X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৩০ সেকেন্ড আগে ত্রুটি, পরে সব ঠিক!

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
২২ মে ২০১৭, ০৯:৫৭আপডেট : ২২ মে ২০১৭, ১৩:১৪

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস

‘একজন বললেন, সব কাগজ ঠিক আছে। আরেকজন বললেন, ত্রুটি আছে। এরপর পরিচয় দিয়ে অনুনয়-বিনয়ের মাত্র ত্রিশ সেকেন্ড পরই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বললেন, সব ঠিক আছে।’ এক মাসে যে পাসপোর্ট পাওয়ার কথা তা পাঁচ মাস পর পাওয়া তরুণ স্থপতি রাকিবুল হাসান অনিন্দ এভাবেই জানান তার অভিজ্ঞতার কথা। 

অনলাইনে ফরম পূরণ করে গত ৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস মনসুরাবাদে যান এই তরুণ স্থপতি । দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর কাউন্টারের একজন কর্মকর্তা তাকে জানান, ‘আপনার সব কাগজ ঠিক আছে। কিন্তু সবগুলো দুই কপি করে আনতে হবে, সঙ্গে ওয়ার্ড কমিশনারের সার্টিফিকেট।’

এরপর ১১ ডিসেম্বর ওয়ার্ড কমিশনারের সার্টিফিকেট জোগাড় করে পাসপোর্ট অফিসে যান তিনি। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, কমিশনারের সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক নয়। উল্টো তাকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। একজন কর্মকর্তা তাকে বলেন, ‘আপনি তো স্থপতি, আপনার সার্টিফিকেটের কপি নেই কেন?’

বিড়ম্বনা এড়াতে সার্টিফিকেটের ফটোকপির পাঠ চুকিয়ে এবার ছবি তোলার জন্য পাসপোর্ট অফিসের আরেক কক্ষে যান স্টাইল লিভিং আর্কিটেকট লিমিটেডে কর্মরত অনিন্দ। সেখানে গিয়ে নতুন বিড়ম্বনায় পড়েন। একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সব ঠিক আছে।’ অন্যজন বলেন, ‘আপনার ফরম পূরণে ক্রুটি আছে। এটা সংশোধন করে আসেন।’

এবার সত্যিই নিরুপায় হয়ে যান স্থপতি অনিন্দ। শুরু করেন অনুনয়-বিনয়। কয়েক সেকেন্ড আগে যিনি বলেছিলেন, ‘ফরম পূরণে ত্রুটি আছে’, অনুনয়-বিনয়ের মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মাথায় তিনিই আবার বললেন, ‘সব ঠিক আছে’।

অভিযোগের সুরে বাংলা ট্রিবিউনকে স্থপতি অনিন্দ বলেন, ‘সাধারণ আবেদনে যেখানে পাসপোর্ট হাতে পেতে সময় লাগে এক মাস, সেখানে পাসপোর্ট পেয়েছি পাঁচ মাসে। তাও আবার অনুরোধ করে!’

শুধু রাকিবুল হাসান নন; পাসপোর্ট করতে গিয়ে এভাবেই প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। দালালের মাধ্যমে না গেলে হেনস্তা করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

অন্যদিকে, যারা দালালের মাধ্যমে কাজ করিয়ে নেন, তারা তা নির্ধারিত সময়ে পেয়ে যান। কিছু ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের আগেও পাসপোর্ট পাওয়া যায়।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ভুক্তভোগী রুবেল পারভেজ বলেন, ‘আমি দালালের মাধ্যমে যাইনি বলে আমার আবেদন ফরমে কোনও ভুল না থাকার পরও শুধু ক্যাপিটাল লেটারে না লেখার কারণে আবেদন বাতিল করে দিয়েছেন কর্মকর্তারা। অথচ আমি ওখানে দাঁড়িয়ে দেখেছি, স্মল লেটারে লেখার পরও অনেকের ফরম জমা নিয়েছেন তারা।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,পাসপোর্ট অফিসের বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। আর এ কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলেও জানান আবেদন প্রার্থীরা। অভিযোগ আছে, এই দুর্নীতির নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করছেন এই অফিসের বড় কর্তারা।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে আবেদনকারীদের ভিড়

রবিবার (২১ মে) সরেজমিনে দেখা গেছে, পাসপোর্ট অফিসে দালালদের রুখতে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেই পুলিশ সদস্যদের কেউ কেউ নিজেরাই দালালির সঙ্গে যুক্ত।

ভুক্তভোগী একাধিক আবেদনকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘অফিসে দায়িত্বপালনকারী আনসার সদস্য, অফিসের কর্মচারী, পুলিশ বা দালালের মাধ্যমে যারা আবেদন করেন, তাদের বলা হচ্ছে ‘চ্যানেল’। আর দালাল ছাড়া নিজ উদ্যোগে জমা দেওয়া আবেদনের নাম ‘পাবলিক’। পাসপোর্ট অফিসে এই ‘পাবলিক’ আবেদন মূল্যহীন। ‘পাবলিক’ আবেদন মানেই ভোগান্তি। লাইনে দাঁড়ানো, ছবি তোলা, পুলিশ প্রতিবেদন, পাসপোর্ট তৈরির জন্য ঢাকায় প্রতিবেদন পাঠানো ও সরবরাহ পর্যন্ত  প্রতি পদে ভোগান্তি। জরুরি ফি জমা দিয়েও সময়মতো পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যায় না।

পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, নিয়মানুযায়ী সাধারণ পাসপোর্ট এক মাস ও জরুরি পাসপোর্ট দুই সপ্তাহের মধ্যে সরবরাহের কথা। তবে কাগজে কলমে এ নিয়ম থাকলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সহযোগিতায় দালালি করছেন। এর বিনিময়ে প্রতি পাসপোর্টের বিপরীতে অতিরিক্ত ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন করছেন। এই টাকা থেকে ১৫শ টাকা তুলে দিচ্ছেন কর্মকর্তাদের হাতে। পুলিশ প্রতিবেদনের জন্যে দিচ্ছেন ৫০০ টাকা। বাকি টাকা দালালরা নিয়ে যাচ্ছেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে দালালদের  উপস্থিতির কথা অস্বীকার করেন উপ-পরিচালক এ কে এম মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দালালরা যাতে পাসপোর্ট অফিসে ঢুকতে না পারে সেজন্য আমরা গেটে পুলিশ মোতায়েন করেছি। আবেদনকারীকেই তার আবেদন ফরম জমা দিতে হয়। তাই এখানে দালালদের হস্তক্ষেপ করার কোনও সুযোগ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটি চক্র মিথ্যা তথ্য ও নকল কাগজপত্র দিয়ে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরি করে দিচ্ছে। তাই আমরা আবেদন ফরমের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো ভালোভাবে দেখি। এতে হয়তো কোনও কোনও আবেদনকারী সাময়িক বিড়ম্বনার শিকার হতে পারেন। তবে এদের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম।’

/এসএমএ/এমএ/এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ