ঋণের দায় মেটাতেই দুই শিশুকে বক্সখাটের ভেতর আটকে হত্যা করেছেন বলে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন অভিযুক্ত লাকী বেগম। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকায় নিজের বাসায় এই ঘটনা ঘটান তিনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম এই নারীর জবানবন্দির তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিখোঁজের দুইদিন পর মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার ফতেপুরের ইয়াসিনের বাড়ি থেকে সুমাইয়া আক্তার মেঘলা ও মেহজাবিন আক্তার মালিহা নামের দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
বুধবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম জানান, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল অধিকারীর খাসকামরায় লাকী বেগম ওই দুই শিশুকে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ঋণগ্রস্ত হওয়ার কারণে তার মেয়ে ইলার বান্ধবী প্রতিবেশী মেঘলার গলায় স্বর্ণের তাবিজ ও কানের দুল এবং মালিহার গলার স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নিয়ে চেয়েছিলেন তিনি। এ কারণে তাদের নিজের বাড়িতে ডেকে আনেন তিনি। আর ইলার বান্ধবী হওয়ার সুবাদে মেঘলা এবং মালিহা এক সঙ্গে প্রতিদিন খেলাধুলা করতো।
লাকী বেগম জানান, রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুটি শিশুই তাদের বাড়িতে ঘুমায়। একপর্যায়ে মেঘলার গলায় স্বর্ণের তাবিজ ও কানের দুল এবং মালিহার গলার স্বর্ণের চেইন খুলে স্থানীয় স্মৃতি জুয়েলার্সে ওই স্বর্ণ ২১ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। এরপর পাঁচজন দেনাদারকে সে টাকা পরিশোধ করেন। এরপর সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৭টার সময় মেঘলা এবং মালিহাকে বক্সখাটের ভেতরে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর লাশ দুটি বস্তাবন্দি করে রাখেন।
পুলিশ সুপার এর আগে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গত ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার পর স্কুল থেকে ফিরে বাড়ির বাইরে খেলতে যায় মেঘলা ও মালিহা। এরপর থেকে তাদের আর কোনও খোঁজ না পাওয়ায় ওইদিন দুপুরে উভয় পরিবারের পক্ষ থেকে তাদেরকে জানানো হয়।
এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে গীতা রানী নামে স্থানীয় একজনকে আটক করা হয়। তার তথ্যানুযায়ী পুলিশ বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালায়। পাশাপাশি স্থানীয় কিছু যুবক মঙ্গলবার আশপাশের সব বাড়ি তল্লাশি শুরু করে। একপর্যায়ে ইয়াসিন আলীর বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গেলে তার পুত্রবধূ লাকী যুবকদের বাধা দেয়।
এ কারণে তাদের সন্দেহ হয় এবং ঘরের খাটের নিচে যুবকরা একটি বস্তা দেখে। বস্তার মুখ খুললে দুই শিশুর লাশ পাওয়া যায়। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশগুলো উদ্ধারের পাশাপাশি ইয়াসিন আলী, তার স্ত্রী তানজিলা খাতুন ও পুত্রবধূ লাকীকে আটক করে পুলিশ।
এদিকে দুই শিশুর লাশ উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার মানুষ উত্তেজিত হয়ে আসামিদের বাড়ি ঘেরাও করে রাখে। পরে পুলিশ সুপারের বিচারের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে এলাকাবাসী শান্ত হয়।
/এমডিপি/এফএস/