আশুলিয়ায় র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করা জঙ্গি ইরফানুল ইসলাম ওরফে সুফিয়ান খান আড়াই মাস আগে কোচিংয়ে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। এরপর আর বাড়ি ফেরেনি সে। সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজির পরও তার কোনও সন্ধান পাননি পরিবারের সদস্যরা। এই সময়ে ইরফান বাসায় ফোন বা অন্য কোনও ধরনের যোগাযোগ করেনি।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ইরফান ২০১৪ সালে হাটহাজারী এলাকার পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে। ২০১৬ সালে নগরীর চকবাজারের বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে ইরফান তৃতীয়। তার বড় বোন লিজার বিয়ে হয়েছে অনেক আগে। বড় ভাই মো. রায়হানুল ইসলাম বাবার সঙ্গে সৌদি আরবে থাকেন। ছোট ভাই এহছান গত বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন।
ইরফানের বাবা রফিকুল ইসলাম এখন দেশে আছেন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘ইরফান গত ২ মে বিকাল ৩টার দিকে কোচিংয়ে ভর্তি হওয়ার কথা বলে বের হয়ে যায়। এরপর তার কোনও খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি। ঘটনার পরদিন তার মা হাটহাজারী থানায় জিডি করেন। র্যাবকেও বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করা হয়। কিন্তু এরপরও তার কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। ইরফান কখনও বাসায় ফোনও করেনি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইরফানের এক প্রতিবেশী জানান, ইরফান কোচিংয়ে ভর্তির কথা বলে ২ হাজার টাকা ও তার ব্যবহৃত ল্যাপটপ নিয়ে বেরিয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘ছেলের জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়টি হয়তো পরিবার আঁচ করতে পেরেছিল। তাই প্রথম দিকে কয়েকদিন খোঁজাখুঁজি করলেও পরবর্তীতে আর খোঁজা হয়নি।’
তবে রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ছেলে নিখোঁজের খবর শুনে দেশে আসার পর থেকে তিনি র্যাব-৭ এর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করেছেন। র্যাব তাদের বিষয়টি অনেক আন্তরিকতার সঙ্গে নিয়ে ইরফানকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে।
তিনি কেঁদে কেঁদে বলেন, ‘ছেলেকে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে শুনে তার মা পাগলপ্রায়। এই ঘটনায় আমি নিজেও হতবাক। আমার ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ইরফান সবার চেয়ে শান্তশিষ্ট ছিল। সে ডাক্তার হতে চেয়েছিল।’
এরফানের ছোট ভাই এহসান জানায়, ‘আমি ও আমার ভাই সবসময় একসঙ্গে থাকতাম। সে খুবই শান্তশিষ্ট। তাকে নিয়ে আমাদের কখনই সন্দেহ হয়নি।’
এদিকে র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ইরফান তার গ্রামের বাড়ি রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের মিয়াজী গ্রামে দাবি করলেও খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কদলপুর ইউনিয়নে এই নামে কোনও গ্রাম নেই। তার গ্রামের বাড়ি কদলপুর ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ড মধ্যম কদলপুরে। বাড়ির নাম কোয়াইশ মীরের বাড়ি। তবে এখন এটি খোকন মেম্বারের বাড়ি হিসেবে পরিচিত।
গ্রামের বাড়ি রাউজানের কদলপুরে হলেও ২০১১ সাল থেকে ইরফানদের পরিবার হাটহাজারীতে বসবাস করছে। হাটহাজারী কলেজের কাছে একটি ভবনের তৃতীয়তলায় তারা থাকেন।
ইরফানের গ্রামের বাড়ির প্রতিবেশী গ্রাম পুলিশের দায়িত্ব পালনকারী মো. আব্দুল শুক্কুর বলেন, ‘ইরফানদের বাড়ি আমাদের পাশের বাড়ি। ওই বাড়ির নাম কোয়াইশ মীরের বাড়ি তবে এখন খোকন মেম্বারের বাড়ি হিসেবে অধিক পরিচিত।’
তিনি বলেন, ‘ওর বাপ-চাচারা সবাই অনেক ভালো মানুষ। ছেলেটাও অনেক শান্তশিষ্ট ছিল। বাড়িতে আসলে আমাদের দেখলে অনেক সম্মান করতো।’
কদলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তছলিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘ইরফানের চাচা আজম খান সর্ম্পকে আমার বন্ধু হয়। দুই-আড়াই মাস আগে সে আমাকে জানিয়েছে তার ভাতিজা কোচিং এর কথা বলে বাসা থেকে বের হওয়ার পর আর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তখন ইউনিয়ন পরিষদে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করার কথা বললে আমি তাকে থানায় জিডি করতে বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘ওই সময় আজম আমাকে বলেছে তার ভাতিজা ইন্টারমেডিয়েটে রেজাল্ট খারাপ করায় হতাশাগ্রস্ত ছিল।’
হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ইরফান নিখোঁজের ঘটনায় তার মা থানায় জিডি করেছেন। অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ-খবর করেছি। কিন্তু তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।’
উল্লেখ্য গত ১৬ জুলাই রবিবার সাভারের আশুলিয়ায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়ি ঘেরাও করে র্যাব। সেখান থেকে ইরফানসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। চারজনই র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
/বিএল/এফএস/
আরও পড়ুন-
‘ভালো ছেলে’ আলমগীরের জঙ্গি হওয়া মানতে পারছেন না স্বজনরা
মাদ্রাসায় যাওয়ার কথা বলে ‘নিখোঁজ’ হয় জঙ্গি মোজাম্মেল