X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাহাড় ধসে কাউখালীর তিন বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত

জিয়াউল হক, রাঙামাটি
২৭ জুলাই ২০১৭, ১০:৫২আপডেট : ২৭ জুলাই ২০১৭, ১০:৫২

পাহাড় ধসে কাউখালীর তিন বিদ্যালয়ের কার্যক্রম ব্যাহত টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধস ও পাহাড়ি ঢলে রাঙামাটির কাউখালীর তিন উচ্চ বিদ্যালয় মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া দুটি স্কুলে পাহাড় ধস না হলেও শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বললেই চলে। এসব স্কুলগুলোতে বর্ষা উপেক্ষা করে প্রতিদিন খোলা আকাশের নিচে আবার কোনও কোনও স্কুলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে ক্লাস। মূলত ১৩ ও ১৪ জুন পাহাড় ধসে এসব স্কুলের পাঠ কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনও পরিদর্শন টিম বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা স্কুলগুলো দেখতে যাননি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পাহাড় ধসে উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের নাইল্যাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি অফিস রুমসহ মোট ৯টি ক্লাস রুমের একটি ভবন সম্পূর্ণ মাটির নিচে চাপা পড়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যবান সব সার্টিফিকেট। মাটিচাপা পড়েছে প্রায় দু’হাজার পাঠ্যবইসহ দেড় শতাধিক পড়ার বেঞ্চ ও ৩টি আলমিরা। পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে ভবন। বিপদজনক ভবনের সামনে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে লাল পতাকা। ৪ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য অবশিষ্ট রয়েছে একটি মাত্র কক্ষ। এতে প্রাণের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও ক্লাস চালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকরা। বাকি ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস করছে খোলা আকাশের নিচে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫০ লাখ টাকা ছাড়াতে পারে বলে ধারণা করছেন স্কুল পরিচালনা কমিটি। পাহাড় ধসে কাউখালীর তিন বিদ্যালয়ের কার্যক্রম ব্যাহত

কমিটির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এত বড় বিপর্যয়ের পড়েও সংশ্লিষ্ট অধিদফতর, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কেউই দেখতে আসেনি।
তিনি আরও জানান, ক্লাস চলাতে পার্শ্ববর্তী মাঝিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ধার করা হয়েছে বেঞ্চ।
বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মো. আজগর আলী জানান, এভাবে চলতে থাকলে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। ফলাফল বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকবে শতভাগ।
ঘাগড়া ইউনিয়নের ঘাগড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ঘাগড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮টি কক্ষের মধ্যে ৩টি সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। পরিত্যক্ত করা হয়েছে কক্ষগুলিকে। পাঁচ শতাধিক ছাত্রছাত্রী নিয়ে অবশিষ্ট কক্ষগুলিতে গাদাগাদি করে ক্লাস চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষকরা। বিদ্যালয়ের স্যানিটেশন ও পানি ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। পাহাড় থেকে নেমে আসা পলিমাটিতে ভরে গেছে পুরো মাঠ। পাশাপাশি থাকা ঘাগড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কাঁচা ঘরসহ সব মালামালই পানিতে ভেসে গেছে। অবশিষ্ট যা আছে তাও সম্পূর্ণরূপে মাটিচাপা পড়েছে। দুটি স্কুলের একাডেমিক ভবন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। পাহাড় ধসে কাউখালীর তিন বিদ্যালয়ের কার্যক্রম ব্যাহত
ঘাগড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা চন্দ্র দেওয়ান জানান, বন্যা ও পাহাড় ধসের পর প্রায় দু মাস পার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত এসব স্কুলগুলো দেখতে শিক্ষা অধিদফতরের কোনও টিম দূরে থাক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দেখাও মেলেনি।
তিনি আরও জানান, এভাবে চলতে থাকলে এর প্রভাব জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ওপর পড়বে এতে কোনও সন্দেহ নেই।
এছাড়াও কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘাগড়া ইউনিয়নের হারাঙ্গীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, উত্তর মুবাছড়ি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এসব স্কুলগুলোর তেমন একটা ক্ষতি না হলেও সুষ্ঠুভাবে পাঠদান করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষকরা।
পাহাড় ধসে কাউখালীর তিন বিদ্যালয়ের কার্যক্রম ব্যাহত ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোর বিষয়ে কথা হয় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাজমুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দুর্যোগে উপজেলার তিনটি স্কুল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুটি স্কুল। এর মধ্যে নাইল্যাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় প্রায় ৭০ লাখ, ঘাগড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ৭০ লাখ ও ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও কমবেশি ক্ষতির তালিকায় রয়েছে হারাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয় ও মুবাছড়ি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোর তালিকা আমি তাৎক্ষণিকভাবে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরে পাঠিয়েছি।’
এত বড় দুর্যোগের পর স্কুলগুলো পরিদর্শনে যাওয়া হয়েছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় ওই মুহূর্তে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে।’
যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার পর শিক্ষা কর্মকর্তা স্কুল পরিদর্শন করেছেন বলে জানালেও সংশিষ্ট প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা বলেছেন কেউ আসেননি তাদের খবর নিতে।

/এআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিক্রির জন্য সবজি কিনে ফেরার পথে দুই ব্যবসায়ী নিহত
বিক্রির জন্য সবজি কিনে ফেরার পথে দুই ব্যবসায়ী নিহত
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
রাজধানীতে খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভ
রাজধানীতে খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভ
প্রচণ্ড গরমে দই-ফলের এই ডেজার্ট বানিয়ে খান
প্রচণ্ড গরমে দই-ফলের এই ডেজার্ট বানিয়ে খান
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি