X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

একরাম হত্যা: ৩ বছরেও গ্রেফতার হয়নি ১১ আসামি

ফেনী প্রতিনিধি
২২ মে ২০১৭, ১০:৩৫আপডেট : ২২ মে ২০১৭, ১০:৪২

একরামুল হক ফেনীর ফুলগাজীর উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম হত্যার তিন বছর অতিবাহিত হলেও চার্জশিটভুক্ত পলাতক ১১ জন আসামি এখনও গ্রেফতার হয়নি। উদ্ধার হয়নি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সব অস্ত্রও। বিভিন্ন সময় আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়া আসামিদের অর্ধেক জামিনে বেরিয়ে গেছে।এদিকে মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য উচ্চ আদালত দফায় দফায় সময় বেঁধে দেওয়ায়  দ্রুত এগুচ্ছে  আলোচিত  এ মামলার বিচার কাজ।এমতাবস্থায় মামলার সুষ্ঠু বিচার নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে নিহতের পরিবার।
২০১৪ সালের ২০মে নিজের দলীয় কর্মীরা কুপিয়ে, গুলি করে ও  গাড়িতে আগুন দিয়ে পৈশাচিকভাবে পুড়িয়ে হত্যা করে একরামকে।


মামলাটি যেভাবে চলছে

ফেনী জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হাফেজ আহম্মদ জানান, ২০১৪ সালের ২০ মে রাতে ফেনী মডেল থানায় একরাম হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করেন তার বড় ভাই রেজাউল হক মামলায় বিএনপি নেতা মাহাতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনারের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩০-৩৫ জনকে আসামি করা হয়।
তিনি জানান, মামলা দায়েরের একশ দিন পর ওই বছরের ২৮ আগস্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ ৫৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। আদালত আড়াই মাস পর ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর আলোচিত এ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে।
পরবর্তীতে স্বাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে বিচারকাজ শুরু হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ পর্যন্ত  বিএনপির নেতা মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনারসহ  আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের  ৪৪ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে বর্তমানে জামিনে রয়েছেন ২০ জন। গ্রেফতার হওয়া আসামিদের মধ্যে ১৫ জন হত্যার দ্বায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া নিহত একরামের গাড়িচালকও প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে জবানবন্দি দেন। মামলার অভিযোগপত্রে ৫৯ জনকে সাক্ষী করা হয়।  এ পর্যন্ত  ৪৭ জন তাদের সাক্ষী প্রদান করেছেন।

উচ্চ আদালতের রুল

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ একরামুল হক হত্যা মামলার বিচার ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। এর এক বছর পর চলতি বছরের ১৯ মার্চ মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য পুনরায় ছয় মাসের সময় বেঁধে দেন উচ্চ আদালত। 

১১  আসামি পলাতক

এ মামলার আসামিদের মধ্যে ইসমাঈল হোসেন ওরফে ছুট্টু, কফিল উদ্দিন মাহমুদ আবির, রাহাত মো. এরফান ওরফে আমজাদ, সফিকুর রহমান ময়না, শরিফুল জামিল ওরফে পিয়াস, একরাম হোসেন ওরফে আকরাম, মহিউদ্দিন আনিছ, মোসলেহ উদ্দিন আসিফ, কালা ওরফে কালা মিয়া, বাবলু, নয়ন, টিটু পলাতক রয়েছেন।

হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ফেনী মডেল থানার তৎকালীন পরিদর্শক (বর্তমানে দাগনভূইয়া থানার ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, একরাম হত্যায়  একাধিক চাপাতি ও পাঁচটি পিস্তল  ব্যবহৃত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি পিস্তল ও কয়েকটি চাপাতি উদ্ধার হয়েছে । বাকি তিনটি পিস্তল এখনও উদ্ধার হয়নি। এই ছাড়া  হত্যার সময় ব্যবহৃত লাল রংয়ের একটি প্রাইভেট কারও জব্দ করা হয়েছিল।

মামলার প্রধান আসামি বিএনপি নেতা মিনার চৌধুরীর আইনজীবী  অ্যাডভোকেট মেছবাউদ্দিন খাঁন বাংলাট্রিবিউন বলেন, ‘পর্যন্ত যে ৪৭ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তারা কেউ সঠিকভাবে সাক্ষ্য দেননি। এমনকি একরামের স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরাও এজাহারের পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করেননি। এ মামলার প্রসিকিউশনও চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।  রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি।’

নিহত একরামের বড় ভাই রেজাউল হক জসিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘সামাজিক কারণে অনেকে  রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী দিতে চান না। একরামকে কারা হত্যা করেছে তার ভিডিও ফুটেজ  এবং মোবাইল ফোনে অডিও রেকর্ড আছে। কিন্তু এর কোনোটিই আদালতে জমা হয়নি।’

যেভাবে একরামকে হত্যা করা হয়

২০১৪ সালের ২০ মে সকাল ১০ টা ৫০ মিনিটের দিকে ফেনী শহরের ডায়াবেটিস হাসপাতাল থেকে ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের একটি সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে বের হন চেয়ারম্যান একরাম। শহরের বিলাসী সিনেমা হলের কাছে পৌঁছালে প্রথমে একটি ময়লার ট্রলি দিয়ে তাকে বহনকারী প্রাডো গাড়ির গতি রোধ করার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। ট্রলিটিকে পাশ কাটাতে গিয়ে একরামের গাড়ির একটি চাকা সড়ক ডিভাইডারের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ওপরে উঠে যায়। এ সময় চারদিক থেকে গুলি ও বোমা ফাটিয়ে একদল দুষ্কৃতকারী তার গাড়িটি ঘেরাও করে। এ সময় গুলি ও ছুরিকাঘাত করে একরামকে হত্যা করা হয়। হত্যাকারীরা তাকে বহনকারী গাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে লাশ পুড়িয়ে ফেলে। ওই দিনটির কথা মনে পড়লে

কে এই একরাম

ফুলগাজীর আনন্দপুরের নুরুল হক মাস্টারের চতুর্থ ছেলে  একরামুল হক। এক সময়ে জয়নাল হাজারীর আলোচিত স্টিয়ারিং কমিটির সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন তিনি। পরে ফেনী পৌর যুবলীগের সভাপতি ও ২০১১ সালের সম্মেলনে নিজ উপজেলা ফুলগাজী আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।

এর আগে ১৯৯৭ সালে ফুলগাজীর আনন্দপুর ইউপি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০০৯ ও ২০১২ সালে পরপর ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন একরাম। যুবলীগ নেতা বশির হত্যা, যুবদল নেতা নাসিরকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার অভিযোগসহ একরামের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ছিল।

/এপিএইচ/ 

 আরও পড়ুন: ৩০ সেকেন্ড আগে ত্রুটি, পরে সব ঠিক!

 

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
নির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
শনিবার জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভানির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত