X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের হাতে এখনও পৌঁছেনি মাতৃভাষার বই

জিয়াউল হক, রাঙামাটি
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৭:৫৭আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৭:৫৭

সংগৃহীত ছবি ১ জানুয়ারি বই উৎসবে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষায় শিক্ষক সহায়িকা ও শিখন চর্চা খাতা রাঙ্গামাটি জেলার কিছু সংখ্যক শিশুদের হাতে পৌঁছালেও এখনও সবার হাতে সরকারি এই বই পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এই কার্যক্রমে প্রথমে অভিভাবকদের মনে সন্তুষ্টি দেখা দিলেও এখন তাদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। এছাড়া এ বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষকদের কোনও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না করার ফলে সুফল পাওয়া কঠিন হবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিশুদের জন্য সরকার নিজ ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। ১ জানুয়ারি বই উৎসবে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষায় শিক্ষক সহায়িকা ও শিখন চর্চা খাতা রাঙ্গামাটি পৌর এলাকায় প্রায় ২৬টি বিদ্যালয়ে পৌঁছে দিতে পারলেও প্রায় এক মাস পরও এখনও সবক’টি বিদ্যালয়ে বই পৌঁছায়নি।
রাজা নলীনাক্ষ রায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রীনা তালুকদার বলেন,‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের জন্য মাতৃভাষায় কিছু বই আমরা আগেই পেয়েছিলাম। কিন্তু চাহিদা জানানো আর কোনও বই আমরা পাইনি। আমি ৪/৫ বছর আগে একটি এনজিও মাধ্যমে কিছুদিন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি।কিন্তু, অল্প কয়েকদিনের প্রশিক্ষণে শিশুদের মাতৃভাষায় জ্ঞান দান করা কঠিন কাজ হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা থাকা উচিত।’
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ও জেলা কমিটির সহ-সভাপতি প্রফেসর বাঞ্ছিতা চাকমা বলেন, ‘সাধারণ বইগুলোকে যতখানি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, এই বইগুলোর ক্ষেত্রে এতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বই উৎসবে সবাই বই পেলো কিন্তু পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা তাদের মাতৃভাষায় বইগুলো এখনও পায়নি। ফলে হয় কোথাও কোন গাফিলতি বা ত্রুটি আছে অথবা বিষয়টি ততটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি এই বইগুলো পড়ানোর মতো পর্যাপ্ত শিক্ষকও নেই। আর এই কার্যক্রম শুরু করার আগে অবশ্যই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে শুরু করলে ভাল হত। এখন বইগুলো কে পড়াবে?’
রাঙামাটি সদর উপজেলার শিক্ষা অফিসার ত্রিরতন চাকমা বলেন, ‘আমরা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষার বই পেয়েছি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে সব বিদ্যালয়ে বই পৌঁছে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিছু বিদ্যালয়ে আমাদের প্রশিক্ষিত শিক্ষক আছে। তাদের দিয়ে আপাতত সরকারের এই কার্যক্রম শুরু করা হবে এবং যাদের প্রশিক্ষণ নেই তাদের ব্যাপারে জেলা পরিষদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার কথা জানতে পেরেছি। আশা করছি আগামী বছরে আর কোনও সমস্যা থাকবে না।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জিল্লুর রহমান বলেন, ‘কিছু বই আগেই এসেছিল আর দশটি উপজেলায় আমরা বই পৌঁছে দিয়েছি। আশা করছি আগামী সপ্তাহে সবার কাছে বই পৌঁছে দেওয়া যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) মাধ্যমে কিছু প্রশিক্ষিত শিক্ষক পেয়েছি এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে আমরা একটি বাজেট দিয়েছি, যাতে ২৩ ব্যাচে ৩৭৫ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে কিছুটা হলেও অক্ষর সম্পর্কে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে।’
রাঙামাটির সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার বিষয়টি সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল নন উল্লেখ করে বলেন,‘জেলা পরিষদতো শিক্ষার্থীদের বই দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা পরিষদের সঙ্গে কথা বলব।’ তিনি আরও বলেন,‘এ ব্যাপারে কোনও শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি এবং শিক্ষকদেরও এ বিষয়ে কোনও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি, তাই সুফল পাওয়া কঠিন হবে।
বিষয়টি নিয়ে আরও পরিকল্পনার দরকার ছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন।
রাঙামাটি জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী এম জাকির হোসেন বলেন,‘আমরা কাজ শুরু করেছি। আমরা একটি এনজিও মাধ্যমে প্রায় ৫০ জন চাকমা ভাষায় শিক্ষক পাবো স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। এছাড়া আমাদের কিছু শিক্ষক আগে একবার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। এই দুইয়ের সমন্বয়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট দূর করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এই কার্যক্রমে সফল করার জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে যা করার দরকার তাই করা হবে।
তবে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রস্তুতির বিষয়ে যাই’ই বলা হোক না কেন মাঠ পর্যায়ে এখনও তেমন প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন: ঠেঙ্গার চরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যাখ্যা

/এমডিপি/টিএন/আপ-এআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠিত
উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠিত
চট্টগ্রামে লরি চাপায় মৃত্যু বেড়ে তিন
চট্টগ্রামে লরি চাপায় মৃত্যু বেড়ে তিন
রাজধানীতে রিকশাচালকের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার
রাজধানীতে রিকশাচালকের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার
স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া, স্বামীর লাশ উদ্ধার
স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া, স্বামীর লাশ উদ্ধার
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভালো সড়ক কেটে ২ বছর ধরে খাল বানিয়ে রেখেছে
নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভালো সড়ক কেটে ২ বছর ধরে খাল বানিয়ে রেখেছে
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক