X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

গাইবান্ধায় চিকিৎসার নামে ‘নাচ-গান’

জিল্লুর রহমান পলাশ, গাইবান্ধা
২৮ জুলাই ২০১৭, ১৭:৩০আপডেট : ২৮ জুলাই ২০১৭, ১৭:৫৪

রোগীকে ঘিরে চলছে নাচ-গান গাইবান্ধার প্রত্যন্ত এলাকায় জটিল সব রোগ সারাতে চলছে কবিরাজি চিকিৎসা। মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুঁজি করে নেচে-গেয়ে চিকিৎসার নামে চলছে প্রতারণা। এসব অপচিকিৎসায় রোগীরা আরও জটিল রোগে আক্রান্ত হলেও কবিরাজদের দাবি, তাদের এমন চিকিৎসায় অনেক রোগী সুস্থ হয়েছেন। প্রতিদিনই এ ধরনের অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন গ্রামাঞ্চলের মানুষ। কিন্তু এই কবিরাজ ও ফকিরদের বিষয়ে উদাসিন প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ।

গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের তিলকপাড়া গ্রাম। প্রত্যন্ত এ গ্রামের মুনছুর আলীর স্ত্রী  সালেহা বেগম (৫২)।তিন মাস আগে হঠাৎ করে তার হাত-পা অবশ (প্যারালাইসিস)হয়ে যায়। সরেজমিনে গিয়ে মুনছুর আলীর বাড়িতে নাচ-গানের আসর দেখা যায়। জানা গেল,মুনছুর আলীর অসুস্থ স্ত্রী সালেহা বেগমের চিকিৎসা চলছে।

সালেহা বেগমের রোগ সারাতে চলতে নাচ-গান কবিরাজের কথায় বাড়ির উঠানে টানানো হয় সামিয়ানা। সামিয়ার নিচে মাঝখানে চেয়ারে বসানো হয় রোগীকে। তার চারপাশে দাঁড় করে রাখা হয়েছে চারটি কলাগাছ। আর এই কলাগাছের সঙ্গে সাঁড়িবদ্ধ করে রাখা হয়েছে জনাদশেক কন্যা শিশুকে।

ভেতরে চলছে খঞ্জনি, দোতরা আর ঢোল-ঢাকের বাজনা। এসব বাজনার সঙ্গে কবিরাজ নিজেই চারপাশে ঘুরছেন। একটু পরপর রোগীর হাত-পায়ে তেল মালিশ ও ঝাড়ু দিয়ে আঁচড় (স্পর্শ) করেই নাকি রোগ সাড়াচ্ছেন কবিরাজ। এসব চিকিৎসার জন্য কবিরাজ রোগীর স্বজনদের সঙ্গে মোটা অংকের টাকায় আগেই চুক্তিবদ্ধ হন। টাকা হাতে পেলেই কবিরাজ শুরু করেন তার চিকিৎসা কার্যক্রম। তবে  ঢাক-ঢোল আর গানের শব্দে কখনও কখনও রোগী নিজেই চিৎকার করে উঠছেন। তারপরেও চলছে চিকিৎসা।

 সালেহা বেগমকে ঝাড়-ফুঁক দেওয়া হচ্ছে মুনছুর আলী জানান, তার স্ত্রীর রোগ নিয়ে কখনও কোনও চিকিৎসকের পরামর্শ নেননি। এমনকি তিনি কোনও চিকিৎসা কেন্দ্রেও যাননি। তবে স্ত্রীকে সুস্থ করে তুলতে তিনি তার বাড়িতে ডেকে আনেন  পলাশবাড়ীর ফকিরহাটের কবিরাজ শহিদুল বাবরীকে।  ৮ দিন ধরে কবিরাজ  তার দলবল নিয়ে বেহুলার গানের সঙ্গে নেচে নেচে সালেহা বেগমের হাত-পায়ে মালিশ করছেন তেল। আবার কখনও দেওয়া হচ্ছে ঝাড়ুর আঁচড়। এভাবে তেল মালিশে তার স্ত্রী সুস্থ হচ্ছেন।আগের চেয়ে তার স্ত্রী এখন অনেকটাই সুস্থ। এভাবে আরও কিছুদিন চিকিৎসা চললে তিনি পুরোপুরি সুস্থ হবেন বলে দাবি মনছুর আলীর।  

তিলপাড়া গ্রামের হুমায়ুন কবীর জানান, এভাবে চিকিৎসা ভণ্ডামি ছাড়া কিছুই নয়।  এ কাজে বাধা দিলে রোগীর স্বজনরা  উল্টো তাদের হুমকি দেন।

মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনারুল ইসলাম জানান, মানুষের মধ্যে এখনও সেই পুরনো আমলের ধ্যান-ধারণা রয়েছে। এসব ধ্যান-ধারণার কারণে তারা তেল মালিশ ও ঝাড়-ফুঁকে বিশ্বাসী। এমন চিকিৎসা একটি ভণ্ডামি ও প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়। তবে এমন অপচিকিৎসায় বাঁধা দিলেও উল্টো তাদের হুমকির মধ্যে পড়তে হয়। এ কারণে তারা অনেকটাই অসহায়।

চলছে কবিরাজি চিকিৎসা কবিরাজ শহিদুল বাবরী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমি জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বাত, ব্যথা ও প্যারালাইসিসহ নানা রোগের চিকিৎসা করে আসছি। এরমধ্যে প্যারালাইসিস রোগের চিকিৎসায়ই বেশি করি। এ পর্যন্ত আমার হাতে অনেক রোগী সুস্থ হয়েছেন।’

 এ বিষয়ে সাদুল্যাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর মেডিক্যাল অফিসার ডা. মারদিয়া সারাহ বলেন, ‘আধুনিক যুগেও গ্রামগঞ্জের এমন অপচিকিৎসার পেছনে সচেতনতার অভাব রয়েছে। কারও রোগ হলে প্রথমেই তাকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রোগ শনাক্ত করতে হবে। তা না হলে এসব অপচিকিৎসার কারণে রোগী আরও জটিল রোগে ভুগবেন। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহলের সহায়তায় এসব চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তাছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগ পুলিশের সহায়তা নিয়ে এসব ভণ্ড কবিরাজদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

দীর্ঘদিন ধরে কবিরাজ শহিদুল বাবরী ছাড়াও জেলার প্রত্যন্ত পল্লীতে অসংখ্য কবিরাজ-ফকির নিরীহ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে আসছেন। হাতিয়ে নিচ্ছেন নিরীহ মানুষের টাকা। সেই সঙ্গে রোগী আরও জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে স্থানীয় পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগ এ বিষয়ে উদাসিন থাকায় দিনদিন এসব কবিরাজ-ফকিরের দৌরাত্ম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাদুল্যাপুর থানার ওসি ফরহাদ ইমরুল কায়েস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘ আমরা এ ধরনের চিকিৎসার কথা শুনেছি। তবে কোনও লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় ব্যবস্থা নিতে পারছি না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতরকে জানিয়েছি। তার এ ব্যাপারে সহায়তা চাইলে আমরা পুলিশ দিয়ে সহযোগিতা করবো।’

/এআর/ এপিএইচ/

 

 

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
রংপুর হাসপাতালে বাড়ছে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী, ৫ দিনে ২২ জনের মৃত্যু
রংপুর হাসপাতালে বাড়ছে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী, ৫ দিনে ২২ জনের মৃত্যু
তুর্কি মিডফিল্ডারের গোলে শিরোপার আরও কাছে রিয়াল মাদ্রিদ
তুর্কি মিডফিল্ডারের গোলে শিরোপার আরও কাছে রিয়াল মাদ্রিদ
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!