কেবল বৃষ্টির পানি জমে মাদারীপুরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ প্রায় এক মাস ধরে স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরাসহ ওইসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাদারীপুরের নতুন শহর এলাকার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, আলহাজ্ব আমিনউদ্দিন হাই স্কুল, পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারি হাঁস-মুরগির খামার, সরকারি পশু অফিস, চরমুগরিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ জেলার অর্ধশতাধিক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি জমে আছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মাদারীপুরে এ বছর বন্যা অবস্থা হয়নি। কেবল বৃষ্টির পানি জমেই এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। জেলা শহরের ব্যক্তিগত পুকুর ছাড়াও সরকারি খাল ও ডোবাগুলো অবৈধভাবে ভরাট করে দখল করার কারণে এই অবস্থার মূল কারণ।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) মাদারীপুর অফিস ও মাদারীপুর পৌরসভার হিসেব অনুযায়ী, প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০ অনুযায়ী পুকুর ভরাট নিষিদ্ধ থাকলেও মাদারীপুর শহরের ১ হাজার ৩শ পুকুরের মধ্যে গত চার বছরেই পাঁচ শতাধিক পুকুর ভরাট করা হয়েছে।
মাদারীপুরের আলহাজ্ব আমিনউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকমল হোসেন পিলু বাংলা ট্রিবিকউনকে বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যালয়ে প্রতিটি কক্ষের মধ্যে পানি জমেছে। বন্যার পানি হলে মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু শুধু বৃষ্টির পানিতে শ্রেণিকক্ষেও হাঁটুসমান পানি মেনে নেওয়া যায় না। জানি না, এ থেকে কবে পরিত্রাণ পাব।’
মাদারীপুর পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলওয়ারা বেগম বলেন, ‘স্কুলের মাঠে পানি জমে থাকায় শিক্ষার্থীদের পিটি (শরীরচর্চা) করানো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ক্লাসের মধ্যে শরীরচর্চা করানোর চেষ্টা করা হয়, কিন্তু তা ঠিকঠাকভাবে করা যায় না। এছাড়া মাঠের পানি পার হয়ে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের ক্লাসে ঢুকতে অনেক কষ্ট হয়। পানি বের হওয়ার জন্য স্কুলভবনের পাশ দিয়ে ড্রেনের লাইন নির্মাণ করেও জলাবদ্ধতা দূর করতে পারিনি।’
মাদারীপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেফাউর রহমান বলেন, ‘এমনিতেই আমাদের ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত। তার ওপর একমাস ধরে হাঁটুসমান পানি জমে স্থায়ী জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবাই ভোগান্তিতে পড়েছেন।’
মাদারীপুর পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ বলেন, ‘পৌরসভার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে চেষ্টা করা হলেও প্রভাবশালীরা বিভিন্ন কৌশলে পুকুর, ডোবা ও খালগুলো ভরাট করে ফেলায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাই উন্নতমানের ড্রেন নির্মাণ করেও জলাবদ্ধতা নিরসর করা সম্ভব হয়নি।’ আগামীতে এ বিষয়ে পৌরসভা আরও কঠোর অবস্থানে থাকবে এবং জলাবদ্ধতা দূরীকরণে সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন-