X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভাঙছে সৈকত, প্রাণ হারাচ্ছে কুয়াকাটা

রাজিব বসু, পটুয়াখালী
২৩ আগস্ট ২০১৭, ০৮:১৮আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০১৭, ০৮:১৮

সমুদ্রের ভাঙনে বিলীন হচ্ছে কুয়াকাটার সৌন্দর্য

ঢেউয়ের তোড়ে অব্যাহত ভাঙনের ফলে প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য। চলতি বর্ষা মৌসুমের অস্বাভাবিক জোয়ারে এ ভাঙন আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। ঢেউয়ের ঝাপটায় ক্ষয়ে যাচ্ছে বালু। এতে ধীরে ধীরে সাগরগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যানসহ বনাঞ্চলের শত শত গাছপালা। ভাঙনের কবলে পড়েছে সমুদ্র তীরের বহু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এদিকে, বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানিতে সৈকত তলিয়ে থাকায় পর্যটকরাও বাধ্য হচ্ছেন রাস্তায় কিংবা বনাঞ্চলে দাঁড়িয়ে কুয়াকাটার সৌন্দর্য উপভোগ  করতে। সব মিলিয়ে প্রাণহীন হয়ে পড়েছে সমুদ্রপ্রিয় মানুষের অন্যতম প্রিয় কুয়াকাটা।

এদিকে, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে সরকারের একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে কুয়াকাটার সৌন্দর্য কিছুটা হলেও ফিরে আসবে বলে আশাবাদ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

কুয়াকাটার এই পরিবর্তনের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তন আর বৈশ্বিক উষ্ণতাকেই দায়ী করছেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) উদ্যান বিভাগের চেয়ারম্যন অধ্যাপক ড. মাহবুব রব্বানী। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সারাবিশ্ব যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। এক্ষেত্রে উপকূলীয় এলাকাগুলো বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে। পটুয়াখালী উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় এই এলাকার ঝুঁকি বেশি। এসব এলাকায় পানির স্তর বেড়ে গেলে যেকোনও সময় ঝড়, জলোচ্ছ্বাসে গাছপালা ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া মাটিতে লবণাক্ততা বেড়ে যায়। এটা গাছপালার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূর্যের আলো ও গাছের মূল থেকে একটি গাছ খাদ্য ও পানি সংগ্রহ করে থাকে। উপকূলীয় এলাকার মাটিতে লবন বেশি থাকায় সেখানকার গাছপালা নিজেদের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করতে পারে না। এ কারণে গাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

অব্যাহত ভাঙনের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে সৈকতের সৌন্দর্য

সরেজমিনে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্রের ঢেউয়ের ঝাপটা ও অব্যাহত বালুক্ষয়ে দীর্ঘ প্রায় ৩৩ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। সৈকতের বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য গাছের মূল। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে চলতি বর্ষা মৌসুমে প্রচণ্ড ঢেউয়ের ঝাপটায় গাছের মূল থেক বালু সরে যাওয়ায় গাছ উপরে পড়েছে। বনাঞ্চলের পাশেও অসংখ্য গাছ উপড়ে পড়ে আছে। পর্যটকরা বলছেন, জোয়ারের সময় সমুদ্রস্নানে মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে তাদের। এছাড়া ঝুঁকিতে রয়েছে সৈকতের সবুজ বেষ্টনী, কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান, দোকান-পাটসহ মসজিদ-মন্দির।

কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটক মো. ইলিয়াস বলেন, ‘আমরা খুলনা থেকে পরিবার নিয়ে এই প্রথমবারের মতো কুয়াকাটায় ঘুরতে এসেছি। জোয়ারের সময় সৈকত পানিতে তলিয়ে থাকে। গাছগুলো এলোমেলোভাবে সৈকতে পড়ে রয়েছে। সবমিলিয়ে কুয়াকাটা ধংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। এমন জায়গায় ঘুরতে আসাটাই বৃথা মনে হচ্ছে।’

জানা যায়, ১৯৬০ সালে বঙ্গোপসাগরের কোলে প্রায় ২শ একর জমিতে একটি বাগান করেছিলেন স্থানীয় ফয়েজ মিয়া।‘ফার্মস অ্যান্ড ফার্মস’ নামের ওই বাগান কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের কাছে ছিল বিশেষ আকর্ষণ। নারকেল, পেয়ারা, কাজু বাদাম, লেবু, কুল, গর্জনসহ বিভিন্ন জাতের ফলদ ও ওষধি গাছ ছিল এই বাগানে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ বাগানের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। গত বছরের বর্ষার শেষে এই বাগানের কিছু অংশ টিকে থাকলেও এ মৌসুমে সেগুলোও টিকে থাকতে পারেনি।

প্রাণহীন হয়ে পড়ছে কুয়াকাটা

উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা অজিত কুমার রুদ্র বলেন, ‘সাগরের অব্যাহত ভাঙনে এরই মধ্যে ফয়েজ মিয়ার নারিকেল বাগানের বিলুপ্তি ঘটেছে। জাতীয় উদ্যানকে কেন্দ্র করে সবুজ বেষ্টনী করতে একটি পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এর কাজ শুরু করা হবে।’

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কলাপাড়া অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার জন্য একটি পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। অচিরেই এর কাজ শুরু হবে। আশা করছি এই প্রকল্প শেষ হলে কুয়াকাটার চিত্র অনেকটাই পাল্টে যাবে।’

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এ বি এম সাদিকুর রহমান বলেন, ‘সৈকতের বালুর ক্ষয় রোধ করতে সরকারের একটি পরিকল্পনা নিয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে কাজটি শুরু হতে পারে।’

 

/এআর/টিআর/আপ-এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
নির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
শনিবার জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভানির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ