শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে প্রক্সির মাধ্যমে পাস করে ভর্তির অভিযোগ উঠার পর গত বছরের ২১ ডিসেম্বর সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি করে প্রশাসন। কিন্তু গত প্রায় সাত মাসেও এ কমিটির কোনও সভা ডাকা হয়নি।
তদন্ত কমিটির সদস্য গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো.সাজেদুল করিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রক্সির ঘটনায় সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি হলেও গত সাত মাসেও কোনও সভা ডাকা হয়নি।’ তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক ড. সাবিনা ইসলাম বলেন, ‘কমিটিতে সদস্য হিসেবে আমি আছি কি না, তা নিশ্চিত নই। কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে আমাকে জানানো হয়নি।’
শাবির ভর্তি পরীক্ষা কমিটি সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৬ নভেম্বর ‘এ’ ইউনিটের মানবিক বিভাগের ভর্তি পরীক্ষা ছিল। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী মো. হোসেন রাব্বি এ বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন। পরে ২০ ডিসেম্বর তিনি ইউনিটভুক্ত ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হতে আসেন। ওইদিনই অভিযোগ উঠে, হোসেন রাব্বি আদতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশই নেননি। তার হয়ে অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র পরীক্ষা দিয়েছেন। এ অভিযোগ উঠার পর শাবির কয়েক শিক্ষার্থী রাব্বিকে আটক করে প্রশাসনের হাতে তুলে দেন। এর পরদিন ২১ ডিসেম্বর প্রশাসন সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। হোসেন রাব্বি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে ২০১৬ সালে এইচএসসি পাস করেন।
দীর্ঘ সময়েও কেন তদন্ত রিপোর্ট দেওয়া হয়নি জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. আখতারুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের কাজ শেষ হয়েছে। এটা হলো টেকনিক্যাল কাজ-ছবির সঙ্গে অভিযুক্তকে মেলানো। পাসপোর্ট অফিসের বিশেষজ্ঞ দিয়ে বিষয়টি পরীক্ষা করানো হচ্ছে।’ কবে নাগাদ রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে সেটা ড. আখতারুল ইসলাম নিশ্চিত করতে পারেননি।
ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. এ এইচ এম বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘হ্যান্ড রাইটিং ও ফটোগ্রাফ বিষয়ক দুজন বিশেষজ্ঞের কাছে তদন্তের জন্য অভিযুক্ত রাব্বির হাতের লেখা ও ছবি পাঠানো হয়েছে।’
সভা ডাকা হচ্ছে না বলে তদন্ত কমিটির সদস্যদের অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘এটা মিটিংয়ের কিছু নয়। তবে একটা-দু’টা মিটিং হতে পারে।’
রাব্বির বিষয়ে রিপোর্ট দেওয়ার আগে একই বছরের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতিতে সহযোগিতার অভিযোগে আটক বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল আমিনের তদন্তের রিপোর্ট এ সপ্তাহে দেওয়া হবে বলে জানান অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন। আল আমিন শাবির ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও শাবি শাখা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির কর্মী। ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতিতে সহযোগিতা দিতে ব্যবহৃত ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসসহ তাকে ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলামের কক্ষ থেকে আটক করা হয়েছিল।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হোসেন রাব্বির মা মোবাইল ফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘রাব্বি এখন বাড়িতেই আছে। সে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে না।’
রাব্বির ব্যাচের শিক্ষার্থীরা জানান, রাব্বি ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হলেও ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি।
/এএম/এমএ/