দুই যুবক তুরিণ ও নাঈমের মৃত্যুতে নাটোরে প্রায় ১০ হাজার মানুষের ঈদ আনন্দ শোকে পরিণত হয়েছে। সোমবার (২৬ জুন) রাত সাড়ে ১২টার দিকে স্থানীয় ভাটোদাঁড়া এলাকায় নাটোর-বগুড়া মহাসড়কে দুর্ঘটনায় তারা নিহত হন। এই দুর্ঘটনায় আরও ৬জন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শী আমিন, রহিম ও রহমত জানান, নাঈমকে পেছনে নিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে শহর থেকে দিঘাপতিয়া ফিরছিল তুরিণ। তাদের গাড়ির গতি ছিল অনেক বেশি। রাস্তায় চলার সময় মাঝে মাঝেই এপাশ-ওপাশ করে দুলতে দুলতে ফিরছিল তারা। একই সময়ে নাটোর শহরের মাদ্রাসা মোড় এলাকা থেকে যাত্রী নিয়ে বগুড়ার দিকে ফিরছিল একটি প্রাইভেট কার। ভাটোদাঁড়া কালিবাড়ির ব্রিজের কাছে আসতেই তাদের গতি-বিধি দেখে স্টিয়ারিং কন্ট্রোলে রাখতে পারেননি প্রাইভেট কারের চালক। মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ থেকে বাঁচতে রাস্তার পাশের একটি কৃষ্ণচূড়া গাছকে ধাক্কা দিয়েই আবার রাস্তায় উঠে আসে। ততক্ষণে গাছটির পাশে বেঞ্চে বসে থাকা স্থানীয় চা-দোকানি ভুলু আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। বিষয়টি বুঝতে পেরে দ্রুত গতি বাড়িয়ে সামনের দিকে এগুতেই মোটরসাইকেলটির সঙ্গে ধাক্কা খায় প্রাইভেট কারটি। মোটরসাইকেলটির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে দুই বন্ধুই রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় প্রাইভেট কারের চালক দ্রুত নিজেদের বাঁচাতে আবারও বগুড়ার দিকে এগুতে গিয়ে সামনের একটি রিকশার পর ভ্যানের সঙ্গে ধাক্কা খায়। সবমিলিয়ে মোট আটজন আহত মানুষের দেহ গড়াগড়ি খেতে থাকে রাস্তায়। দুর্ঘটনার পর শব্দ আর আহতদের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে আসতে থাকলে কারের চালক পালিয়ে যায়।
খবর পেয়ে নাটোর ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তুরিণ-নাঈমসহ ৪ জনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। মাথায় গুরুতর জখম নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৩টার দিকে তুরিণ মারা যায়। অপরদিকে দুই পায়ের গোড়ালি ভাঙ্গা আর শরীরের জখমের চিহ্ন নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নাইমের মৃত্যু ঘটে।
সোমবার সকাল ৯টায় ঈদের জামাত শেষে উত্তরা গণভবনের সামনে তুরিণের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, সামিউল ইসলাম ওরফে তুরিণ নাটোর সদর উপজেলার দিঘ্পাতিয়া বাজার এলাকার নূরুল সরকারের ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে তুরিণ ছোট। মাত্র ৬ মাস আগে নাটোর পুলিশ লাইন্সে রেশনিং বিভাগে সে চাকরি পেয়েছে। উপহার স্বরুপ বাবার কাছ থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকায় কিনেছে পালসার গাড়ি। অন্যদিকে একই এলাকার পূর্ব হাঘুড়িয়া গ্রামের নূরুর ছেলে নাঈম সোনার। বাবা-মার আদরের দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে নাঈমই বড়। প্রায় ১০ বছর আগে বাবা মানসিক ভারসাম্য হারান। মা হামিদা বেগম দু-সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে ছেলে-মেয়েকে নিজ বাবা-মা’র কাছে রেখে ঢাকায় চাকরি নেন। নানা-নানীর কাছেই বড় হতে থাকা নাঈম স্থানীয় একটি কম্পিউটার দোকানে চাকরি নেয়। এলাকার যুবক-ছেলে-মেয়েদের কাছে এই সুবাদে নাঈম খুবই পরিচিত। বন্ধু মহলে তার খুবই কদর। তুরিণ মোটরসাইকেল কেনার পর প্রায় প্রতিদিনই নাঈমকে নিয়ে সন্ধ্যার পর বেড়াতে বের হয়। চাঁদ রাতেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
/এনআই/