উদ্যোগ নিলে মাত্র এক মিনিটে কত কিছুই না বদলে যেতে পারে। যেমন বদলে গেলো ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে আজ সোমবার (১৪ আগস্ট) ভোলার এই উপজেলায় মাত্র এক মিনিটে রোপণ করা হয়েছে এক লাখ নতুন চারাগাছ। আর এই অভিনব উদ্যোগটি নিয়েছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন।
সরেজমিন দেখা গেছে, বোরহানউদ্দিন উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে সোমবার দুপুর ১২টা ১ মিনিটে উপজেলাজুড়ে একইসঙ্গে রোপণ করা হয় এক লাখ চারাগাছ। উপজেলার পাওয়ার প্লান্ট এলাকায় এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। এটি তারই উপজেলা। ঠিক একই সময় উপজেলার ৫০৭টি স্পটে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, সড়কের পাশ, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিস প্রাঙ্গণে একযোগে বাকি চারাগাছগুলো রোপণ করেন স্থানীয়রা।
উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার ৫০৭টি স্পটের প্রতিটিতে একজন করে ব্যক্তিকে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতিটি স্পটেই ফলজ, বনজ, ওষুধী ও ফুলের গাছসহ মোট ২১ প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। শুধু এতেই শেষ নয়, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পুরো জেলায় আরও ১০ লাখ গাছের চারা রোপণের ঘোষণা দেন পরিবেশ ও বন উপ-মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব।
তিনি বলেন, ‘গাছ আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছের কোনও বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন প্রত্যেককে তিনটি করে গাছের চারা রোপণের। তাই আয়োজকদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।’
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরন্নবী চৌধুরী শাওন, ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আযম মুকুল, জেলা প্রশাসক মো. সেলিমউদ্দিন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মমিন টুলু, পুলিশ সুপার মো. মোকতার হোসেন, বোরহানউদ্দিন উপজেলা চেয়ারম্যান মহব্বতজান চৌধুরী, পৌর মেয়র মো. রফিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল কুদ্দুছ জানান, শোকের মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে ও বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধের উদ্দেশ্যেই মূলত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বিভিন্ন উদ্যোক্তা, সামাজিক সচেতন ব্যক্তি, যুব ও ছাত্র সমাজ সকলের সমন্বয়ে কাজটি সম্পন্ন করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন।
তিনি আরও জানান, এ কর্মসূচির জন্য সংগ্রহ করা মোট এক লাখ গাছের চারার মধ্যে প্রতিটি ৬ টাকা দরে ৩১ হাজার চারা কেনা হয়েছে স্থানীয় বন বিভাগ থেকে। এছাড়া পাশের জেলা স্বরূপকাঠীর বিভিন্ন নার্সারি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে ৫৫ হাজার গাছের চারা। সর্বনিম্ন ১২ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা দরে এসব গাছ কেনা হয়েছে। একইভাবে বাকি ১৪ হাজার গাছ বোরহানউদ্দিনের আশেপাশের নার্সারি থেকে কেনা হয়েছে। এসব গাছের চারা কেনার অর্থ স্থানীয় বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তির কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
শোক দিবস উপলক্ষে এক লাখ গাছের চারা রোপণ মহতী উদ্যোগ, কিন্তু এগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হলে যে পরিচর্যার প্রয়োজন সে দায়িত্ব কার—এমন প্রশ্নে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, প্রতিটি স্পটের যিনি দায়িত্বে ছিলেন গাছগুলো রক্ষা ও পরিচর্যার দায়িত্ব তার বা তার প্রতিষ্ঠানের ওপর বর্তাবে। যেমন কোনও স্কুলে গাছ লাগানোর দায়িত্বে যদি থাকেন সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাহলে গাছগুলো পরিচর্যার দায়িত্বও তাকে নিতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোরহানউদ্দিন মহিলা কলেজের প্রভাষক মো. মনিরুজ্জামান জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর মধ্যে ভোলা অন্যতম। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল হচ্ছে ভোলা। তাই জলবায়ুজনিত কারণে কার্বনের যে বোঝা তাতেও ক্ষতিগ্রস্ত আমরা। তাই আমরা যত বেশি গাছ লাগাবো তত বেশি বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাবো। আজ উপজেলা প্রশাসন যে কর্মসূচি নিয়েছে তাকে সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি পুরো উপকূলীয় অঞ্চলে এ ধরনের কর্মসূচি আরও নেওয়ার দাবি জানাই।
/এনআই/টিএন/