রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পরিচালিত জঙ্গি অভিযান ‘সান ডেভিলে’র ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জঙ্গি সোহেল মাহফুজ ওরফে নসরুল্লাহ ওরফে হাতকাটা সোহেলকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টায় রাজশাহীর আমলি আদালত-৩ এর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম এই আদেশ দেন। রাজশাহী জেলা জজ আদালতের পরিদর্শক খুরশিদা বানু কনা বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
পরিদর্শক খুরশিদা বানু কনা বলেন, ‘গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও গ্রেনেডের জোগানদাতা জঙ্গি সোহেল মাহফুজ সান ডেভিলের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলারও প্রধান আসামি। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক আতাউর রহমান আদালতে সোহেল মাহফুজকে ১৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। আজ বিকালে আদালত সোহেল মাহফুজের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।’
শুনানির সময় সোহেল মাহফুজের পক্ষে কোনও আইনজীবী রিমান্ড আবেদনের বিরোধীতা করেননি বলেও জানান তিনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান জানান, সোহেল মাহফুজ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারে বন্দি ছিল। রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হলে আদালত তাকে হাজির করার নির্দেশ দেন। এরপর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে শনিবার বিকালে তাকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। পরে আজ রবিবার তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
আতাউর রহমান আরও বলেন, ‘রিমান্ডে জঙ্গি সোহেল মাহফুজের কাছ থেকে যেসব তথ্য পাওয়া যাবে তার ভিত্তিতে তদন্ত শেষ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।’ মামলার অন্য এক পলাতক আসামির অবস্থানের ব্যাপারেও সোহেল মাহফুজকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানান তিনি।
সূত্র জানায়, গোদাগাড়ীর বেনীপুর গ্রামের সাজ্জাদ আলীর বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালাতে গেলে জঙ্গি হামলায় এক ফায়ার সার্ভিস কর্মী নিহত হন ও আহত হন আরও দুই পুলিশ সদস্য। পরে সাজ্জাদ আলীসহ (৫০) তার স্ত্রী বেলী আক্তার (৪৫), তাদের ছেলে আল-আমিন ওরফে হামজা (২০), মেয়ে কারিমা খাতুন (১৭) এবং আশরাফুল ইসলাম (২৩) নামে বহিরাগত অন্য এক জঙ্গি আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণে নিহত হয়।
সূত্র আরও জানায়, অভিযানের সময় বাড়িতে ছিল না সাজ্জাদের আরও এক ছেলে সোয়েব আলী। অভিযানের পর ওই বাড়ি থেকে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে আত্মসমর্পণ করে সাজ্জাদের বড় মেয়ে সুমাইয়া খাতুন। পরে এ ঘটনায় থানায় মামলা হলে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে এখনও সোয়েবের নাগাল পায়নি পুলিশ। সর্বশেষ এ মামলায় সোহেল মাহফুজকে রিমান্ডে নেওয়া হলো।
সূত্র জানায়, সোহেল মাহফুজের আসল নাম আবদুস সবুর খান। কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার সাদিপুর গ্রামে তার বাড়ি। বাবার নাম রেজাউল করিম, মা মনোয়ারা বেগম।
সূত্র জানায়, গত জুলাই মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা থেকে সোহেল মাহফুজকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, বেনীপুরের জঙ্গি আস্তানায় তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। সেখানে সে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিতো। ইম্প্রোভাইজড হ্যান্ড গ্রেনেড তৈরিতে খুবই পারদর্শী সে। একবার হাতে বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে তার ডান হাতের কব্জি থেকে নিচের অংশ উড়ে যায়।
পুলিশ জানায়, ২০১৪ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে আদালতে নেওয়ার পথে তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল নব্য জেএমবির পাঁচ শুরা সদস্যর একজন সোহেল মাহফুজ। এছাড়া ভারতের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গেও তার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেএমবির মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইয়ের আমলে জঙ্গিবাদে জড়ায় সোহেল মাহফুজ। ২০০৬ সালে জেএমবি দুর্বল হয়ে পড়লে সে ভারতে পালিয়ে যায়। পরে ২০১৪ সালে সোহেল মাহফুজ দেশে ফেরে। এরপর সে নব্য জেএমবিতে যোগদান করে।