রাজবাড়ীতে অটোযাত্রী এক তরুণীকে (২৩) গাড়ি থেকে নামিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে অটোচালকসহ তিন জনকে আটক করা হয়েছে। শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে স্থানীয়রা তাদের আটক করে র্যাবের কাছে দিয়েছে। শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে জেলা সদরের বসন্তপুর ইউনিয়নের মজলিশপুর গ্রামে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটে।
আটকরা হলো রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের দত্তপাড়া গ্রামের আরশাদ মোল্লার ছেলে মামুন মোল্লা (২০), বসন্তপুর ইউনিয়নের মজলিশপুর গ্রামের মৃত মুন্নাফ সরদারের ছেলে হান্নান সরদার (৩০) ও মৃত আবুল মোল্লার ছেলে রানা মোল্লা (২৫)।
খানখানাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. শহিদুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। রাতে ওই তরুণীকে ছাকেনের বাড়িতে রাখা হয়। সকালে তিনি তার পরিবারের কাছে চলে যান। পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাদেরকে জানিয়েছেন।
মেয়েটির আশ্রয়দাতা ছাকেন বলেন, ‘রাত প্রায় ১০টার দিকে মেয়েটি আমাদের বাড়িতে এসে চিৎকার দেয়। এরপর আমরা পুলিশকে খবর দেই।’
র্যাব-৮ ফরিদপুর ক্যাম্পের দুই নম্বর কোম্পানির অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রইছ উদ্দিন জানান, আটকরা তাদের অপরাধের কথা স্বীকার করেছে। ওই তরুণীকে এনে আটকদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাদের রাজবাড়ী সদর থানায় হস্তান্তর করা হবে।
অটোচালক রানা মোল্লা বলেন, ‘আমার অটোতে ওই মেয়ে গোয়ালন্দমোড় থেকে শিবরামপুর যাচ্ছিল। ওইসময় আমার সঙ্গে মামুন ছিল। আর মাঝপথ থেকে হান্নান অটোতে ওঠে। পথে মজলিশপুর এলাকায় হান্নান ও মানুন ওই মেয়েকে গাড়ি থেকে নামিয়ে রাস্তার পাশে জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ চেষ্টা করে। কিন্তু, আমি অটো নিয়ে সেখান থেকে চলে আসি।
ওই তরুণী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি মাদারীপুরে এক বান্ধবীর বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে গাবতলী থেকে ফরিদপুরের বাসে উঠি। পাটুরিয়া ঘাটে এসে যানজট দেখে আমি লঞ্চে পদ্মানদী পার হয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে আসি। সেখান থেকে মাহেন্দ্র গাড়িতে করে রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোয়ালন্দ মোড় পৌঁছাই। ওই সময় আমি চিন্তা করি যেহেতু রাত হয়ে গেছে, তাই এখন মাদারীপুরে না গিয়ে ফরিদপুরের মুন্সিবাজারে এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকবো। গোয়ালন্দ মোড়ে আমি ফরিদপুরের গাড়ি খুঁজতে থাকলে এক অটোচালক আমাকে বলেন— তার অটোতে শিবরামপুর গেলে আমি ফরিদপুরের গাড়ি পাবো।ওইসময় আমি ওই অটোতে উঠি। তখন অটোচালকের পাশে আরও একটি ছেলে বসা ছিল। অটোটি বেশকিছু দূর যাওয়ার পর অটোতে আরও একটি ছেলে ওঠে। এরপর একটি নির্জন জায়গায় অটোটি নিয়ে দাঁড় করিয়ে চালকসহ তিন জন আমাকে অটো থেকে নামতে বলে এবং মোবাইলসহ ব্যাগপত্র কেড়ে নিয়ে যায়। তখন আমি পরিস্থিতি খারাপ বুঝতে পেরে চিৎকার দিতে গেলে তারা আমাকে মুখ চেপে ধরে রাস্তার পাশে জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যায়। এরপর অটোচালক অটো নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। বাকি দুই জন আমাকে গলায় মাফলার পেঁচিয়ে ভয় দেখিয়ে জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। সেখান থেকে আমি পালিয়ে একটি বাড়িতে ঢুকে পড়ি।’
জানা গেছে, তরুণীর বাড়ি সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলায়। সে রাজধানীর পল্লবী এলাকায় থেকে একটি কুরিয়ার কোম্পানিতে চাকরি করে।
এর আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি বসন্তপুর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য লিটনের মেহগনি বাগান থেকে অজ্ঞাত (২৫) এক তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ওই তরুণীকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে ওই স্থানে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।