X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গাইবান্ধায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ধস: ৪০ গ্রাম প্লাবিত

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
১৫ আগস্ট ২০১৭, ১৯:৫৬আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০১৭, ১৯:৫৭

ঢুবে গেছে বাড়িঘর, রাস্তা, রেললাইন গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার করতোয়া নদীর পানির চাপে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দু’টি জায়গা ধসে গেছে। এছাড়া গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ একটি কাঁচা রাস্তা ভেঙে গেছে। পানিতে ৪০ গ্রামের ঘরবাড়ি, আমন ধান, পুকুর, বীজতলা, শাক-সবজি, পানের বরজ ও আখ ক্ষেতসহ বির্স্তীণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
তবে ঝঁকিপূর্ণ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন ঠেকাতে তিন প্লাটুন সেনাবাহিনী কাজ করছে। সোমবার (১৪ আগস্ট) বিকালে রংপুর থেকে আসা সেনাবাহিনীর কারিগরি দল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা মেরামতের কাজ শুরু করেছে।

মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সকালে পলাশবাড়ী উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের চেরেঙ্গা গ্রামে করতোয়া নদীর পানির চাপে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। স্থানীয় লোকজন ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করলেও দুপুরে বাঁধের প্রায় ৪০ ফিট অংশ ধসে গেছে। এতে ইউনিয়নের চেরেঙ্গা, কিশামত চেরেঙ্গা ও করিয়াটাসহ ১০ গ্রামে পানি ঢুকে বির্স্তীণ এলাকা প্লাবিত হয়।

পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের টোংরারদহ এলাকায় করতোয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৬০ ফিট ধসে যায়। এতে বড় শিমুলতলা, তেকানী, প্রজাপাড়া, কেশবপুর, চকবালা, সগুনা, পশ্চিম মির্জাপুর, কাশিয়াবাড়ী, কিশোরগাড়ী, গনকপাড়া, হাসানখোর, জাফর, মুংলিশপুরসহ ইউনিয়নের ১৫ গ্রাম প্লাবিত হয়।

গাইবান্ধায় ঢুবে গেছে গ্রামের ঘরবাড়ি এছাড়া দুপুর ১২টা থেকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নে করতোয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের হাতিয়াদহ এলাকায় ধস দেখা দেয়। দুপুর ২টা পর্যন্ত বাঁধের দেড়শ ফিট ভেঙে যাওয়ায় এ ইউনিয়নসহ তালুককানুপুর ইউনিয়নের ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এর আগে সোমবার রাতে করতোয়া নদীর পানিতে দরবস্ত ইউনিয়নের ছোট দূর্গাপুর-বিশ্বনাপুর কাঁচা রাস্তার ১০০ মিটার অংশ ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পানিতে ইউনিয়নের অভ্যন্তরে আরও ৫ গ্রাম প্লাবিত হয়।

দরবস্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম জর্জ বলেন, ‘করতোয়া নদীর পানি প্রবাহে বাঁধের অংশ ও একটি কাঁচা রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ভাঙন ঠেকাতে কাজ করলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে পানি ঢুকতে থাকলে পুরো ইউনিয়নের ২০ হাজার  মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়বেন।’

কিশোরগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রিন্টু বলেন, ‘বাঁধের ধসে যাওয়া অংশ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বালুর বস্তা ফেলে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বাঁধ রক্ষা করা সম্ভব না হলে ইউনিয়নের অনেক গ্রাম পানিতে তলিয়ে যাবে।’

হোসেনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তৌফিকুল আমিন মণ্ডল টিটু বলেন, ‘পানির চাপে চেরেঙ্গায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪০ ফিট অংশ ধসে যায়। ফলে পানিতে ১০ গ্রামের বির্স্তীণ এলাকায় প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয় লোকজন ভাঙন ঠেকাতে চেষ্টা করছে।’

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘বাঁধসহ রাস্তার ভাঙন ঠেকাতে স্থানীয়দের নিয়ে কাজ চলছে। আশা করা হচ্ছে বাঁধের ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হবে।’

এদিকে, ব্রহ্মপত্র-যমুনা ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে সদর উটজেলা, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ইতোমধ্যে চার উপজেলার ২৬ ইউনিয়নের ৩০ হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। ঢুবে গেছে আমন চারাসহ বিভিন্ন জাতের ফসলি জমি। পানিতে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। গত ৫ দিন ধরে পানিবন্দি ও বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেওয়া মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট।

বন্যায় গাইবান্ধায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের ওয়ার্ড সদস্য আবদুল হামিদ বলেন, ‘বন্যায় ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। ডুবে গেছে আবদি জমিসহ স্কুল, মাদ্রাসা, বালাসী রেলের ছোট বাজার এবং রাস্তা। নদী ভাঙন আর চরের বাড়িতে পানি উঠায় বালাসীঘাটের রেল লাইনে দুই শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।’

ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বন্যার কারণে ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের ৩০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। মানুষের দুর্ভোগের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট।’

গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ পাল বলেন, ‘জেলার চার উপজেলার চরাঞ্চল-নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তাছাড়া অন্য উপজেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এলাকার কাঁচা রাস্তা তলিয়ে যাওয়া ও বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে উচু বাঁধ, রেলের জায়গা, স্কুল ও আশ্রয়নকেন্দ্রে থাকা বানভাসীদের সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। তাদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। আজ-কালের মধ্যে ত্রাণ হিসেবে চাল-ডাল, শুকনা খাবারসহ নগদ টাকা বিতরণ করা হবে।’

/এসএমএ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সবজির বাজার ঊর্ধ্বমুখী, তীব্র গরমকে দুষছেন বিক্রেতারা
সবজির বাজার ঊর্ধ্বমুখী, তীব্র গরমকে দুষছেন বিক্রেতারা
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা না বলতে আদালতের নির্দেশ
ইমরান খান ও বুশরা বিবিরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা না বলতে আদালতের নির্দেশ
বিতর্কিত আউটের ছবি পোস্ট করে মুশফিক লিখলেন...
বিতর্কিত আউটের ছবি পোস্ট করে মুশফিক লিখলেন...
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী