X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লায় মৌসুমি ভিক্ষুকের উৎপাত

মাসুদ আলম,কুমিল্লা
২৫ জুন ২০১৭, ২২:৩৫আপডেট : ২৫ জুন ২০১৭, ২২:৫৬

ভিক্ষুক, অনলাইন থেকে সংগৃহীত ঈদকে ঘিরে নগরীতে যানজট ও ভিড়ে নাকাল নগরবাসী। এরই মধ্যে মৌসুমি ভিক্ষুকের উৎপাত বেড়েছে ব্যাপকভাবে। নগরীর বিভিন্ন মোড় এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে মৌসুমী ভিক্ষুকের সংখ্যা আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে বেশি। মৌসুমী ও পেশাজীবী মিলিয়ে নগরীতে এবার বেড়েছে প্রায় এক হাজারের বেশি ভিক্ষুক।
এরা সড়কের পাশের চলাচলের জায়গা দখল করে শুয়ে থাকে, এদিক-ওদিক গড়াগড়ি দেওয়াসহ নানাভাবে নানাভাবে ভিক্ষা চাচ্ছেন। শিশু-কিশোর বয়সী টোকাইরা গিয়েও পথচারীদের কাছে ভিক্ষা করছেন। যানজটে ও মানুষের ভিড়ের মধ্যে এই অবস্থা অসহনীয় হয়ে উঠেছে মানুষের কাছে।

স্থানীয় পরিসংখানে কুমিল্লা মহানগরে এক হাজারের বেশি মৌসুমি পেশাজীবী ভিক্ষুকদেরকে নিয়ন্ত্রণ করছে একটি সঙ্গবদ্ধ মহল। ভিক্ষার নামে অর্থ আদায়ে এসব মৌসুমি ও পেশাজীবী ভিক্ষুকদেরকে আনা হয়েছে পাশ্ববর্তী জেলা নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, হবিগঞ্জসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা দরিদ্র এলাকা থেকে। এসব ভিক্ষুকের দৈনিক ভিক্ষাবৃত্তির অর্ধেকাংশই নিয়ে যাচ্ছে ওই মহলটি।ঈদ আসলেই লাখ লাখ টাকা প্রতি বছর তারা আদায় করে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

শনিবার কুমিল্লা টাউনহল গেটের পশ্চিম পাশে কিছু ভিক্ষুকে বসে থাকতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে পুরুষ, মহিলা এবং কিছু টোকাইসহ ২৫ থেকে ৩০ জন ভিক্ষুক। এদের বেশির অংশই নারী। এদের পাশেই একটি টুলে বসে আছেন আবু তাহের নামের একজন মধ্যবয়সী লোক। আবু তাহের পঙ্গু ভিক্ষুক মোমিন হোসেনকে জিজ্ঞাো করে— ‘কত টাকা হয়েছে?’ ভিক্ষুক মোমিন বলেন, ‘স্যার এক হাজার টাকা। আবু তাহের তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘দিনের অর্ধেক সময় তো এখনও বাকি আছে, সমস্যা নেই।’

নগরী ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর কান্দিরপাড়ের টমছম ব্রিজ, পুলিশ লাইন, রাজগঞ্জ, রাণীর বাজার, ভিক্টোরিয়া কলেজ মোড়, নগরীর শাসনগাছা, রানীরবাজার, রাজগঞ্জ, চকবাজার, এলাকায় এখন মৌসুমী ভিক্ষুকদের উৎপাত বেড়েছে। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার আবাসিক বাসা-বাড়িগুলোতে, মসজিদ, মাজার, মার্কেট বা শপিং মলের সামনেও একই দৃশ্য।

প্রতি বছর রোজার সময়টা কুমিল্লা জেলার আশপাশের জেলা এবং উপজেলার দরিদ্র অঞ্চলগুলো থেকে দলে দলে কুমিল্লা নগরীতে আসতে থাকে ভিক্ষুকরা। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। বরং ভিক্ষুকদের উৎপাত আগের চেয়ে বেশি।

কুমিল্লা কান্দিরপাড়ের ভিক্ষাবৃত্তি আদায়ে পঙ্গু মোমিন জানান, তার দৈনিক আয় ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। তবে রমজান মাসে কুমিল্লায় আসার পর দৈনিক গড়ে ১৫শ’ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। সব ভিক্ষুকেরই এমন আয় হচ্ছে বলে জানান তিনি। রমজানে ভিক্ষায় বেশি মানুষ আসে কেন? জানতে চাইলে বলেন, ‘ফিতরাসহ যাকাতের টাকা-পয়সা, শাড়ি কাপড় থাকে বেশি। এ সময় পরিবারের সবার জামা-কাপড়ও পাওয়া যায়।’ এই আশায় তিনিও এসেছেন জেলার বরুড়া থেকে।

নগরীর রিকশা চালক মিজানুর রহমান, অটো চালক সাইফুল এবং ভিক্ষুক নুর ইসলামসহ একাধিক ভিক্ষুকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বছরের এই সময়টাকে টার্গেট করে একটি চক্র দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসা দরিদ্র মানুষগুলোকে দিয়ে অর্থ আয়  করে। বিশেষ করে হাত নেই, পা নেই, অন্ধ, কঙ্কালসার দেহ, অস্বাভাবিক বড় মাথা ও হাত-পা, শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘা-এমন মানুষের কদর এদের কাছে বেশি। পাশ্ববর্তী জেলা নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, হবিগঞ্জসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তারা এসময় নগরীতে আসে। সারাদিন ভিক্ষা করে আয় করা টাকার এক অর্ধেকাংশ তাদের দিয়ে বাকি অংশ নিচ্ছে এ চক্রের সদস্যরা। এসব চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, পঙ্গু নয় এমন মানুষকে জোর করে পঙ্গ বানিয়ে, অঙ্গ বিকৃতি ঘটিয়ে নামানো হয় ভিক্ষাবৃত্তিতে। এছাড়া সামান্য অঙ্গহানি নিয়ে কিংবা সুস্থ দেহের মানুষও ভিক্ষুক হিসেবে ঘুরছে নগরীতে। তাদের বেশির ভাগই নারী। তারা কেউ কেউ কোলের শিশু দেখিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করছেন। কেউ কেউ আবার ঘর গৃহস্থালির কাজের ফাঁকে ফাঁকে ভিক্ষা করেন। এসব শিশু ও একেবারে অচেতন মানুষ ভাড়ায়ও আনা হয়। বিভিন্ন বস্তির শিশুকে দৈনিক ৫০ থেকে ২০০ টাকার বিনিময়ে ভিক্ষুকের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়। আর বড়রা পান ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। অনেকে নিজেই ভিক্ষার নামে কোলের শিশু সন্তানকে নিয়ে।

তারা আরও জানায়, ভিক্ষুকদের নির্দিষ্ট এলাকা ভাগ করা আছে। সব জায়গায় ভিক্ষা করতে পারে না। তাদের আবার তদারকের জন্য আছে নির্দিষ্ট মানুষও রয়েছে। এসব ভিক্ষুক নিজেদের এলাকা ছেড়ে অন্যত্র যায় না। ভাসমান হলেও তাদের অন্যত্র যাওয়ার অনুমতি নেই।

নগরীর টোকাইদের মামা পরিচিত আবু তাহের বলেন, ‘শত শত এসব মৌসুমি ভিক্ষুকদের নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি জানেন না। তবে তিনি বলেন, রমজান আসলেই এসব ভিক্ষুকের আনাগোনা বৃদ্ধি পায়। পাশ্ববর্তী জেলা নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, হবিগঞ্জসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা দরিদ্র এলাকা থেকে ভিক্ষাবৃত্তি আদায়ে কুমিল্লায় ছুটে আসে।  

/এসএমএ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
দেশের জন্য কাজ করতে আ.লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
দেশের জন্য কাজ করতে আ.লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
নির্মোহ মূল্যায়নের খোঁজে জাসদ
নির্মোহ মূল্যায়নের খোঁজে জাসদ
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী