X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

টোল প্লাজায় ধীরগতিতে যানজট, বেপরোয়া চালকের কারণে দুর্ঘটনা

মাসুদ আলম, কুমিল্লা
১৯ জানুয়ারি ২০১৮, ১০:২৪আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০১৮, ১১:৩৬

মেঘনা-গোমতী টোল প্লাজায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার অংশটি চার লেন হওয়ায় এই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় আগের মতো যানজটের কবলে পড়তে হয় না যাত্রীদের। তবে জেলার মেঘনা-গোমতী সেতু এলাকায় গেলেই শুরু হয় তীব্র যানজট। সেতুর টোল প্লাজায় যানচলাচলে ধীরগতির কারণেই এই যানজট তৈরি হয়। অন্যদিকে, এই মহাসড়কে কুমিল্লার বেশ খানিকটা অংশ চার লেনের হলেও কমেনি দুর্ঘটনা আর প্রাণহানির ঘটনা। হাইওয়ে পুলিশ বলছে, অনভিজ্ঞ চালক, বেপরোয়া গতি আর মহাসড়কে চালকদের প্রতিযোগিতার কারণেই কমছে না প্রাণহানি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেঘনা ও গোমতী সেতু দিয়ে কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলার যানবাহন চলাচল করে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়ক দিয়ে বিপুল পরিমাণ যাত্রীবাহী বাসের পাশাপাশি চলাচল করে অসংখ্য মালবাহী যান। হাইওয়ে পুলিশ, যানচালক ও মালিক এবং যাত্রীরা বলছেন, টোল প্লাজায় টোল আদায়ে অনেক সময় লাগে। এছাড়া, টোল প্লাজার আগের রাস্তায় ওজন পরিমাপক স্কেলে ত্রুটি রয়েছে। ফলে টোল আদায় নিয়ে চালকের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডার ঘটনা নিয়মিত। এছাড়া, টোল প্লাজায় দালালদের দৌরাত্ম্যও রয়েছে। আর একটু দ্রুত যাওয়ায় আশায় কিছু প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও বাসের উল্টো পথে চলার ঘটনা টোল প্লাজার আশাপাশে গাড়ির তীব্র জট শুরু হয়। তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের মহাসড়কে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজায় টোল আদায়ে অনেক সময় লেগে যায়। এই ধীরগতির সমাধান হলে বাকি বিষয়গুলো হাইওয়ে পুলিশের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব।’

তবে টোল আদায়কারী কর্তৃপক্ষ বলছে, চার লেনের মহাসড়ক দিয়ে আসা গাড়ি দুই লেনের সেতু দিয়ে পার হতে গিয়েই সময় লাগে। টোল আদায়কারী সিএনএস কোম্পানি লি.-এর নির্বাহী কর্মকর্তা মেজর অব. জিয়াউল আহসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনের। কিন্তু মেঘনা-গোমতী ও মেঘনা সেতু দুই লেনের। এতে চার লেনের মহাসড়কে যে গতিতে ও যে পরিমাণ যান চলে, স্বাভাবিকভাবেই সেতুর টোল প্লাজার সামনে এসে সেগুলোর গতি কমে যায়। এছাড়া টোল আদায়ে ধীরগতির কারণে একটি যান টোল দিয়ে সেতুতে উঠতে উঠতে পেছনে লম্বা সারির সৃষ্টি হয়। ক্রমে এই সারি দীর্ঘ হতে হতে তীব্র যানজট তৈরি করে।’ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ

এদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুর্ঘটনা না কমার কারণ হিসেবে হাইওয়ে পুলিশ ও যাত্রীরা উল্লেখ করছেন চালকদের অদক্ষতা ও নিয়ম না মানাকে। যাত্রীদের অভিযোগ, গাড়ি চালানোর সময় চালকরা মোবাইল ফোনে কথা বলেন, যাত্রীদের নিষেধ সত্ত্বেও কোনও কোনও সময় সামনের বা পিছনের গাড়ির সঙ্গে গতির প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন। অনেক চালকই মহাসড়কে গাড়ি চালানোর মতো দক্ষ ও যোগ্য নয় বলেও অভিযোগ তাদের।

মেঘনা-গোমতী সেতু এলাকায় যানজটে আটকা পড়া চট্টগ্রামগামী একটি বাসের যাত্রী মো. আমানউল্লাহ বলেন, ‘ড্রাইভাররা গাড়ি চালানোর সময় ফোনে কথা বলে। তারা একটার পর একটা সিগারেট খায়। এসব ড্রাইভারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। কারণ এরাই ট্রাফিক আইন মানে না, এদের গাড়ির গতিও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। তাই দুর্ঘটনা ঘটে।’

ঢাকাগামী আরেক বাসের যাত্রী শাহাজান ভূঁইয়া বলেন, ‘এই রোডে অনেক চালকই বেপরোয়া গতিতে বাস-ট্রাক চালায়। তারা ট্রাফিক আইন মানে না। কোনও গাড়ি ওভারটেক করলে তারা সেটাকে ওভারটেক করার জন্য উঠেপড়ে লাগে। অনেক সময় অল্পবয়সী হেল্পারদের হাতে গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়। তাহলে দুর্ঘটনা কমবে কীভাবে?’ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ

জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলা হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত এক বছরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার অংশে যত দুর্ঘটনা হয়েছে, সবগুলো চালকদের বেপরোয়া গতি এবং অনভিজ্ঞ চালকদের বিভিন্ন অনিয়মের কারণে হয়েছে। বাস গর্তে, খালে-বিলে, উল্টে গিয়ে বা সড়কের পাশে গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে দুর্ঘটনার পরিমাণ বেশি। পথচারীরা রাস্তা পারাপারের সময় সতর্ক না থাকার কারণে এবং ওভারপাস ব্যবহার না করার কারণেও দুর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকেন। তবে মহাসড়কে উল্টো বাঁক ও ইউটার্নের কারণে মুখোমুখি সংঘর্ষ নেই বললেই চলে।’

রহমত উল্লাহ বলেন, ‘কিছু প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও বাসের চালক ফিলিং স্টেশনগুলো থেকে তেল বা গ্যাস নিয়ে উল্টো পথে চলতে গিয়ে দুর্ঘটনার জন্ম দেয়। এছাড়া মহাসড়কে মালবাহী ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও বড় বড় ট্রেইলারগুলো রেখে ঘুমিয়ে থাকা এবং বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানোর কারণেও দুর্ঘটনা হয়। আর মহাসড়কে দিন দিন যানবাহনের পরিমাণ বাড়ছেই।’ তিনি বলেন, ‘গাড়ির চালকরা সচেতন না হলে চার লেন নয়, আট লেনের সড়ক হলেও দুর্ঘটনা ঘটবে। দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে অভিজ্ঞ চালকের বিকল্প নেই।’

আরও পড়ুন- আট লেন সড়কের চাপ দুই লেনের সেতুতে

/টিআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা