ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বলেছেন, ‘উপমহাদেশে রাজনৈতিক নেতৃত্ব কেন বারবার হিংসাত্মক আক্রমণের মুখে পড়ে, সেই কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। এই দেশগুলোতে কেন বারবার সামরিক শাসন আসে, এদিকটিও লক্ষ্য করতে হবে।’ মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আব্দুর রব হল মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের উদ্দেশে এসব বিষয়ে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে চবি’র সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রি দেওয়া হয় প্রণব মুখার্জিকে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ, ভারতবর্ষসহ আরও দুয়েকটি দেশ, যারা সংসদীয় গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে আর্থিক প্রগতি ও সামাজিক প্রগতিকে বাস্তবায়িত করেছে; এসব দেশেই রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর হিংসাত্মক আক্রমণ বেশি হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকে স্বাধীনতা আন্দোলন করেছেন। এর কারণ কী? বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানাই, গবেষণা করে এর কারণ বের করবেন।’
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘এই উপমহাদেশে ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভের কিছুদিন পর ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি আমরা মহাত্মা গান্ধীকে হারিয়েছি। ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি আততায়ীর বুলেট ছিনিয়ে নিয়েছে তাকে। একইভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের নৃশংস আক্রমণে সপরিবারে নিহত হন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’
যোগ করে প্রণব মুখার্জি বলেন, ‘মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির পিতা বর্ম দেশের জনক জেনারেল অং সান সমস্ত সহকর্মীর সঙ্গে ব্রাশফায়ারে নিহত হন। ১৯৬০ সালে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী সিরিমাবো বন্দরনায়েক নিহত হলেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলের ভেতর বাংলাদেশের জাতীয় চার নেতা নিহত হন। পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জিয়াউল হক নিহত হলেন। এরপর জুলফিকার আলী ভুট্টোকে আইনের নাম করে ফাঁসি দেওয়া হলো। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী প্রেমাদাসা নিহত হলেন। এই যে বিপুলসংখ্যক রাজনৈতিক হত্যা, এর কারণ কী? নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয় এমন রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির পেছনে কোন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত কাজ করে তা আমাদের জানতে হবে।’
এর আগে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘প্রণব মুর্খাজি বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। তিনি একজন স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে তার জ্ঞান অগাধ। তার মতো একজন জীবন্ত কিংবদন্তিকে সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদান করতে পেরে আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই আনন্দিত।’
পরে প্রণব মুখার্জির হাতে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রির সনদ তুলে দেন উপাচার্য। অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরিন আখতার, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কামরুল হুদা, সংসদ সদস্য আশেকুল্লাহ রফিক, সাইমন সরওয়ার কমল, ওয়াশেকা আয়েশা খান প্রমুখ।