কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ করিডোর দিয়ে আসছে মিয়ানমারের কোরবানির পশু। প্রতিদিন শত শত গরু, মহিষ ও ছাগল নিয়ে জেটি ঘাটে ভিড়ছে কোরবানির পশু ভর্তি ট্রলার। এ কারণে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু বেপারীরা গরু কিনতে ভিড় করছেন শাহপরীরদ্বীপের করিডোরে। কোরবানির আগেই এসব পশু ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে। গত বছরের তুলনায় এ বছর মিয়ানমারের গরুর দাম অনেকটাই কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ পরিদর্শন করে দেখা গেছে, নাফ নদী ফাঁড়ি দিয়ে ট্রলারে করে শত শত গরু, মহিষ ও ছাগল আসছে। মিয়ানমার থেকে আসা এসব কোরবানির পশু প্রথমে স্থানীয় আমদানিকারকের হাতে পৌঁছায়। এরপর গরু বেপারীদের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে শাহপরীরদ্বীপ করিডোর দিয়ে অন্তত সাড়ে ৮ হাজার কোরবানির পশু আমদানি হয়েছে। এই খাত থেকে ৪২ লাখ ৫৫ হাজার ৬শ’ টাকা রাজস্ব আদায় হয়ে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে আসা গরুর বেপারী সিরাজ মিয়া সওদাগর বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, গত বছরের চেয়ে এবার একটু কম দামে গরু কিনতে পারছেন। সরাসরি ট্রাকে করে চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ, পটিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করবেন এসব গরু। তবে পথে পথে হাইওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ ও বিভিন্ন চেকপোস্টে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
রাজশাহী থেকে কোরবানির পশু কিনতে শাহপরীরদ্বীপ করিডোরে এসেছেন আমির মন্ডল। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভারতীয় গরু মহিষের চেয়ে মিয়ানমারের গরুর চাহিদা বেশি। কারণ, মিয়ানামারের কোরবানির এই পশুগুলো সুন্দর ও মাংস বেশি হয়। আমি ১২০টি গরু মহিষ কিনেছি রাজশাহী নিয়ে যাওয়ার জন্য।’
স্থানীয় গরু আমদানিকারক হাম জালাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে গরু, মহিষ কিনে করিডোর হয়ে সরাসরি চট্টগ্রামে নিয়ে যাই। গত দুই দিনে অন্তত ৫শ’ গরু কিনেছি। তবে গত বছরের চেয়ে দাম একটু কম। তবে চট্টগ্রাম যাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি গরু, মহিষের জন্য ১৮শ’ টাকা করে খরচ হয়ে যায়।’
শাহপরীরদ্বীপ জেটিঘাটের ইজারাদার ও স্থানীয় ইউপি মেম্বার রেজাউল করিম রেজু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি দিন দিন বেড়েই চলেছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে আগামীতে আরও বেশি কোরবানির পশু আসার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিটি গরু, মহিষ থেকে ৫০টাকা করে জেলা পরিষদের ইজারা তোলা হচ্ছে। একই সঙ্গে টেকনাফ ভ্যাট কাস্টমস অফিস থেকে প্রতিটি গরু থেকে ৫শ’ টাকা করে রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে।’
টেকনাফ স্থল বন্দর কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা এএসএম মোশারফ হোসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত অর্থ বছর অর্থাৎ ২০১৬-২০১৭ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে মিয়ানমার থেকে গরু, মহিষ এসেছে ৩ হাজার ৪৩৫টি। এতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৯ লাখ সাড়ে ৬৩ হাজার টাকা। অপরদিকে, ২০১৭-২০১৮ চলতি অর্থবছরে সাড়ে ৮ হাজার গরু, মহিষ ও ছাগল আমদানি করা হয়েছে। ২৩ আগস্ট পর্যন্ত রাজস্ব আদায় করা হয়েছে ৪২ লাখ ৫৫ হাজার ৬শ টাকা। যা গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ। ভবিষ্যতে মিয়ানমার থেকে আরও কোরবানির পশু আমদানির সম্ভাবনা রয়েছে।’
টেকনাফ ২নং বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল এসএম আরিফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে যে সব কোরবানির পশু নাফ নদীল জলসীমানা পার হয়ে দেশে প্রবেশ করছে বিজিবি’র সেগুলোর গতিবিধি সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখছে। এই পর্যন্ত কোনও ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
আরও পড়ুন- জমে উঠছে শত বছরের পুরনো কসবার গরুর হাট