছিল। আমি গত বছরের মে মাসে মহাপরিচালক মো. আলমগীর ও শিক্ষা সচিবকে বোর্ডের একটি সভায় প্রশিক্ষিত শিক্ষকের বিষয়ে বলেছিলাম। ওই সভায় প্রশিক্ষিত শিক্ষকের জন্য জুনের মধ্যে বাজেট তৈরি করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও শিক্ষককে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলো না।’ সরকারের এই প্রকল্প শুধু প্রশিক্ষিত শিক্ষককের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ও জেলা কমিটির সহ-সভাপতি প্রফেসর বাঞ্ছিতা চাকমা বলেন, ‘এই কার্যক্রমটি শুরুর আগে অবশ্যই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের তৈরি করে তারপর শুরু করলে ভালো হতো। এখন বইগুলো কে পড়াবে? পরিকল্পনার যথেষ্ট অভাব মনে হচ্ছে আমার। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। তা না হলে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় ছাড়া আর কিছুই হবে না।’

রাঙামাটি সদর উপজেলার শিক্ষা অফিসার ত্রিরতন চাকমা বলেন, ‘কিছু বিদ্যালয়ে আমাদের প্রশিক্ষিত শিক্ষক আছে। তাদের দিয়ে আপাতত সরকারের এই কার্যক্রম শুরু করা হবে। যাদের প্রশিক্ষণ নেই তাদের ব্যাপারে জেলা পরিষদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার কথা জানতে পেরেছি। আশা করছি আগামী বছর থেকে আর কোনও সমস্যা থাকবে না।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমরা একটি এনজিও’র মাধ্যমে কিছু প্রশিক্ষিত শিক্ষক পেয়েছি। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে একটি বাজেট দিয়েছি যাতে ২৩ ব্যাচে ৩৭৫ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। যার মাধ্যমে কিছুটা হলেও মাতৃ ভাষার অক্ষর সম্পর্কে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে।’

বিষয়টি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমাও। তিনি সম্প্রতি এক সভায় বলেন, ‘যারা বিষয়টি নিয়ে পড়াবেন, তারাই যদি ভাষাটা না জানেন তবে কিভাবে শিক্ষার্থীদের পড়াবেন।’ উদ্যোগটি এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন।

রাঙামাটি জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী এম জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা কাজ শুরু করেছি। একটি এনজিওর মাধ্যমে প্রায় ৫০ জন চাকমা ভাষার শিক্ষক পাচ্ছি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। তাদের ও আমাদের আগে থেকে প্রশিক্ষণ পাওয়া কিছু শিক্ষকের সমন্বয়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট দূর করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এই কার্যক্রম সফল করার জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে যা করার দরকার তাই করা হবে।’

/বিটি/এফএস/

আরও পড়ুন- 

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের হাতে এখনও পৌঁছেনি মাতৃভাষার বই



 

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!