চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের আমিরাবাদ নামারবাজার এলাকার ‘সাধনকুটির’ নামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিরা গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ওই বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল। ২ মার্চ তারা ওই বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে ওঠে কাপড় ব্যবসায়ীর পরিচয়ে। পরে ৪ মার্চ জঙ্গি জসিম বাসায় নিয়ে আসেন স্ত্রী আরজিনা ও শিশু সন্তানকে। বাড়ির মালিক সুভাষ চন্দ্র দাস বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, শুরু থেকেই জসিম ও তার সহযোগীদের তৎপরতা ছিল সন্দেহজনক।
সাধনকুটির বাড়িটির মালিক সুভাষ চন্দ্র দাস পেশায় ঠিকাদার। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আমার স্ত্রীর কাছ থেকে জসিম বাসা ভাড়া নেয়। এসময় সে নিজেকে একজন কাপড়ের ব্যবসায়ীর পরিচয় দেয়। এ মাসের ২ তারিখে দু’টো খাট ও আলনা বাসায় ওঠে জসিম। বাসায় কে কে থাকবে জানতে চাইলে জসিম জানান, পরিবার নিয়েই তিনি থাকবেন বাসায়। আমি তখন তাকে জানাই, ব্যাচেলর হিসেবে বাসায় থাকা যাবে না। তার স্ত্রীকে নিয়ে আসতে বলি আমি। পরে ৪ তারিখে স্ত্রী ও সন্তানকে এই বাসায় নিয়ে আসে জসিম।’
সুভাষ চন্দ্র বলেন, ‘জসিম বাসায় ওঠার পর ঘরের দরজা-জানালা প্রায় সময়ই বন্ধ থাকত। তারা কারও সঙ্গে তেমন কথা বলত না। তাদের এমন আচরণে আমার সন্দেহ হয়। এর মধ্যে ২ তারিখে যখন তারা খাট ও আলনা নিয়ে আসে তখন জানতে চাইলে জসিম জানায় তাদের বাড়ি থেকে তারা এগুলো নিয়ে এসেছে। কিন্তু যে রিকশাওয়ালা এগুলো নিয়ে এসেছিল, সে ছিল আমার পরিচিত। সে আমাকে জানায় যে এগুলো রামু থেকে আনা হয়েছে। এতে আমার সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়।’
জসিমদের নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) রাতে সুভাষ চন্দ্র বাসায় ঢোকেন। তাদের কাছে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখতে চান। কিন্তু প্রথমেই তাকে বাসায় ঢুকতে দেওয়া হয় না। সুভাষ বলেন, ‘প্রথমে আমাকে ওরা বাসায় ঢুকতে বাধা দেয়। পরে দরজা খুলে দিলে ভেতরে ঢুকে বিছানার ওপর কিছু ইলেকট্রিক সার্কিট দেখতে পাই। আমি ওদের কাছে জানতে চাই, তোমরা তো কাপড়ের ব্যবসা করো, তোমাদের কাছে সার্কিট কেন? বাসায় থাকা জসিমের চার সহযোগীর মধ্যে দু’জন বলে, তাদের ইলেকট্রিক পণ্যের ব্যবসা আছে। তাদের এই কথায় সন্দেহ হলে আমি ওদের ওখান থেকে সার্কিটের কয়েকটি স্যাম্পল সংগ্রহ করি। ওদের আইডি কার্ডও নেই।’
পরদিন বুধবার (১৫ মার্চ) সকালে বন্ধু সুনন্দ ভট্টাচার্য সাগরকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় বাজারে গিয়ে ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রেতাদের কাছে ওই ইলেকট্রনিক সার্কিটগুলো দেখান সুভাষ। তারা সুভাষকে বলেন, এগুলো টাইম কন্ট্রোল ডিভাইস। এগুলো অনেক খারাপ কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। সুভাষ বলেন, ‘বাজার থেকে এসে ওদের কাছ থেকে নেওয়া আইডি কার্ডগুলোর নম্বর অনলাইনে ভেরিফাই করার চেষ্টা করি। কিন্তু ওই আইডি কার্ডগুলোর নম্বর অনলাইনে পাইনি। এতে আমরা নিশ্চিত হয়ে যাই যে ওরা আমাদের মিথ্যা বলেছে। দুপুরে গিয়ে ওদের বাসা ছেড়ে দিতে বলি।’
সুভাষ বলেন, ‘বাসা ছেড়ে দেওয়ার কথা বললে ওরা বলে যে বাসা ছেড়ে দেবে। এসময় জসিম খাটের নিচ থেকে একটি কালো ব্যাগ বের করে খুলতে চাইলে আমার বন্ধু সাগর তাকে বাধা দেয়। ব্যাগ নিয়ে দুজনের মধ্যে টানাহেচড়া হয়। এক পর্যায়ে জসিমের গামবুটের ভেতর থেকে একটি পিস্তল বেরিয়ে আসে। আমরা জসিমকে জাপটে ধরে আটকে রাখি। আরজিনাকেও আটকে ফেলি। আরজিনার কোমরে সুইসাইড ভেস্ট বাঁধা ছিল। ওদের আটকে রেখে আমরা ডাকাত বলে চিৎকার করি। এতে আশপাশ থেকে মানুষ জড়ো হয়ে তাদের ধরে ফেলে। পরে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে তাদের গ্রেফতার করে।’
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে মীরেরসরাইয়েও একটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। ওই আস্তানাও জঙ্গিরা ভাড়া নিয়েছিল কাপড় ব্যবসায়ীর পরিচয় দিয়ে।
আরও পড়ুন-