হরকাতুল জিহাদের শীর্ষনেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুলের ফাঁসি কার্যকরে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে গাজীপুর জেলা পুলিশ। এর জন্য কারাগারের আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, ইউনিফর্ম, সাদা পোশাক, এপিবিএন ও ডিবি পুলিশের টিম বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
এদিকে, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান জানান, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুলের পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতের জন্য ডাকা হয়েছিল। তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দুই পরিবারের কেউ সাক্ষাৎ করতে আসেননি।
গত ৬ মার্চ বিকেলে টঙ্গীর কলেজ গেট এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ককটেল বিস্ফোরণ করে প্রিজনভ্যান থেকে জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলকে ছিনিয়ে নেওয়া চেষ্টা করা হয়।
কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার মিজানুর রহমান জানান, সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে হত্যা চেষ্টা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুলের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার পর প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে গত ২৭ মার্চ রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন। পরে তা স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রণালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে যায়। সম্প্রতি ওই আবেদন নাকচ করেন রাষ্ট্রপতি। মুফতি আব্দুল হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুলের প্রাণ ভিক্ষার আবেদনের ‘রিজেক্ট কপি’ সোমবার কারাগারে পৌঁছেছে। বিধি মোতাবেক তাদের ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এখন সরকার স্থান ও দিনক্ষণ ঠিক করে কারা কর্তৃপক্ষকে যে কোনও মুহূতে ফাঁসি কার্যকরের নির্দেশ দেবেন।
তিনি আরও জানান, তাদের ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে কারা কর্তৃপক্ষ। জল্লাদ নির্বাচন করে ফাঁসির মঞ্চ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। কারাগার এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটের হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। এতে পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত এবং আনোয়ার চৌধুরীসহ অর্ধ শতাধিক আহত হন। মামলার রায়ে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত পাঁচ আসামির মধ্যে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল বিপুলকে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং দেলোয়ার হোসেন রিপনকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করতে প্রয়োজনীয় নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়।পরে ২০০৯ সালে আসামিরা হাই কোর্টে আপিল করেন। প্রায় ৭ বছর পর গত বছরের ৬ জানুয়ারি এ মামলায় হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল রেখে ১১ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। গত বছরের ২৮ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। ১৪ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন দুই আসামি হান্নান ও বিপুল। অন্য আসামি রিপন আপিল না করলেও আপিল বিভাগ তার জন্য রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ করেন। আপিলের শুনানি শেষে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর চুড়ান্ত রায়ে তিন আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি বহাল রাখা হয়।
গত ১৭ জানুয়ারি এ রায় প্রকাশের পর আসামিরা রিভিউ করেন। পরে ১৯ মার্চ দেওয়া রিভিউ খারিজের রায় ২১ মার্চ প্রকাশিত হয়। রিভিউ খারিজের কপি ২১ মার্চ রাত পৌণে ১২টার দিকে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছায়। পরদিন বুধবার সকাল ১০টার পর তা মুফতি হান্নান ও বিপুলকে পড়ে শুনানো হয়। এছাড়া ওইদিন সিলেট কারাগার থেকে আসা মৃত্যু পরোয়ানাটিও ওই দিন রাতে তাদের পড়ে শুনোনো হয়েছে। এছাড়াও রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় মুফতি হান্নানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে বিচারিক আদালতে। ওই মামলায় তার আপিল হাইকোর্টে বিচারাধীন। ২০০০ সালের ২০ জুলাই সেই কোটালীপাড়াতে শেখ হাসিনার সভামঞ্চের কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। মুফতি হান্নান ওই মামলারও আসামি। ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর ঢাকার বাড্ডা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মুফতি হান্নান আফগানিস্তানে গিয়ে তালেবানদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধে আহত হওয়ার পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। পরবর্তী সময়ে তিনি হরকাতুল জিহাদে যোগদান করেন।এই হুজি নেতার বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়।
/জেবি/
আরও পড়তে পারেন: রাউধা ‘আত্মহত্যা’ করেছে দাবি ইসলামী মেডিক্যালের তদন্তে, হত্যা মামলায় 'ক্ষুব্ধ' সিরাত