X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বান্দরবানে আশ্রয়কেন্দ্র বন্ধ, ঝুঁকি নিয়েই পাহাড়ে ফিরছে মানুষ

বান্দরবান প্রতিনিধি
২১ জুন ২০১৭, ১৭:০৫আপডেট : ২১ জুন ২০১৭, ১৭:৪৬

বান্দরবানে এখনও পাহাড়ি বসতি রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে বান্দরবানে পাহাড়ের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসছে বলে মনে করছে স্থানীয় প্রশাসন। যে কারণে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো বন্ধ হতে শুরু করেছে। তাই বুধবার (২১ জুন) সকাল থেকে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া লোকজন নিজেদের বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে প্রশাসন পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে করলেও স্থানীয়রা বলছেন, পাহাড়গুলো এখনও বসবাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

গত ১২ জুন দিবাগত রাত থেকে শুরু হওয়া ভারি বর্ষণে পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে ধসে পড়ে। এতে মাটি চাপা পড়ে নয় জনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও ১২ জন। এ অবস্থায় স্থানীয় বিভিন্ন বিদ্যালয় ভবনের ১২টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয় প্রায় আড়াই হাজার পরিবার। এছাড়া আরও পাঁচ হাজার পরিবার আশ্রয় নেয় বিভিন্ন আত্মীয়ের বাসায়। ওই একই সময়ে পাহাড় ধসে রাঙামাটি, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও মৌলভীবাজার জেলায় মোট ১৬৪ জনের মৃত্যু হয়।

বুধবার সকালে সরেজমিনে কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, নিজ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলো। পাহাড়ে তাদের বাড়িঘর এখনও পুরোপুরি ব্যবহারোপযোগী নয়। তা সত্ত্বেও ভাঙাচোরা বাড়িঘরেই বসবাস করতে শুরু করেছেন তারা।

আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িতে ফিরে যাওয়া মো. ইউনুছ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে তিন সন্তান নিয়ে ছিলাম। ফেরার সময় ত্রাণের চেয়ে ওষুধই আনতে হয়েছে বেশি। ওখানে থাকার মতো কোনও পরিবেশ নেই। তাছাড়া শিক্ষকরাও আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িতে ফেরার তাগাদা দেন। তাই ঝুঁকি থাকলেও আমাদের চলে আসতে হয়েছে।’

ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িতে ফিরেছেন নুর জাহান বাড়িতে ফিরে যাওয়া নুর জাহান বলেন, ‘যে স্কুলে ছিলাম, সেটা স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র না। সেখানে থাকতে কষ্ট হয়েছে। তবে জীবনের ঝুঁকি তো ছিল না। এখন বাড়িতে তো আবার সেই ঝুঁকিতে পড়লাম। আমরা চাই, আমাদের জন্য সরকারিভাবে স্থায়ী আশ্রায়নের ব্যবস্থা করা হোক।’

মো. ইকবাল বলেন, ‘একটু বৃষ্টি হলেই আঁতকে উঠি। রাতে বৃষ্টি হলে তো আর সারারাত ঘুমাতেই পারি না, এই বুঝি পাহাড় ভেঙে পড়ল। তারপরও কিছু করার নেই। কোথায় যাব? আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতেও দুই-তিন দিনের বেশি থাকা যায় না।’ এরই মধ্যে বর্ষা শুরু হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘সামনে আমাদের কপালে কী আছে, কে জানে?’

আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া মো. আবুল কালাম বলেন, ‘আমি আশ্রয়কেন্দ্রে যাইনি। এক আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে তিন দিনের বেশি থাকতে পারিনি। তাদেরও তো সুবিধা-অসুবিধা আছে। বাধ্য হয়ে তাই পরিবার নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছি।’ তিনি জানান, এখনও সরকারি কোনও ত্রাণ সহায়তাও পাননি তিনি। শুধু কালাম একা নন, এলাকার কোনও পরিবারই ত্রাণ সহায়তা পায়নি বলে জানান তিনি।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিদ্যালয় কোনও স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র নয়। প্রাথমিকভাবে মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্যই তাৎক্ষণিকভাবে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। আমরা মোবাইল টিম গঠন করেছি। যেখানে যারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন, তাদের আমরা অনুরোধ করছি নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য। আর যাদের কোনও থাকার জায়গা নেই, তারা লামার বাসুরী পাড়াতে ১৬টি, বাইশ পাড়াতে ২৪টি, দরদরি পাড়াতে ছয়টি ও আলিকদমে ৩০টি সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে এসে থাকতে পারেন। এসব আশ্রয়কেন্দ্রের বেশ কয়েকটি ঘর এখনও খালি রয়েছে।’

ত্রাণ সহায়তার বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ত্রাণের কোনও সমস্যা নেই। জিআর ক্যাশ ও জিআর চালসহ পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী এখনও আমাদের হাতে রয়েছে। আশা করছি, দুর্গতদের কোনও সমস্যা হবে না।’

/এসএমএ/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা